নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে সুনির্দ্দিষ্ট কয়েকটি নিয়ম বেঁধে দিয়ে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে অনুমতি পেয়ে দীর্ঘ তিনমাস বন্ধ থাকার পর শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে টেকনাফ দমদমিয়া ঘাট থেকে ৬১০ জন পর্যটক নিয়ে সেন্টমার্টিন গেলো ‘এমভি পারিজাত’ ও ‘রাজহংস’ নামে দুটি জাহাজ। এতে ব্যবসায়ীদের মাঝে প্রাণ চাঞ্চল্যতা ফিরে এসেছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে শুক্রবার টেকনাফ থেকে ছেড়ে যাওয়া দুটি জাহাজসহ পর্যটকবাহী পাঁচটি জাহাজ সেন্টমার্টিন পৌঁছেছে।
সূত্রে জানা যায়, নাফনদীর নাব্যতা-সংকট ও নদীতে একাধিক বালুচর জেগে ওঠার অজুহাতে এবারের পর্যটন মৌসুমের শুরু হতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-পথে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে সংশ্লিষ্টরা। ফলে ভ্রমনে আসা পর্যটকরা প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ভ্রমনে যেতে পারেনি। এতে কক্সবাজার বিমুখ হতে থাকে পর্যটকরা। এটিকে কক্সবাজার পর্যটন শিল্প ধ্বংসের ষড়যন্ত্র বলে আখ্যা দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সিংহভাগ সেন্টমার্টিন বেড়াতে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু এবারে সুযোগ না পাওয়ায় অনেক পর্যটক সেন্টমার্টিন যেতে পারেন নি। এতে পর্যটন শিল্প ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তেমনি সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্য উপভোগে বঞ্চিত হয়েছেন পর্যটকরা। আর সরকারও হারিয়েছে প্রচুর রাজস্ব। এ অবস্থায় টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন জাহাজ চলাচলের অনুমতির দাবি করা হয়। সর্বশেষ ১০ জানুয়ারি দুপুরে ট্যাুর অপারেটরস অব কক্সবাজার (টুয়াক) আয়োজিত ১১টি ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় ব্যবসায়ী নেতারা দাবি করেন, কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন পর্যটন শিল্পকে ঘিরে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ জড়িত। যদি সেন্টমার্টিন যাতায়াত বন্ধ থাকে তবে এসব মানুষের জীবন জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। এরপরই বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) জেলা প্রশাসনের সাথে পর্যটন শিল্প ব্যবসায়ীদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়।
সি-ক্রোজ অপারেটর অনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (স্কায়াব) সভাপতি তোফায়েল আহমদ জানান, বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের সাথে বৈঠকের পর টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের সিদ্ধান্ত হয়। শুক্রবার ৬শ' যাত্রী নিয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দুটি জাহাজ দমদমিয়া ঘাট ত্যাগ করে। পর্যটন মৌসুমের শেষ দিকে এসে হলেও টেকনাফ ঘাট দিয়ে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয়ায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ও কক্সবাজার বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সমন্বয়ক মো. আবু সুফিয়ান বলেন, জেলা প্রশাসনের সব সেক্টর ও পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সাথে বৃহসম্পতিবার এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সকলের মতামত ও সিদ্ধান্তে শুক্রবার থেকে সেন্টমার্টিন জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। তবে এক্ষেত্রে সেন্টমার্টিনের পরিবেশ রক্ষায় কিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে।
কক্সবাজার ট্যুরস অপারেটর এসোসিয়েশন (টুয়াক) সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মনিবুর রহমান টিটু জানান, নাফনদীর নাব্যতা-সংকট ও নদীতে একাধিক বালুচর জেগে ওঠার ধোঁয়া তুলে এবারের পর্যটন মৌসুমের শুরু হতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-পথে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু নাফনদীতে কোন নাব্যতা ছিলোনা। বন্ধ থাকা এ সময়ে প্রায় ত্রিশ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যবসায়ীরা। এতকিছুর পরও যে টেকনাফ থেকে জাহাজ চলাচলের অনুমতি মিলছে এটিই বড় কথা।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপ) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, প্রবালদ্বীপের ৯০ শতাংশ মানুষ পর্যটন মৌসুমের ছয় মাসের ব্যবসার উপর নির্ভরশীল। কিন্তু টেকনাফ থেকে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় গেল তিনমাস পর্যাপ্ত পর্যটক সেন্টমার্টিন আসতে পারেনি। ফলে এখানকার জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছিল। জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ায় দ্বীপবাসী আনন্দিত।
সেন্টমার্টিনে দায়িত্বরত ট্যুরিস্ট পুলিশের কর্মকর্তা (জোন ইনচার্জ) মনিরুল ইসলাম ভূঁয়া বলেন, শুক্রবার টেকনাফ থেকে দুটি জাহাজসহ পাঁচটি জাহাজে প্রায় তিন হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন এসেছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা সচেষ্ট রয়েছে।