রঙিন ফুলকপি চাষে ফাহিমার বাজিমাত
প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩:৩১ | অনলাইন সংস্করণ
মো. মোশারফ হোসাইন, নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি
শেরপুরের নকলা উপজেলার গনপদ্দী ডিজিটাল ইউনিয়নের পশ্চিম গনপদ্দী এলাকার (পুরানবাড়ী) কৃষাণী ফাহিমা আক্তার বাহারী রঙের ফুলকপি চাষ করে সফল হয়েছেন। ফাহিমা আক্তার গনপদ্দী ব্লকের পশ্চিম গনপদ্দী এলাকার বিদেশ ফেরত আবুল কালাম আজাদ লিটনের স্ত্রী।
কৃষাণী ফাহিমা আক্তার প্রথমবারের মতো রঙিন ফুলকপির চাষ করে সবার নজর কেড়েছেন। বাড়ীর পাশের ৩৩ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে বাহারী রঙের হলুদ ও পার্পল (বেগুনি) রঙের ফুলকপি চাষ করে লাভবান হয়েছেন। ৩৩ শতাংশ জমির মধ্যে ১৫ শতাংশ জমিতে হলুদ রঙের ফুলকপি ও বাকি ১৮ শতাংশ জমিতে বেগুনি রঙের (পার্পল) ফুলকপির পরীক্ষামূলক চাষ করেন। প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন ও বাজারে ভালো দাম থাকায় অন্যান্য আবাদের তুলনায় অধিক লাভবান হওয়ায় খুশি কৃষাণী ফাহিমা। তার সফলতা দেখে স্থানীয় অনেক কৃষক রঙিন ফুলকপি চাষে আগ্রহী হয়েছেন।
কৃষাণী ফাহিমা আক্তার বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ ফুলকপি চাষ করে আসছি। তবে এর আগে কোনদিন রঙিন ফুলকপি দেখিনি। কিন্তু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ-এর পরামর্শ মোতাবেক ও গনপদ্দী ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অলিউল্লাহ’র তত্বাবধানে আমি রঙিন ফুলকপি চাষ করি। তিনি জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরাধীন বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় উচ্চমূল্যের ফসল আবাদ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনি সাধারণ ফুলকপি চাষের পাশাপাশি ৩৩ শতাংশ জমিতে হলুদ ও বেগুনি রঙের ফুলকপি চাষ করেন।
ফাহিমা আক্তার বলেন, আমি কৃষাণী তাই আমার স্বামীর মাধ্যমে জামালপুর হট্রিকালচার সেন্টার থেকে হলুদ ও বেগুনি রঙের ফুলকপির ২ হাজার চারা এনে রোপন করেছিলাম। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। এই কপি চাষে রাসায়নিক সার ও ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার না করায় সম্পূর্ণ নিরাপদ। সবজি হিসেবে নিরাপদ ও এলাকায় নতুন ফসল হওয়ায় স্বাভাবিক কারণেই এই রঙিন ফুলকপির চাহিদা অনেক বেশি। সাধারণ ফুলকপির চেয়ে প্রতিটি রঙিন ফুলকপিতে ৫ থেকে ১০ টাকা করে বেশি দাম পাচ্ছেন তিনি। তাই আগামীতে অন্যান্য সবজি আবাদ কমিয়ে হলেও বাহারী রঙের ফুলকপি চাষের পরিমাণ বাড়াবেন বলে জানান, কৃষাণী ফাহিমা ও তার স্বামী আবুল কালাম আজাদ লিটন।
লিটন জানান, ৩৩ শতাংশ জমি চাষ, জৈব সার ও দুই রঙের ফুলকপির চারা কিনা, জাল দিয়ে বেড়া দেওয়া ও শ্রমিকের মজুরিসহ প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। হলুদ রঙের ফুলকপির চারা রোপনের ৭৫ দিন পরে তা বিক্রির উপযোগী হয়। তিনি এপর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার টাকার হলুদ রঙের ফুলকপি বিক্রি করেছেন। বাকি হলুদ রঙের কপি বিক্রি করে বর্তমান বাজার অনুযায়ী আরো অন্তত ৩৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব বলে তিনি জানান। তাছাড়া ১৮ শতাংশ জমিতে চাষ করা পার্পল (বেগুনি) রঙের ফুলকপি বাজার জাত করতে আরো ৮ থেকে ১০ দিন সময় লাগতে পারে বলে তিনি ধারনা করছেন।
তিনি জানান, বাজার দাম কমে গেলেও পার্পল (বেগুনি) রঙের ফুলকপি থেকে অন্তত অর্ধলাখ টাকা আয় হবে। তার হিসেবে মতে ৩৩ শতাংশ জমিতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ করে বাহারী রঙের ফুলকপির আবাদ থেকে সবখরচ বাদ দিয়েও তার অন্তত অর্ধলাখ টাকা লাভ থাকবে।
ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠতা সভাপতি আলহাজ্ব ছাইদুল হক ও সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন, কৃষ্ণপুর এলাকার কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান, শাহাজাদা, কামাল, কমল, মনিরুজ্জামান, কৃষানী ময়না বেগম ও নাসিমা বেগমসহ অনেকে জানান, তারা রঙিন ফুলকপি চাষে আগ্রহী হয়ে রঙিন ফুলকপি চাষী কৃষাণী ফাহিমা আক্তারের পরামর্শ নিয়েছেন। তাছাড়া সময়োপযোগী পরামর্শ পেতে উপজেলা কৃষি অফিসেও তারা যোগাযোগ করেছেন। রঙিন কপি চাষে লাভ বেশি হওয়ায় আগামীতে তারা সবাই অন্যান্য সবজির পাশাপাশি অল্প করে হলেও হলুদ ও বেগুনি রঙের ফুলকপি চাষ করবেন।
পুষ্টি বিজ্ঞানের মতে, ‘অ্যান্থোসায়ানিন’ ও ‘ক্যারোটিনয়েড’ নামক রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতিতে ফুলকপি হলুদ ও বেগুনি রঙের হয়। এসব রঙিন ফুলকপিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, ই, কে, ফলিক এসিড, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ বিভিন্ন উপকারী পদার্থ থাকে। যা মানব দেহের জন্য খুবই জরুরি। বিশেষ করে অ্যান্থোসায়ানিন রক্ত জমাট বাঁধা কমিয়ে হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, কৃষকের মাঝে কৃষি বিষয়ক নতুন তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা মাঠে নিরলস কাজ করছি। এর ফলশ্রুতিতে নকলা উপজেলার গনপদ্দী ডিজিটাল ইউনিয়নের পশ্চিম গনপদ্দী এলাকার কৃষক আবুল কালাম আজাদ লিটনের স্ত্রী কৃষাণী ফাহিমা আক্তার বাহারী রঙের ফুলকপি চাষ করে সবার নজর কেড়েছেন। নকলার আবহাওয়া ও মাটি রঙিন ফুলকপি চাষের জন্য উপযোগী। ফাহিমা আক্তারের দেখাদেখি অন্যান্য কৃষকরাও পুষ্টিগুণে ভরপর রঙিন ফুলকপি চাষে আগ্রহী হয়েছেন বলে তিনি জানান। বাড়ির আঙ্গীনায় বা দোঁ-আশ মাটিতে হলুদ ও বেগুনি রঙের ফুলকপি চাষ করে যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারেন বলে মনে করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ।