পিরোজপুরে দুই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষক ও ভবন সমস্যা প্রকট
প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ২০:৫৩ | অনলাইন সংস্করণ
হাসান মামুন, পিরোজপুর
শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত শতাধিক বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী পিরোজপুরের দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নানাবিধ সমস্যাসহ প্রয়োজনের তুলনায় কক্ষের ও শিক্ষক পর্যাপ্ত না থাকায় শিক্ষার গুনগতমান ক্ষুন্ন হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান দু’টিতে ১০৪টি শিক্ষকের পদ থাকলেও ৩৯টি পদ দীর্ঘ দিন শুন্য থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশুনায় এসেছে শৈথিল্যভাব। “সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে” পনেরোশত আশি জন শিক্ষার্থীর জন্য একাডেমিক ভবনসহ অন্যান্য ভবন সংকট এবং ৫২টি পদের বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৩০ জন। অপরদিকে “সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে” চৌদ্দশত শিক্ষার্থীর জন্য একটি আধুনিক বহুতল ভবন নির্মান এবং ৫২ টি পদের বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৩৫ জন। সেখানে ২টি শাখা থাকলেও শ্রেণি কক্ষের অভাবে এক কক্ষেই ঠাসাঠাসি করে বসতে হয়। ফলে লেখা পড়ায় মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। কক্ষের অভাবে ভাঙ্গা ভবনের টেবিল বেঞ্চসহ অন্যান্য ফার্নিচার খোলা আকাশের নিচে থাকায় তা নষ্ট হচ্ছে।
জানাগেছে, পিরোজপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়টি ১৯০৭ সালে বলেশ্বর ও দামোদর নদের তীরে প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে এর লেখাপড়ার মান খুব ভালো ছিলো। সময়ের ব্যবধানে শিক্ষার্থী অনেক বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং একটি অতি পুরাতন ভবন ভেঙ্গে ফেলায় সেখানে কক্ষের সংকট সৃষ্টি হয়। কোন কোন শ্রেনিতে ২ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। এ বিদ্যালয়ে প্রভাতি ও দিবা শিফটে মোট ১৫শ ৮০ জন ছাত্র অধ্যায়ন করছে। দুই শিফটে প্রধান শিক্ষকসহ মোট ৫২ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও দুই জন সহকারি প্রধান শিক্ষকসহ ২২ শিক্ষকই নেই। যেখানে ইংরেজি বিষয়ে ৮জন শিক্ষকের পদ থাকলেও আছেন ৩জন, গনিতে ৬ জন আছেন ৪ জন, ইসলাম শিক্ষায় ৪ জন আছেন ৩ জন, ভৌত বিজ্ঞানে ৪জন আছেন ২জন, জীব বিজ্ঞানে ৪জন আছেন ১ জন, ব্যবসায় শিক্ষায় ৪ জন আছেন ৩ জন, ভূগোলে ২ জন আছেন ১ জন, সামাজিক বিজ্ঞানে ৪জন শিক্ষকের পদ থাকলেও কোন শিক্ষক নেই। এছাড়া বাংলা, চারুও কারুকলা, শারীরিক শিক্ষা ও কৃষি শিক্ষায় কর্মরত রয়েছেন। অফিস পিয়ন দাপ্তরিসহ কর্মচারীর সংখ্যাও অনেক কম। ৯ জন চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীর পদ থাকলেও আছে ৩ জন।
পাশাপাশি পিরোজপুর সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে প্রভাতি ও দিবা শিফটে মোট ১ হাজার ৪শত জন ছাত্র অধ্যয়ন করছে। এদিকে দুই শিফটে প্রধান শিক্ষকসহ মোট ৫২ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও দুই জন সহকারি প্রধান শিক্ষকসহ ১৭ শিক্ষকই নেই। বাংলায় বিষয়ে ৮জন শিক্ষকের পদ থাকলেও আছেন ৫ জন, গনিতে ৬ জন আছেন ৪ জন, সামাজিক বিজ্ঞানে ৬জন আছেন ২ জন, ভৌত বিজ্ঞানে ৪ জন আছেন ৩ জন, জীব বিজ্ঞানে ২ জন আছেন ১ জন, ব্যবসায় শিক্ষায় ৪ জন আছেন ১ জন, ভূগোলে ২ জন আছেন ১ জন, অন্যান্য পদ থাকলেও কোন শিক্ষক নেই। অফিস পিয়ন দাপ্তরিসহ কর্মচারীর সংখ্যাও অনেক কম। ৯ জন চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীর পদ থাকলেও আছে ৭ জন।
বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত দীলিপ কুমার মৃধা বলেন, শিক্ষকের ঘাটতি পূরণ সহ একাডেমিক ভবনের সংকট রয়েছে বিদ্যালয়ে। নবম দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, বানিজ্য আর মানবিক শাখা থাকলেও একই কক্ষে তাদের পাঠদান করায় শিক্ষার গুনগত মান রক্ষা হচ্ছে না। আর স্কুলের সীমানা প্রাচির ভাঙ্গা থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে এখানকার শিক্ষার্থীরা। অন্যদিতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় বর্ষাকালে মাঠে পানি জমায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ক্লাস করায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে এখানকার শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীর জন্য ২৬টি কক্ষের প্রয়োজন হলেও সেখানে কক্ষ রয়েছে মোট ১২টি। নেই প্রধান শিক্ষকের বাস ভবন।
বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ জসীম উদ্দীন মাঝি একই সমস্যার কথা জানিয়ে তিনি বলেন প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরে ১৯০৯ সালে সরকারি করণ করা হয়। এরপর তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের জন্য একটি আধুনিক বহুতল ভবন নির্মান, মূল ভবনের ছাদ মেরামত, সংস্কারণ ও রং করণ, বিদ্যালয়ের বাহিরের চারদিকের দেয়াল ও ভিতরের দেয়াল ১০ ফুট উঁচু করে তৈরি করণ, পূর্ব দিকের রাস্তা ও গেইট তৈরি, হোস্টেল ভবন সংস্কার, ভিতর ও বড় মাঠ বালুদ্বারা ভরাট, মূল ভবনের বারান্দার দেয়াল টাইলস বসানো, প্রধান শিক্ষকের বাসভবন পুন:নির্মাণ ও পশ্চিম দিকের দেয়ালে তৈরি, ভবনের গ্রিল ও উন্নতমানের টয়লেট নির্মাণ, নৈশ প্রহরীর বাসা মেরামত করণ সহ আসবাবপত্র জরুরি প্রয়োজন রয়েছে।
পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম রেজাউল করিম গত ১ জানুয়ারী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বই বিতরন অনুষ্ঠানে এসে ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যালয়ের সুনাম ও ঠিকমত পাঠদান করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। সংসদ সদস্য বলেন, অভিভাবকরা উৎকন্ঠায় থাকবে এটা তো হতে পারে না। আশা করছি খুব অল্প সময়ে শিক্ষক সংকট ও ভবনের সমাধান হবে। শহরের সিআইপাড়া এলাকার বাসিন্দা এস এম মুর্শিদ জানান, আমার এক নিকট আত্মীয়ের সন্তান এ বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তাকে ভর্তি করাতে এসে জানলাম এ বিদ্যালয়ে একডেমিক ভবনের সংকটের কথা।
পিরোজপুর জেলা শিক্ষা অফিসার মো: ইদ্রিস আলী আযিযী বলেন, আমি পিরোজপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারী পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলাম। আমি যোগদানের পড়ে জানতে পারি এ বিদ্যলয়ের একটি ভবন ২০০৭ সালে পরিত্যাক্ত ঘোষনা করা হয়। তখন আমি চেষ্টা চালিয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবু আলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেনের সহযোগিতায় পরিত্যাক্ত ভবনটি দ্রুততম সময়ে অপসারণ করি। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য নতুন একটি ভবন খুবই জরুরী। এরপর তিনি বলেন, জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায় এ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের দুরাবস্থাসহ অন্য দুরাবস্থার কথা তুলে ধরা হয়।
পিরোজপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বলরাম কুমার মন্ডল জানান, সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভবন সংকটের কারনে পাঠদান বিঘ্ন হওয়ার বিষয়টি প্রধান শিক্ষক আমাকে জানিয়েছেন। এ বিদ্যালয়ে নতুন একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণ করার চেষ্ট চলছে, প্রথমে কথা ছিল, শিক্ষা মন্ত্রনালয় সারাদেশে লিফটসহ ১০ তলা ভবন করবে। বিদ্যুতের কারণে শিশুদের লিফটে সমস্য হতে পারে এ কারনে ভবন ১০তলা হবে না ৬ তলা হবে তার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে টেকসই ও মান সম্পন্ন শিক্ষার উন্নয়নের লক্ষ্যে ভৌত অবকাঠামোসহ পর্যায়ক্রমে গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রতিষ্ঠান উন্নয়নের পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারের কাছে আহবান জানান।