রাত পোহালেই বই উৎসব

ঈশ্বরদীতে পৌঁছায়নি প্রাক-প্রাথমিক, তৃতীয়, চতুর্থ ও সপ্তম শ্রেণির বই 

প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২২, ১৯:৫৮ | অনলাইন সংস্করণ

  ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি

আর কয়েক ঘন্টা পরেই শুরু হবে ২০২৩ সাল। কিন্তু শনিবার ( ৩১ ডিসেম্বর) দুপুর পযন্ত নতুন বছরের বই উৎসবের প্রত্যাশিত নতুন বই পৌঁছায়নি পাবনার ঈশ্বরদীতে। এতে বই উৎসবে ভাটা পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা। প্রাথমিকের শিশু, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রণির ও মাধ্যমিকের সপ্তম শ্রেণির বই না আসায় বই উৎসবে শ্রেণি চারটির শিক্ষার্থীরাও নতুন বই না পাওয়ার আশঙ্কা। নতুন বছরে চার শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। প্রাথমিকে প্রথম ও দ্বিতীয় এবং মাধ্যমিকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম।

শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কয়েকজন জানিয়েছেন, নিম্নমানের ছাপা এবং যথাসময়ে বই না পাওয়ায় শিক্ষর্থীদের মধ্যে প্রভাব পড়বে। এছাড়া বইয়ের কাগজ ও বাধাইয়ের মানও ভালো হয়নি বলে জানিয়েছেন তারা।

ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বলছে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের বই, তৃতীয় শ্রেণির বই এবং চতুর্থ শ্রেণির বই না আসলেও প্রথম শ্রেণি, দ্বিতীয় শ্রেণির প্রায় শতভাগ বই এবং পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও পরিবেশ পরিচিতি এই তিনটি বই পেয়েছেন। আগামী কাল রবিবার বই উৎসবে কোনো শিক্ষার্থী খালি হাতে বাড়ি যাবে না বলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আসাদুজ্জামান নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র জানায়, ঈশ্বরদী উপজেলায় ৩ হাজার ৪৫০ জন প্রাক প্রাথমিক, ৮ হাজার জন প্রথম শ্রেণি, ৮ হাজার জন দ্বিতীয় শ্রেণি, ৭ হাজার ৬০০ জন তৃতীয় শ্রেণি, ৭ হাজার ৬০০ জন চতুর্থ শ্রেণি ও ৭ হাজার জন পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর জন্য বইয়ের চাহিদা রয়েছে। প্রাক প্রথমিক শ্রেণির নতুন খাতা এলেও বই আসেনি। পঞ্চম শ্রেণির ৬ বিষয়ের মধ্যে বাংলা , ইংরেজি ও পরিবেশ পরিচিতি ও বিশ্ব পরিচয় এই ৩ বিষয়ের বই পৌঁছেছে। এবছর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বইয়ের চাহিদা ৪১ হাজার ৬৫০ সেট। উপজেলায় প্রাথমিকের ৫৫ শতাংশ বই এসে পোঁছেছে। আজ শনিবার ( ৩১ ডিসেম্বর) সাউথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে উপজেলার প্রাথমিকের বই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো কে বিতরণ করা হয়। অন্যদিকে মাধ্যমিকের বইগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগেই পাঠানো হয়েছে।

এ উপজেলায় ১০০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১০২ টি হাইস্কুল সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়, এনজিও পরিচালিত স্কুল এবং কিন্ডার গার্টেন স্কুল রয়েছে। এতে মোট শিক্ষার্থীদের বইয়ের চাহিদা রয়েছে ৪১ হাজার ৬৫০ সেট । নতুন বই ৫ শ্রেণির ৩ টি বিষয় এবং প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির আট হাজার করে ১৬ হাজার ও ৫ শ্রেণির ৩ টি বই ৭০০০ বই পোঁছেছে। যা শতকরা হিসাবে সাড়ে ৪৭ শতাংশ।

এদিকে উপজেলায় মাধ্যমিকের ৪৯ দশমিক ২৭ শতাংশ বই পৌঁছেছে। উপজেলায় ৪৭ টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ২১ টি মাদরাসা রয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৫৬০ টি বইয়ের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে পোঁছেছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৬১৬ টি। যা শতকরা হিসেবে ৪৮ দশমিক ১২ ভাগ। মাদ্রাসায় ৮২ হাজার ১৫৫ টি বইয়ের চাহিদার বিপরীতে ৪৪ হাজার ৫৫৪ টি বি পোঁছেছে। যা শতকরা হিসেবে ৫৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পযন্ত শিক্ষার্থীর জন্য ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৭১৫ টি বইয়ের চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে ষষ্ঠ, অষ্টম ও নবম শ্রেণির ২ লাখ ১৫ হাজার ১৭০ টি বই পৌঁছেছে।

শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) সাউথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই নিতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ২০০৯ সাল থেকে বছরের প্রথম দিন বই উৎসব শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা উৎসাহ নিয়ে বিদ্যালয় থেকে বই নেয়। কিন্তু এই প্রথম বই উৎসবে শিক্ষার্থীরা সব বই পাবে না। আর যেসব বই পাবে সেসব বইয়ের কাগজ ও ছাপার গুণগত মান তেমন ভালো না। শিশুরা বই বেশি ব্যবহার করে থাকে। কিছুদিন গেলেই নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কাঙ্ক্ষিত বই না পাওয়ায় বন্টনে কিছুটা সমস্যা হবে।

বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) তথ্যের জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে ক্লাকের কাছে গেলে তিনি এটিও জহুরুল ইসলামের কাছে পাঠালে এটিও উপরে টিও সাহেবের কাছে পাঠান।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আসাদুজ্জামান বইয়ের তথ্য দিতে অনিহা প্রকাশ করে বলেন বইয়ের তথ্য দেওয়া খুব সিনসেটিভ। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে। আমাদের উপর অফিসারের নিকট থেকে নিতে বলতে বলা হয়েছে। তথ্য অধিকার অনুযায়ী আবেদন করতে বলা হয়। অত:পর পরের দিন বৃহস্পতিবার সকালে অফিস টাইমে আসতে বলা হয়। তারপর অফিস টাইমে এসে জানা যায় তিনি পাবনায় মিটিং এ আছেন। দুপুর পর অফিসে এলে তিনি অনিহার সাথে বইয়ের তথ্য দেন।

তিনি বলেন, উৎসবের দিনে শিশু শ্রেণি বাদে সকল শ্রেণির শিক্ষার্থীরা একটি বই হলেও পাবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সেলিম আক্তার জানান, চাহিদার প্রায় ৫০ ভাগ বই পৌঁছেছে। সপ্তম শ্রেণির কোনো বই পৌঁছায়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাকি বই পৌঁছে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।