বাস উল্টে উল্টো লেনে

টাঙ্গাইলে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৩ জন সহ নিহত ৬ জন

প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২২, ১৪:৫১ | অনলাইন সংস্করণ

  টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

#    নিহতদের পরিবার পাবে ২০ হাজার টাকা 
#    তদন্ত কমিটি গঠন

বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে পূর্বপ্রান্তে সেতুর কাছে উত্তরাঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা একতা পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে উল্টো লেনে একটি মাইক্রোবাসের ওপর উঠে ঘটনাস্থলে ছয়জন নিহত ও অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেলস্টেশনের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। 

বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষের সহকারী সিকিউরিটি অ্যান্ড সেফটি ম্যানেজার মো. রফিকুল ইসলাম ও বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) সফিকুল ইসলাম জানান, উত্তরবঙ্গ থেকে ছেড়ে আসা একতা পরিবহনের একটি বাস বঙ্গবন্ধু সেতু পাড় হওয়ার পরই ব্রেক ফেল করে। এতে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঢাকাগামী লেন থেকে উল্টে উত্তরবঙ্গগামী লেনে গিয়ে একটি মাইক্রোবাসের(ঢাকা মেট্রো-চ-১৯-৩৫৯১) ওপর উঠে পড়ে। এ ঘটনায় দুই গাড়ির ছয় যাত্রীর মৃত্যু এবং অন্তত ৪০ যাত্রী আহত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের মধ্যে পাঁচ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। 

তারা হচ্ছেন- কুষ্টিয়া ফার্টিলাইজারের বিএডিসি(সার) যুগ্ম-পরিচালক পাবনা জেলার জহিরুল ইসলাম(৫০), বগুড়া জেলা সদরের জলসিড়িতলার হেলাল উদ্দিনের ছেলে রিফাত আল হাসান(৩৫), রিফাতের মা মালেকা ভানু রুবি(৬৫) নিহত রিফাতের ছেলে সাজিদ হাসান(৭), কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলার কুতুম্বপুর গ্রামের ফজলু মিয়ার ছেলে মাইক্রোবাস চালক দুলাল মিয়া(৪৮)। অন্য জনের নাম-পরিচয় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।  

আহতদের বঙ্গবন্ধু ক্যান্টনমেণ্টের সেনাবাহিনী, পুলিশ, বঙ্গবন্ধু সেতুর নিরাপত্তা কর্মী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পাঠান। আহতদের মধ্যে পাঁচজনকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা সবাই নাটোর জেলার বাসিন্দা। তারা হচ্ছেন- নাটোর সদর উপজেলার অর্জুনপুর গ্রামের পারভেজ(২৭), একই উপজেলার গৌরীপুর গ্রামের সিদ্দিক হোসেনের ছেলে জাকির হোসেন(৩০), একই এলাকার মাঠনগর গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে মনিরুজ্জামান(২১), নলডাঙ্গা উপজেলার পীরগাছা গ্রামের বাবু মিয়ার ছেলে উৎসব(১৭) এবং এই এলাকার মালা বেগম(২৫)। এরমধ্যে মালা বেগম মস্তিস্কে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। 

 

 

এদিকে, এ ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে মরদেহ দাফনের জন্য দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক ডক্টর মো. আতাউল গনি। তিনি টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের দেখতে গিয়ে সবার চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। আহতদের চিকিৎসায় বাইরের ওষুধ বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার খরচও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বহন করা হবে। 

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ডক্টর মো. আতাউল গনি জানান, দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। এছাড়া টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হওয়া আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়েছে। চিকিৎসাধীন কারও ওষুধ লাগলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা বাইরে থেকে কিনে দেওয়া হবে।

তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবুল হাসেমকে প্রধান করে বিআরটিএ, পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের প্রতিনিধিদের নিয়ে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।  

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপ্রান্তের গোল চত্তর এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস উল্টে বিপরীত লেনের একটি মাইক্রোবাসের ওপর গিয়ে পড়ে। এতে মাইক্রোবাসের চালক, নারী ও শিশু সহ চার জন এবং যাত্রীবাহী বাসের দুই জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ঘটনাস্থলে তিন জন ও হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও তিন জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।