শূন্য রেখায় মায়ানমারের দুই বিচ্ছিন্নতাবাদীর মধ্যে গুলাগুলি

প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১৯:৪১ | অনলাইন সংস্করণ

  এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের শূন্য রেখায় আধিপাত্য বিস্তারের জের ধরে বাপক গুলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। প্রায় আড়াই মাস থেমে থাকার পর বুধবার ভোর সাড়ে ৫টা থেকে শুরু হয়ে থেমে থেমে দুপুর পর্যন্ত চলে এই গুলাগুলি। দুপুরে কিছুসময় বন্ধ থাকলেও বিকালে শূণ্য রেখায় আশ্রিত রোহিঙ্গা শিবিরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তবে এই আগুন কারা দিয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এসময় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের এপারে তুমব্রু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়। এই নিয়ে তুমরু সীমান্তের মানুষের মাঝে আবারো আতংক তৈরী হয়েছে। এর আগে গত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে তুমব্রু সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ শুনা যায়নি। মাঝেমধ্যে বিচ্ছিন্ন আওয়াজ ভেসে আসলেও তা ছিল মিয়ানমারের অভ্যান্তরীণ দূরবর্তী এলাকায়।

তুমব্রু সীমান্তের কোণারপাড়া ও বাজারপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার পর বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের শূণ্য রেখায় অবস্থিত তুমব্রু কোণারপাড়া ঘেষে ব্যাপক গুলাগুলি শুরু হয়। এসময় কয়েক রাউন্ড গুলি বাংলাদেশের কোনারপাড়ায় জনবসতি এলাকায় এসে পড়ে। ঘটনার পর আহত কয়েকজনকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়। কোণারপাড়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের কয়েকজন মুঠোফোনে জানান, আল ইয়াকিন ও আরএসওর মধ্যে এই গুলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে মহিবুল্লাহ (২৩) ও মো. হোসেন (১২) নামে দুইজন আহত হয়েছে। গলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে হামিদুল্লাহ (২৭) নামে এক রোহিঙ্গা। তবে এই তথ্য বাংলাদেশ সীমান্তের আইন শৃংখলা বাহিনী থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঘটনার পর শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উখিয়া কুতুপালং সংলগ্ন এমএসএফ হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে কোণারপাড়া এলাকাটি মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী দল আল রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) নিয়ন্ত্রণে রেখে নানা রকম অপরাধ ও মাদক পাচার করে আসছিল। সাধারণ রোহিঙ্গাদের জিম্মী করে এই অপরাধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় মিয়ানমারের অপর বিচ্ছিন্নতাবাদী দল রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)। এরই ধারাবাহিকতায় দুই গ্রুপের মধ্যে বুধবার গুলাগুলির ঘটনা ঘটে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, বুধবার সকাল থেকে অব্যাহত গোলাগুলির শব্দ শুনা যায়। ওপারে কী ঘটছে তা জানা যায়নি। তবে গুলাগুলির শব্দে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। এদিকে শুন্য রেখায় গুলাগুলির পর থেকে বাংলাদেশ সীমান্তের ঘুমধুম, তুমব্রু, বাইশারীফাড়ি, কোণারপাড়া, মধ্যমপাড়া এলাকায় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড তাদের টহল জোরদার করেছে।

এই বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেন, তুমব্রু সীমান্তের আন্তর্জাতিক সীমা রেখায় গুলাগুলির খবর তিনি স্থানীয়দের মাধ্যমে শুনেছেন। সীমান্তের উদ্ভূদ পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং প্রশাসন এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছে।