পরিবহনে বিশৃঙ্খলা ফেরাতে সরছে আন্তঃজেলা টার্মিনাল
প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩:০৪ | অনলাইন সংস্করণ
রাজধানীর ভেতরেই আন্তঃজেলা টার্মিনাল রয়েছে তিনটি। এগুলো রাখার জায়গাও যেন প্রধান সড়ক, যা কোনোভাবেই আইনসিদ্ধ নয়। এসব কারণে পরিবহন খাতের বিশৃঙ্খলা দূর হচ্ছে না। উপরন্তু যানজট বাড়ছে। তাই রাজধানীর উপকণ্ঠে চারটি স্থানে নতুন করে বাস টার্মিনাল করার উদ্যোগ নেয় সরকার। প্রথমে ১০টি স্থান চিহ্নিত করা হয়। প্রাথমিকভাবে চারটি স্থানে কার্যক্রম শুরু হবে। তবে প্রক্রিয়াটির গতি বাড়ানো দরকার বলে মনে করছেন পরিবহনসংশ্লিষ্টরা।
আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ও ডিপো নির্মাণের জন্য স্টাডি করে ১০টি স্থান নির্ধারণ করেছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ-
(১) ঝিলমিল, বাঘাইর (ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের দক্ষিণে), (২) কাঁচপুর-১ (ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উত্তরে, (৩) কাঁচপুর-২ (ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দক্ষিণে), (৪) ভুলতা (ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সন্নিকটে), (৫) হেমায়েতপুর (ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পার্শ্বে), (৬) বাইপাইল (নবীনগর-চন্দ্রা সড়কের পার্শ্বে), (৭) গাজীপুর (ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পার্শ্বে), (৮) গ্রাম ভাটুলিয়া (এমআরটি-৬ এর ডিপোর সাথে), (৯) আটিবাজার (ইনার রিং রোডের পশ্চিম পার্শ্বে) ও (১০) কাঞ্চন (ঢাকা বাইপাসের দক্ষিণে)।
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার বলেন, নগরীর টার্মিনাল স্থানান্তর ও সংস্কার নিয়ে কাজ চলছে। একাধিক সংস্থা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত।
জানা গেছে, কাঁচপুর (ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে), বাঘাইর (ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের দক্ষিণে-ঝিলমিল), হেমায়েতপুর (ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে) ও গ্রাম ভাটুলিয়া (এমআরটি-৬ এর ডিপোর সঙ্গে) এই চারটি টার্মিনাল-ডিপো নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এসব স্থানে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নির্মিত হলে সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনালগুলো সিটি বাস টার্মিনালে পরিণত হবে। এ ছাড়া ঘাটারচরে আরেকটি সিটি বাস টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এটির জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে।
কাঁচপুর বাস টার্মিনাল ও ডিপো নির্মাণের লক্ষ্যে বিশদ নকশা প্রস্তুতের জন্য পরামর্শক নিয়োগ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ২০২৩ সালের ৯ আগস্ট এ কার্যক্রম শুরু হয়। আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের জন্য নির্ধারিত কাঁচপুরের জমিটি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর থেকে ডিএসসিসির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শিগগির সেখানে অস্থায়ীভাবে আন্তঃজেলা বাস রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। এ ছাড়া বাঘাইরের জমিটি অধিগ্রহণের জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন
নেওয়ার কাজ শুরু করেছে ডিএসসিসি। হেমায়েতপুর ও ভাটুলিয়ায় বাস টার্মিনাল ও ডিপো দুটি নির্মাণ করবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এর অংশ হিসেবে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে প্রকল্প নিতে চাইছে সংস্থাটি। তাই পিপিপি ও জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাঠিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকার উপকণ্ঠে নতুন করে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের নির্মাণ সম্পন্ন হলে বিদ্যমান সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী হবে সিটি টার্মিনাল। ডিএসসিসির আওতায় সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের সংস্কারকাজ শেষ হবে এ মাসেই। পাশাপাশি মহাখালী টার্মিনালের সংস্কার করবে ডিএনসিসি। আর ঘাটারচরে বাস টার্মিনাল করতে বিশদ নকশার জন্য এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) আহ্বান করা হয়। ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন মিলেছে।
জানা গেছে, মোটরযান আইনানুযায়ী শহরের ভেতর দিয়ে দূরপাল্লার গাড়ি চলতে পারে না। রাজধানীর ভেতরের সড়কে গাড়ি পার্কিং করারও কথা নয়। গাড়ি থাকবে গ্যারেজ বা ডিপোতে। রাতের বেলায় বাস রাস্তায় পার্কিং করা হলেও ঢাকার বাসে গ্যারেজ ভাড়া ৬৫ হাজার টাকা এবং দূরপাল্লার বাসে গ্যারেজ ও টার্মিনাল খরচ দুই লাখ টাকা দেখানো হয় ভাড়া নির্ধারণী ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটির কাছে। যদিও ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করা থাকে। যাত্রী ওঠানামা ছাড়াও বিশ্রাম নেয় এসব বাহন। রাতেও নগরীর বিভিন্ন রাস্তাজুড়ে থাকে এসব বাস-মিনিবাস। রাত পোহাবার পর শুরু হয় নগর যাত্রী পরিবহন। ঢাকার পথে পথেই নগরপরিবহনের বাস দেখা যায়। আর দূরপাল্লার বাস বিশেষ করে মহাখালী টার্মিনালের বাইরে রাস্তার দুই ধারে গাড়ি রাখে। একই অবস্থা গাবতলী টার্মিনালেরও। শ্যামলী, কলেজগেট, কল্যাণপুরসহ সর্বত্র সারি সারি বাস। সায়েদাবাদ টার্মিনালের গাড়ি থাকে ধলপুর, কমলাপুর, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, শনিরআখড়ায়। রাতের রাস্তা হয়ে ওঠে গাড়ি রাখার আখড়া। নগর পরিবহনের গাড়িও একইভাবে চিড়িয়াখানা রোড, মিরপুর সাড়ে ১১ থেকে পল্লবী, মতিঝিল, নটর ডেম কলেজ, রাজারবাগ রাখা হয়Ñ সর্বত্রই বাসের দৌরাত্ম্য। অথচ রেজিস্ট্রেশনের সময় এসব গাড়ি গ্যারেজে রাখার শর্ত দেওয়া হয়েছে। শর্ত লঙ্ঘন করলে প্রচলিত আইনে আছে শাস্তির বিধান। কিন্তু পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে এসব গাড়ি দখল করে ঢাকা শহরের প্রধান সড়ক। ক্ষেত্রবিশেষে ফিডার রোডেও দেখা যায় বাস-মিনিবাস।
সূত্রমতে, ঢাকা ও এর পাশর্^বর্তী এলাকার পরিবহন ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। বাস চলাচলের জন্য টার্মিনাল ব্যবস্থার দায়িত্ব ডিটিসিএ ও সিটি করপোরেশনের। একসময় গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়াতে টার্মিনাল ছিল। সেটি ভাগ হয়ে তিনটি জায়গায় স্থানান্তরিত হয়েছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় এসব টার্মিনালে গাড়ি রাখা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে রাস্তায় রাখা হয়। সড়কপথে ঢাকার সঙ্গে দেশের ৬৩ জেলার যোগাযোগ হয় ছয়টি মহাসড়কে। যেসব স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে, সেখানে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল মহাসড়কে সরাসরি উঠবে গাড়ি। সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী টার্মিনালের মাত্র ৮০০ বাসের ধারণক্ষমতা রয়েছে। ঢাকা শহরের অভ্যন্তরে রাস রুট পুনবির্ন্যাস কমিটির তথ্যানুযায়ী, এই তিন টার্মিনালে ৯ হাজার ২৯৮টি বাস রাখা হয়। আরও কয়েক হাজার বাস টার্মিনালের আশপাশের রাস্তায় পার্কিং করা হয়। অথচ সড়ক পরিবহন আইনের ৪৭ ধারা অনুযায়ী গাড়ির যাত্রী ওঠানামা, পার্কিং নির্ধারণ করতে পারবে কর্তৃপক্ষ। নির্ধারিত এলাকা ছাড়া মোটরযান পার্কিং করা যাবে না এবং যাত্রী বা পণ্য ওঠানামার নির্ধারিত স্থান ও সময় ছাড়া মোটরযান থামানো যাবে না। এই বিধান লঙ্ঘন করলে অনধিক ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে দোষসূচক ১ পয়েন্ট কাটা হবে।
ডিটিসিএ জানায়, বাস রুট রেশনালাইজেশন সম্পন্ন হলে আন্তঃজেলা বাস আর ঢাকায় প্রবেশ করবে না। সে জন্য ট্রান্সফার স্টেশনের ব্যবস্থা রাখা হবে।