নারায়ণগঞ্জে অস্ত্রবাজ অপরাধীদের নিয়ে কমিউনিটি পুলিশিং : রফিউর রাব্বি
প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১৬:০৬ | অনলাইন সংস্করণ
শরীফ সুমন, নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
সস্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, শহরে হকার অপসারণকে কেন্দ্র করে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে শামীম ওসমান বাহিনীর সশস্ত্র হামলার চিত্র আমরা দেখেছি। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে অস্ত্রসহ সে ছবি ছাপা হওয়ায় সারা দেশের মানুষ দেখেছে। অথচ সে মামলা থেকে দুদিন আগে সকল অস্ত্রধারীদের খালাস দিয়ে পুলিশ অভিযোগপত্র দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জে পুলিশ জনগণের নয় ওসমান পরিবারের হয়ে কাজ করে। প্রকাশ্যে অস্ত্র সহ হামলা করলেও পুলিশ তা দেখে নাই। জবানবন্দি দেয়া ত্বকীর ঘাতকরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তা দেখে না। অস্ত্রবাজ অপরাধীদের নিয়ে এখানে পুলিশ কমিউনিটি পুলিশ তৈরী করে।
তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১১৮ মাস উপলক্ষে ৮ জানুয়ারী সন্ধ্যায় আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তন প্রাঙ্গণে আলোক প্রজ¦ালন অনুষ্ঠানে রাব্বি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, দেশটিকে সকল মানুষের দেশ বানানোর জন্য। কিন্তু অর্ধশতাব্দীতে আমাদের কোন সরকারই চায়নি দেশটাকে জনগণের হোক। তারা নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখার প্রয়োজনে দুর্বৃত্ত, গডফাদার আর মাফিয়াদের হাতে দেশের মালিকানা তুলে দিয়েছে। রাষ্ট্রে এই দুর্বৃত্তশক্তি আজ সর্বশক্তিমান। জোর করে ক্ষমতা ধরে রাখতে সরকার বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচনী ব্যবস্থা, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে। জনগণের মৌলিক অধিকারের সকল প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে প্রতিনিয়ত সংবিধানকে রঙ্ঘন করে চলেছে। দশ বছর হতে চলল অথচ ত্বকী হত্যার তৈরী করে রাখা অভিযোগপত্রটি পর্যন্ত আদালতে পেশ করেনি। এইটি বিচারহীনতার নজিরই নায় সরকারের দেউলিয়াপনার উদাহরণ। সরকার নিজের ব্যার্থতা রাষ্ট্রের কাঁধে চাপিয়ে রাষ্ট্রকেই আজকে প্রশ্নের মুখোমুখী দাঁড় করিয়ে দেউলিয়া করে দিতে চাচ্ছে। যে ওসমান পরিবার ত্বকী হত্যা সহ বহু অপকর্মের জন্মদাতা- সরকার বিভিন্ন সময তাদের পুরস্কৃত করেছে। সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী ত্বকীর ঘাতকদের পাশে থাকার ঘোষণার মধ্যদিয়ে তিনি পবিত্র সংসদকে কলুষিত করেছেন। তিনি সাগর-রুনী, তনু সহ নারায়ণগঞ্জের সকল হত্যার বিচার দাবি করেন।
সংগঠনের সভাপতি ভবানী শংকর রায়ের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহনি মাহমুদের সঞ্চালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব কবি ও সাংবাদিক হালিম আজাদ, ত্বকী মঞ্চের যুগ্ম-আহবায়ক দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান মাসুম, সিপিবি জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, বাসদের জেলা আহবায়ক নিখিল দাস, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তরিকুর সুজন, সামাজিক সংগঠন সমমনার সাবেক সভাপতি দুলাল সাহা, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সহ সভাপতি মুহাম্মদ সেলিম, সদস্য পিন্টু সাহা।
হালিম আজাদ বলেন, সরকার ত্বকী হত্যার বিচারে ইন্ডেমনিটি জারি করেছে, ত্বকীর ঘাতক পরিবারকে পুরস্কৃত করছে। ত্বকী হত্যার বিচারের সাথে সুশাসনের সম্পর্ক জড়িত। আমরা ত্বকী সহ সকল হত্যার বিচার চাই।
মাহাবুবুর রহমান মাসুম বলেন, ত্বকীর ঘাতক ওসমান পরিবার এখনো ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। ত্বকী হত্যার বিচার ছাড়া আমরা ঘরে ফিরে যাবো না। শামীম ওসমান যত মামলা দেন, হামলা করেন, বোমা পুতে রাখেন- আমরা পিছ পা হবো না।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ সড়কের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। এর দু’দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানায়, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ৫ মার্চ ২০১৪ তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চারসেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। অচিরেই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবেন। কিন্তু সে অভিযোগপত্র আজো আদালতে পেশ করা হয় নাই। ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্জলন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।