ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দিনের রান্না করতে হচ্ছে শেষ বিকালে

দিনের রান্না করতে হচ্ছে শেষ বিকালে

রাজধানীজুড়ে আবাসিকে গ্যাস সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। অনেক এলাকায় সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চুলায় গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। যতটুকু পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়ে রান্না করা সম্ভব নয়। ফলে বাধ্য হয়ে দিনের রান্না শেষ করতে হচ্ছে বিকালে। কিছু কিছু এলাকায় সারা দিন গ্যাস পাওয়া যায় না। গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে। তবে এ সময়ে গ্যাস তেমন কাজে লাগছে না। বাধ্য হয়ে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার করতে হচ্ছে ওইসব এলাকার বাসিন্দাকে।

তারা বলছেন, নিয়মিত বিল পরিশোধ করা হলেও গ্যাস সংকটের কোনো সুরাহা হচ্ছে না। শীত এলে এ সংকট আরও বাড়ে। এ অবস্থায় রান্নার কাজে কেউ কেউ সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন। গ্যাস না থাকায় রাজধানীর কোনো কোনো এলাকায় কাঠের লাকড়ি ব্যবহার করতেও দেখা যায়। সিলিন্ডার কিনে ব্যবহার করলেও লাইনের গ্যাসের বিলও পরিশোধ করতে হয় গ্রাহকদের। এতে জীবনযাপনের ব্যয়ের বাড়তি চাপে পড়তে হচ্ছে তাদের।

তিতাস গ্যাস কর্মকর্তারা বলছেন, গত কয়েক দিন ধরে রাজধানীতে তীব্র আকারে শীত জেঁকে বসেছে। এ কারণে আবাসিকে চাহিদা বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া তীব্র শীতের কারণে বিভিন্ন লাইনে গ্যাস জমে যাওয়ায়ও স্বাভাবিক সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। একসময় সর্বোচ্চ ৩২০ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত সরবরাহ করা হয়েছে। কিছু দিন আগেও ৩০০ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত দিনে সরবরাহ করা হয়েছে। এক মাস ধরে দিনে সরবরাহ করা হচ্ছে ২৬০ কোটি ঘনফুট। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ রয়েছে। এ কারণে গ্যাস-সংকট দেখা দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাহিদার তুলনায় গ্যাস সরবরাহ কম। গ্যাস সংকটের কারণে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চাহিদামাফিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এর প্রভাব পড়েছে আবাসিকেও। শীতে রাজধানীতে গ্যাস সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বসিলা, যাত্রাবাড়ী, আদাবর, পশ্চিম আগারগাঁও, শ্যাওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, কাফরুল, ধানমন্ডি, লালবাগ, সোবহানবাগ, ইন্দিরা রোড, পুরান ঢাকা, জুরাইন, তাঁতি বাজার, শাঁখারী বাজার, কামরাঙ্গীর চর, উত্তরা, দক্ষিণ খান, বনশ্রী ও রামপুরা এলাকায় গ্যাস সংকট সবচেয়ে বেশি। রাজধানীর বাসিন্দাদের অভিযোগ, এসব এলাকায় সারা দিন চুলা জ্বলে না। জ্বললেও মিটমিট করে। কোথাও সকালেই গ্যাসের চাপ কমে যায়। কোথাও সন্ধ্যায় গ্যাস পাওয়া যায়। গ্যাসের চাপ পাওয়া যায় মূলত রাত ১১টার পর থেকে ভোর পর্যন্ত। কিন্তু গ্যাস সংকট কেবল শীতেই হয়, এমনটি নয়, গরমের সময় রাজধানীর অনেক এলাকায় গ্যাস সরবরাহে স্বল্পতা লক্ষ করা যায়।

তাদের দাবি, কোনো কোনো এলাকায় বছরখানেক ধরে এ সমস্যা চলছে এবং দিন দিন সংকট আরও বাড়ছে। দিনের বেলায় চুলায় গ্যাস না থাকায় রাতে অতিরিক্ত কাজের চাপ নিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

সেগুনবাগিচা এলাকার নইমুদ্দিন জানান, দিনের বেলা গ্যাস থাকে না বললেই চলে। বাধ্য হয়ে গত কয়েক মাস ধরে রান্নার কাজে এলপিজি ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে দ্বিগুণ খরচ হচ্ছে।

বাড্ডার বাসিন্দা মাহমুদ হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, শীতের প্রথম দিক থেকেই বাড্ডা এলায় গ্যাস সংকট দেখা দেয়। আর এখন তো দিনে গ্যাস থাকেই না। খুব ভোরে এবং রাত ৮টার পরে রান্না করতে হচ্ছে। দিনে লাইনে কোনো গ্যাসই থাকে না।

ডেমরা বামুইল এলাকার বাসিন্দা কলিম উদ্দিন জানান, প্রায় এক বছর ধরে দিনের বেলা গ্যাস সংকটে আছেন তারা। বাধ্য হয়ে রাত জেগে রান্না করেন। জুরাইন এলাকার হাসান মাহমুদ জানান, দিনে গ্যাস না থাকায় সব খাবার রাতে রান্না করতে হয়।

তিতাস সূত্রে জানা গেছে, চাহিদা অনুসারে গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ কমে গেছে। গ্রাহকরা নিয়মিত অভিযোগ করছেন। কিন্তু তারা কোনো সমাধান দিতে পারছেন না। দিনে তাদের গ্যাসের চাহিদা ১৮০ থেকে ১৯০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু এখন তারা পাচ্ছেন ১৬০ কোটি ঘনফুটের মতো।

তিতাসের করপোরেট বিভাগের মাহব্যবস্থাপক মো লুৎফুল হায়দার মাসুম গণমাধ্যমকে বলেন, শীত বেড়ে যাওয়ায় গ্যাসের ফ্লো কমে গেছে। তাই কিছু কিছু এলাকায় গ্যাস কম পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের গ্যাসের কোনো সংকট নেই। শীত চলে গেলে গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে।

গ্যাস
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত