কাউখালীতে জনবহুল স্থানে ইটভাটা, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে হাজারো শিক্ষার্থী

প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ১৯:২৬ | অনলাইন সংস্করণ

  এনামুল হক, কাউখালী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি

কাউখালীতে পরিবেশ আইনকে বৃদ্ধা আঙ্গুলি দেখিয়ে জনবহুল স্থানে ইট ভাটা নির্মানে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে। উপজেলার ২নং আমরাজুড়ী ইউনিয়নের কুমিয়ান  দীর্ঘদিন ধরে জি.বি এফ ব্রিক ইট ভাটা তৈরি করে প্রভাবশালীরা পরিবেশ দূষিত করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। 

সরকারি বিধি অনুযায়ী ইট ভাটা নির্মানের ১ (এক) কিলোমিটারের মধ্যে কোন বাড়ী-ঘর ফসলী জমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ক্ষতি হয় এমন কোন প্রতিষ্ঠান থাকতে পারবে না। অথচ এই ইট ভাটার ১ (এক) কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেশ কিছু বাড়ী-ঘর, বাগান বাড়ী এবং আমরাজুড়ী  বাজার ও ফেরিঘাট । 

অধিক ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে পূর্ব আমরাজুড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পূর্ব আমরাজুড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোস্তাফা হায়দার একাডেমি, হাফেজি মাদ্রাসা,  জামে মসজিদ। এই সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনই ভাটার নির্গত ধোঁয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। 

বিশেষজ্ঞরা জানান, বিষাক্ত এই ধোঁয়া ধীরে ধীরে মানবদেহে প্রবেশ করার ফলে ক্যান্সারসহ জটিল দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে। অথচ প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরে ছাড়পত্র নিয়ে বছরের পর বছর এই জনবহুল স্থানে ইটেরভাটা তৈরি করে ইট পোঁড়াচ্ছেন।

স্থানীয় নেতা  বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের পিরোজপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক নিমাই মন্ডল জানান, ভাটা এলাকা থেকে ১ কিলোমিটারের মধ্যে তেমন কোন গাছপালা বৃদ্ধি হতে পারে না। গাছ লাগানোর পর ১০/১৫ ফিট বড় হওয়ার পর ভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়ার কারনে মাথা আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যায়। ফলে এলাকায় বড় ধরনের কোন গাছপালা জন্মাতে পারে না। এছাড়া নারকেল সুপারির ফলন একেবারেই কমে গেছে ।

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম দাস জানান, ভাটা এলাকায় অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, ফলে শিশুরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে।বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এ বিষয়ে জানুয়ারি মাসের উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটিতেও বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। 

এ ব্যাপারে জি.বি এফ ব্রিক এর  স্বত্বাধিকারী  জাহাঙ্গীর হোসেন মুন্সি জানান,  সরকারি আইনে ইট-ভাটার চারদিকে ১ কিলোমিটার করে ৪ কিলোমিটারের মধ্যে ইট ভাটা তৈরি করা যাবে না, বিষয়টি পরিবেশ আইনে থাকলেও বাংলাদেশে কার্যকরী নাই।  সরকারি অনুমোদন নিয়ে ভাটা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি আরো জানান, নিউজ করলে কিছুই হবেনা, আমার ভাটা কেউ বন্ধ করবেনা।  তবে নিউজ না করলে  আপনাদের চা নাস্তা খাওয়ার ব্যবস্থা করব।

পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশালের পরিচালক আব্দুল হালিম এর সাথে কথা বলে যানা যায়, ইট ভাটার কাছাকাছি কোন জনবসতি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলে ঐ এলাকায় ইট ভাটা তৈরি করা যাবে না। তবে কাউখালীর ইট ভাটাটি কিভাবে অনুমোদন পেয়েছে তা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে  তদন্ত করে দেখা হবে।

এব্যাপারে পিরোজপুর জজ আদালতের এপিপি এডভোকেট জহিরুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে কেউ পরিবেশ দূষণ করলে জেলা প্রশাসক, পরিবেশ আদালত এবং পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ জেল জরিমানসহ ইটভাটা  ধ্বংস করতে পারবে।