চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামরুল হাসান বলেছে, আমি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে প্রতিমাসে চাঁদপুর জেলা কারাগার পরিদর্শনে যাই। সেখানে গেল দেখা যায় ৯০ভাগ আসামী মাদকের। চলতি মাসেও একবার কারগার পরিদর্শন করেছি। তখন জানতে পারলাম ৯০০জন আসামী আছে। সেখানে ৮ শতাধিক আসামী মাদক মামলার। এদের মধ্যে কেউ আছেন মাদক বিক্রেত, কেউ সেবনকারী। জনসংখ্যার বৃদ্ধির সাথে আমাদের মাদক সেবনকারী ও বিক্রেতার সংখ্যাও বাড়ছে। এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে আমাদের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখার জন্য।
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলা হলরুমে বিভিন্ন পেশার লোকদের অংশগ্রহনে মাদকদ্রব্য অপব্যাবহার রোধকল্পে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেকেই কোন না কোন পেশার সাথে জড়িত। আমরা যদি একটু গভীরভাবে চিন্তা করি, তাহলে দেখবেন আমার সবচাইতে বড় বিনিয়োগ কোথায়। সেটি হচ্ছে আমার পরিবার ও সন্তান। অর্থাৎ আমরা যত কিছুই করিনা কেন, সবই করি পরিবার এবং সন্তানের জন্য। আমি চাইব না, আমার সবচাইতে বড় বিনিয়োগ নষ্ট হয়ে যাক।
কামরুল হাসান বলেন, আমরা স্বাধীনতার ৫০বছর পার করেছি। আমাদের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমাদের অনেক বড় বড় উন্নয়ন কাজ চলমান আছে। গত দুই বছরের অতিমারি অতিবাহিত হওয়ার পরও আমাদের অবস্থা ভাল আছে। আজকের অনুষ্ঠান হচ্ছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ এবং অপব্যবহার রোধ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন কেন, এটি বন্ধ করে দিলে কি সমস্যা? আসলে বন্ধ করা যাবে না। কারণ মাদকদ্রব্য কিন্তু ভাল কাজ অর্থাৎ চিকিৎসাও ব্যবহার হয়। যেমন প্যাথেডিন। এটি কিন্তু এখন নেশারও সামগ্রী। আগে ফার্মেসীতে কাশের সিরাপ এর বেশ কয়েকটি ঔষধ ছিল। এখন পাওয়া যাচ্ছে না। এটি কারণ হচ্ছে আসক্তি। এই আসক্তি কেন? এগুলো কেন নিয়ন্ত্রণ করা দরকার এসব বিষয়ে বিগত ২০ বছরে অনেক আলোচনা হয়েছে গনমাধ্যমের টকশোতে, প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ নামে অধিদপ্তর খোলা হয়েছে এটি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কিন্তু আমরা পারছি না।
ডিসি বলেন, আমরা ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। সেই স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন যদি আমরা বাস্তবে পরিণত করতে চাই, তাহলে আমাদের বর্তমান যে তরুন প্রজন্ম আছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে শিক্ষার্থী আছে, তাদেরকে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, আমি উপজেলা পর্যায়ে পরিদর্শনে আসলে বিদ্যালয়গুলোতে যাই। এতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা অর্থাৎ বইয়ের সাথে সম্পর্ক খুবই কম। চলতি বছরের জানুয়ারী মাস। কয়েকমাস পরে বিদ্যালয়গুলোতে পরিদর্শনে যাবেন। সেখানে গিয়ে তাদেরকে বইয়ের প্রথম অধ্যয় থেকে পড়া জিজ্ঞাসা করবেন, দেখবেন তারা বলতে পারছে না। তারা পাঠ্যবই নিয়ে বিদ্যালয়ে আসে না, নিয়ে আসে নোট বই। বাজারে অনেক নোট আছে। সেগুলোর কারণে এখন মূল পড়া থেকে শিক্ষার্থীরা অনেক দূরে।
মতলব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেনু দাসের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মতলব দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বি.এইচ.এম. কবির আহমেদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন এবং কর্মশালার মূল বিষয় পরিসংখ্যান ভিত্তিক প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ইমদাদুল ইসলাম মিঠুন।
উপস্থিত ছিলেন মতলব দক্ষিণ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সেটু কুমার বড়–য়া, উপজেলা পরিষদ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌসি বেগম রুনু, মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাহিদুল ইসলাম ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন প্রমূখ।