মানিকগঞ্জে ফসলি জমি ধ্বংসের হিড়িক

প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩:০৫ | অনলাইন সংস্করণ

  দেওয়ান আবুল বাশার, মানিকগঞ্জ

অবৈধভাবে প্রকাশ্যে বেশ কয়েকটি ভেকু মেশিন দিয়ে ফসলি জমির মাটি কাটার কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছে প্রভাবশালী একটি মহল। এ যেন ফসলি জমি ধ্বংসের হিড়িক চলছে। দিনের পর দিন এভাবেই আইন অমান্য করে কৃষি জমি ধ্বংস করা হলেও কৃষি জমি রক্ষায় কার্যকরি কোন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছেনা।

জানা গেছে, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার আটিগ্রাম ইউনিয়নের মালুটিয়া মৌজায় প্রায় দেড়’শ একর কৃষি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী বাথুলী এলাকার কালাম, মোশারফ মেম্বার ও সোহেল মুন্সির নেতৃত্বে তিনটি গ্রুপ ফসলি জমি ধ্বংসের মহোৎসবে মেতেছে। অপরদিকে, জাগির ইউনিয়নের উকিয়ারা উত্তরপাড়া ধলেশ্বরী নদী সংলগ্ন ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। নেতৃত্ব দিচ্ছেন ১নং ওয়ার্ড সদস্য রাজা মিয়া।

সরেজমিনে শনিবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে দেখা যায়, মালুটিয়া মৌজার দোপার চকে তিনটি ভেকু দিয়ে ফসলি জমির টপ সয়েল (উর্বর অংশ) কাটা হচ্ছে। আবার কোথাও পনেরো থেকে বিশ ফুট গভীর করে ফসলি জমি কাটা হচ্ছে। কৃষি জমিতে এভাবে গভীর করে মাটি কাটায় বিপাকে পড়ছে পার্শ্ববর্তী জমির মালিক। অবশেষে উপায়ান্তর না পেয়ে ভূমি খেকো চক্রের ফাঁদে পা দিচ্ছেন তারা। এভাবেই তিন ফসলি জমি পরিণত হচ্ছে পুকুর-ডোবায়। দিন দিন কমছে ফসলের উৎপাদন, বেকার হচ্ছে কৃষক, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। যে জমির উপরিভাগে ধান বোনা হতো, সে জমিতে এখন বিশাল আকারের গর্ত। এছাড়া মাটি পরিবহণে ভারি ট্রাক, ট্রাক্টর ও মাহেন্দ্র ট্রলি ব্যবহারে ইউনিয়ন ও গ্রামীণ সড়ক হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত।

উকিয়ারা এলাকার শেফালি বেগম বলেন, আমাদের এখানে রাতে শুরু হয় ট্রাক ভেকুর যন্ত্রণা। সারা রাত কৃষি জমির মাটি কাটে। রাস্তার পাশে যাদের বাড়ি আছে তারা কেউ রাতে ঘুমাতে পারছিনা।

মালুটিয়া এলাকার খোরশেদ বেপারী বলেন, ভূমিদস্যুরা ভেকু মেশিন দিয়ে পনেরো থেকে বিশ ফুট গভীর করে খাড়াভাবে জমির মাটি কাটে, যাতে করে অল্প কয়েকদিনের মধ্যে পার্শ্ববর্তী জমির মাটি ভেঙে পড়ে যায়। বর্তমানে ভূমিদস্যুদের কাছে আমরা কৃষকরা খুব অসহায় হয়ে পড়েছি। যদি কোনোভাবে একজন কৃষকের জমির মাটি তারা কিনতে পারে তাহলে পাশের জমির মালিককেও বাধ্য হয়ে মাটি বিক্রি করতে হয়। এভাবে পুরো চকের চিত্র বদলে এখন হাওড়-বিলে রূপ নিচ্ছে।

মাটি ব্যবসায়ী আবুল কালাম ও মোশারফ মেম্বার বলেন, আমাদের নিজস্ব ভেকু, ড্রাম ও কাকড়া ট্রাক আছে। মাটি বিক্রি আমাদের পেশা। কিছুটা অবৈধ বিধায় সবাইকে ম্যানেজ করে চলতে হয়। সোহেল মুন্সি বলেন, মালুটিয়া ভগবানপুর এলাকায় প্রায় পনেরো বছর ধরে মাটি কিনে ইটভাটায় দিচ্ছি। আমি সবচেয়ে পুরাতন ব্যবসায়ী। এ চকে আমার জমি থাকলে আমি এভাবে কাটতে দিতাম না। কিন্তু কি করবো মাটির ব্যবসা করি এটাই এখন আমার রিযিক। রাজা মেম্বার বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়েই মাটি কাটছি।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতিশ্বর পাল বলেন, কৃষি জমি থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কাটা সম্পূর্ণ নিষেধ। মালুটিয়া ও উকিয়ারা এলাকায় ফসলি জমি রক্ষায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।