ঢাকা জেলার সাভার উপজেলায় কর্মরত বেসরকারি টেলিভিশন ৭১ টেলিভিশনের সাংবাদিক আশরাফ সিজেলকে মারধর ও অপহরণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী সাংবাদিকের অভিযোগ, ঝুঁকিপূর্ণ ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ও আশপাশের জমি দখলের সংবাদ প্রচারের জেরেই তাকে অপহরণচেষ্টা করেছে উপজেলা চেয়ারম্যানের লোকজন। এঘটনায় মহসিন বাবু নামে একজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শনিবার রাতে এঘটনায় সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজীবসহ ৮-১০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মারধর, অপহরণসহ হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করেছেন।
শনিবার দুপুর ২টার দিকে পৌরসভার ভাটপাড়া এলাকায় ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিকের ভাড়া বাসার সামনে এই ঘটনা ঘটে।
উপজেলা চেয়ারম্যান ছাড়াও বাকী অভিযুক্তরা হলেন, রকিব আহম্মেদ, মহসিন বাবু ও মো. রওশনসহ অজ্ঞাত ৮-১০জন। তারা সবাই সাভারের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।
সাংবাদিক আশরাফ সিজেল বলেন, ‘গত ৪-৫ দিন আগে আমিনবাজার ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সের দুর্ভোগের সংবাদ সংগ্রহের জন্য আমি সেখানে যাই। ইউনিয়ন পরিষদটার দুইতলা ভবন ১৯৮৫ সালে হইছে। কিন্তু এরপরে আর সংস্কার হয় নাই। ইউএনও ৫ মাস আগে চিঠি দিছে চেয়ারম্যানের কাছে যে, ঝুঁকিপূর্ণ এই পরিষদ ভবন পরিত্যক্ত করে অন্য জায়গায় ভাড়া নেয়ার জন্য। পরে এই বিষয়ে আমি ইউএনও ও চেয়ারম্যানের বক্তব্য নিছি। পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের পাশে খাসজমি ইজারার নামে একটা প্রভাবশালী লুটপাট করে খাচ্ছে। এটার নিউজ আজকে প্রচারও হয়েছে। এটা নিয়েই উপজেলা চেয়ারম্যান ক্ষুব্ধ। আজকে সারাদিন উপজেলা চেয়ারম্যান রাজীবের লোকজন আমাকে ফলো করছে। ওখান থেকে যখন আমার বাসা ভাটপাড়ার দিকে আমি আসছি।’
‘তখন মহসিন বাবু, ফেসবুক সাংবাদিক রওশন ও উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্যাডাররা ৮-১০জন অস্ত্রশস্ত্র, পিস্তল নিয়ে আমাকে অপহরণের চেষ্টা করছে। মারধরও করছে। আমি কোনরকম আত্মরক্ষা করে কৌশলে ওয়াল টপকিয়ে পাশের একটা ভবনের ছাদে গিয়ে আশ্রয় নিছি। পরে সন্ত্রাসীরা গেটের মধ্যে বাইরাবারি করছে খোলার জন্য। পরে ৯৯৯ এর কল পেয়ে পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করছে। এমনকি সন্ত্রাসীরা পিস্তল উঁচিয়ে ফাঁকা গুলি করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউএনও’র চিঠিমতে, ইউনিয়ন পরিষদের ভাড়ার ব্যয়ভার বহন করবে উপজেলা পরিষদ। আবার আমিনবাজার ইউনিয়ন পরিষদের দখলের জায়গায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অফিসও আছে। এই বিষয়েই উপজেলা চেয়ারম্যান ক্ষুব্ধ। আমি এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকলেও শঙ্কিত। কারণ এখনও আমাকে ফোনে হুমকির মধ্যে রাখছে। আমাকে বাসা ছেড়ে দেয়ার জন্য আমার বাড়িওয়ালাকেও হুমকি দিচ্ছে। মহসিন বাবু ও উপজেলা চেয়ারম্যানের লোকজন অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন দিয়ে হুমকি দিচ্ছে। আমি থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।'
অভিযোগ অস্বীকার করে সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজিব বলেন, 'আমি তো এবিষয়ে কিছুই জানি না। এখন শুনি আমার নামেও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আমি চাই যদি ওই সাংবাদিকের উপর কেউ হামলা করে থাকে তাকে যেন আইনের আওতায় আনা হয়। একইসাথে সে যে আমাকে জড়িয়েও মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে, সেটিও যেন তদন্ত করে অভিযোগ মিথ্যা হলে মিথ্যা অভিযোগের জন্যেও যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।'
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ভুক্তভোগী সাংবাদিকের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ইতোমধ্যে বাবু নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। তদন্ত করে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।