সিদ্ধিরগঞ্জে আজিজ কো-অপারেটিভ শপিং মল সন্ত্রাসীমুক্ত করার দাবি
সমবায় অধিদপ্তরে চিঠি, চার মাসেও নেই কোনো পদক্ষেপ
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৩, ১৯:৩৭ | অনলাইন সংস্করণ
নারায়নগঞ্জের সিদ্ধরগঞ্জে আজিজ কো-অপারেটিভ শপিং মল উদ্ধারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সমবায় অধিদপ্তর সমবায় মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়ার প্রায় চার মাস হতে চললেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না কারায় প্রতিষ্ঠানটির ক্ষুব্দ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানবন্ধন করেছেন।
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে, রোববার মন্ত্রণালয়ের দেয়া চিঠির বাস্তবায়ন চেয়ে সমবায় অধিদপ্তরে সামনে অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, গত ৩ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানের বর্তমান কমিটির চেয়ারম্যান জনাব হারুন অর রশিদ মজুমদার ও সেক্রেটারি এস এম হারুনার রশিদ ঢাকা-চিটাগাং রোডস্থ সিদ্ধিরগঞ্জের মুক্তি স্মরণীতে নির্মাণাধীন আজিজ কো-অপারেটিভ শপিং মলটি সন্ত্রসীদের কবল থেকে উদ্ধারে ব্যবস্থা গ্রহণে সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেছিলেন। ওই আবেদনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছিলেন সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য। আবেদনের প্রেক্ষিতে যাবতীয় কাগজপত্র যাচাই বাছাই শেষে গত ২৫ এপ্রিল সমবায় অধিদপ্তর সমবায় মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দেয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘আজিজ কো-অপারেটিভের আবেদন ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে- ২০১১ সালে সিদ্ধিরগঞ্জে ৪০ কাঠা জমির উপর নির্মিত মার্কেটটির ডেভেলপার হিসেবে সৌদি বাংলা ৫৫ শতাংশ আর জমির মালিকেরা ৪৫ শতাংশ দোকান বরাদ্দ পাবেন মর্মে চুক্তি হয়। সোদি বাংলা প্রোপার্টিজ এর চেয়ারম্যান ও আজিজ কো-অপারেটিভের সাবেক চেয়ারম্যান এম তাজুল ইসলাম পরবর্তীতে সৌদি বাংলার ৫৫ শতাংশ আজিজ কো-অপারেটিভের কাছে বিক্রি করে দেন। তবে, এই প্রজেক্টের নামে ব্যাংক ঋণ থাকায় তাজুল ইসলাম আজিজ কো-অপারেটিভের নামে তা রেজিস্ট্রি করে দিতে পারেননি। পরবর্তীতে তাজুল ইসলাম আজিজ কো-অপারেটিভ থেকে অর্থ আত্মসাতে সিআইডির করা মানি লন্ডারিং মামলাসহ অর্ধ শতাধিক মামলায় গ্রেফতার হলে শপিং মলের সাবেক জিএম সাইফুল ইসলাম ও মার্কেটিং অফিসার রাকিব মিলে শপিং মলটি কজ্বায় নিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মাসাত করেন। পররর্তীতে ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর আজিজ কো-অপারেটিভের গ্রাকদের ১১২ কোটি ৬ মাসের মধ্যে ফেরত দেয়ার শর্ত আপিল বিভাগ থেকে জামিন পান তাজুল। তিনি জামিনে এসে টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো স্থানীয় ক্যাডারদের দিয়ে আজিজ কো-অপারেটিভের কর্মকর্তাদের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালান। সার্বিক এই পরিস্থিতিতে আজিজ কো-অপারেটিভ শপিং মল উদ্ধারে মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানায় সমবায় অধিদপ্তর।’
কিন্তু অধিদপ্তর সমবায় মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়ার প্রায় চার মাস হতে চললেও মন্ত্রনালয় অজ্ঞাত কারণে এখনো পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তাই তাজুল ইসলাম ফের কারান্তরীণ হলেও নারায়নগঞ্জের আলোচিত ৭ খুন মামলার দণ্ডিত নূর হোসেনের ভাতিজা ও স্থানীয় কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল ও নূর হোসেনের ভাই ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর উদ্দিনের ক্যাডাররা শপিং মল অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। তারা আজিজ কো-অপারেটিভের গ্রাহক ও কর্মকর্তা এবং চলমান কমিটির সদস্যদের নামে মামলা করে হয়রানি করছে। সমবায় প্রতিষ্ঠানের অবিভাবক হিসেবে মন্ত্রাণলয়কে তাগিদ দিয়ে অধিদপ্তরের চিঠি বাস্তবায়ন করে অবিলম্বে শপিং মলটি উদ্ধার করে চলমান কমিটির নিকট হস্তান্তর বা অধিদপ্তরে নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, বারবার অধিদপ্তর অর্ন্তবর্তকালীন কমিটি করে নির্বাচন করতে ব্যর্থ হওয়ায় গ্রাহকেরা ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি মহামান্য হাইকোর্ট একটি রিট পিটিশন করলে আজিজ কো-অপারেটিভ পরিচালনায় একটি কমিটি করে দেন। এরপর নানা হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে ৩ জুলাই আজিজ কো-অপারেটিভের কর্মকর্তা কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নির্মাণ কাজ চলমান রেখেছিল। ফলে সাবেক চেয়ারম্যান এম তাজুলের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারানো কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিছুদিন পরে তাজুল জামিনে এসে সন্ত্রাসীদের দিয়ে ফের দখলে নিয়েছে। তাই আজিজ কো-অপারেটিভের গ্রাহকদের শেষ সম্বল শপিং মলটি ফের উদ্ধার করে আমানতের টাকা ফেরত দিতে না পারলে বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী এলাকায় ফিরতে পারবেন না। কারণ, এই শপিং মল দেখিয়ে চার বছরে দ্বিগুন টাকা দেয়ার লোভ দেখিয়ে সারাদেশের শাখা থেকে কোটি কোটি টাকা এনেছেন তাজুল ইসলাম।