দেনমোহরের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত কেশরাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন করেছে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। চাঁদপুরের সীমান্তবর্তী উপজেলা শাহরাস্তির রাগৈ ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল কেশরাঙ্গা গ্রামের পাটোয়ারী বাড়ীর মরহুম টুকা মিয়া পাটোয়ারীর স্ত্রী রত্তন বানু মোহরানার সম্পত্তি থেকে দানকৃত ৩৪ শতাংশ সম্পত্তিতে ১৯১৮ সালে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়।
শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম।
তিনি বক্তব্যে বলেন, শতবর্ষী একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উদযাপন অনুষ্ঠানে থাকতে পেরে আমার খুবই ভাল লেগেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই বিদ্যালয়টি গ্রামীন শিক্ষায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন দেশ-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। আজকের এই আনন্দঘন পরিবেশে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলন মেলা হয়েছে এবং তাদের স্মৃতিচারণ করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা যে চেতনায় জীবনকে উৎসর্গ করার প্রস্তুতি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম এবং এদেশের আপামর জনতা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের সহযোগিতা করেছিলেন, এই যুদ্ধ আমার একার যুদ্ধ নয়, এটি কোন সামরিক অভিযান নয়, এই যুদ্ধ ছিল জনগণের যুদ্ধ। পৃথিবীর ইতিহাসে শুরু থেকে আজ পর্যন্ত জনগণের অংশগ্রহন ছাড়া কোন দেশ স্বাধীন কিংবা মুক্তিযুদ্ধ হয়নি, এখনও হচ্ছে না, ভবিষ্যতেও পৃথিবীর কোন দেশে জনগণকে বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হবে না। মুক্তিযুদ্ধ মানেই জনগণের যুদ্ধ। আর ১৯৭১ সালে আমরা জনগণকে সাথেই নিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছি। সেই স্বাধীন বাংলাদেশে আজ আমি জনগণের সামনে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখতে পারছি।
মেজর রফিক বলেন, আমি দেখছি এক নতুন হাস্যজ্জল নতুন প্রজন্মকে। যাদের মুখে হাসি আছে। সুন্দরের স্বপ্ন যারা দেখেন। একটি সুখী সমৃদ্ধশালী সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্নে যারা বিভোর, সেই নতুন প্রজন্ম, কৃষক, তরুন, যুবক তাদেরকে আমি দেখি। তাদের মুখে আমি দৃঢ় প্রত্যয় দেখি। তাদের জন্যই আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। যুদ্ধের পরের যেই প্রজন্ম তারা অনেকেই এখানে আছেন। আমরাত সেদিন মরে যেতে পারতাম। যুদ্ধ আমরা আমাদের জন্য অথাব কিছু পাব তার জন্য করিনি। আমি যুদ্ধ করেছি আমার মা, বাবা, পরিবার এবং প্রতিবেশি যেন শান্তিতে ঘুমাতে পারে এবং এই প্রজন্ম পড়া-লেখা করে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। আল্লাহর অশেষ রহমতে, সকলের সহযোগিতায় আমরা সেই যুদ্ধে জয় লাভ করেছিলাম। যে চেতনায় আমরা যুদ্ধ করেছিলাম, তাতে আমরা সফল হয়েছি।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও উদযাপন কমিটির আহবায়ক মুস্তাফিজুর রহমান পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কুমিল্লার চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. জামাল নাসের, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আবু জাফর খান, শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাসরিন জাহান চৌধুরী ও শাহরাস্তি পৌরসভা চেয়ারম্যান হাজী আবদুল লতিফ।
অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন ৯৫ বছর বয়সী প্রাক্তন শিক্ষার্থী মো. ওমর ফারুক এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা আক্তার।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান অতিথি সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম এমপিকে আয়োজকদের পক্ষ থেকে শতবর্ষ উদযাপনের সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন।