সাভারে কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে আবারও হামলা, আটক ১
প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ২১:২০ | অনলাইন সংস্করণ
সাভার প্রতিনিধি
ঢাকার সাভারে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হওয়ায় বেপরোয়া কিশোর গ্যাং ‘মামা- ভাইগ্না’ গ্রুপের সদস্যদের হামলায় আবারও এক কলেজ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। সবুজ হোসেন নামে আহত ওই শিক্ষার্থীকে চিকিৎসার জন্য সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
রোববার (২২ জানুয়ারি) সকালে এ ঘটনায় মামলা (মামলা নং-৬৩) দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সৈয়দ হাবিবুর রহমান। এর আগে শনিবার (২১ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় সাভার সদর ইউনিয়নের চাঁপাইন ভুতের গলি রোডে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। তাৎক্ষণিক খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে হামলায় অংশ নেওয়া জিহাদুল হাসান রোহান (১৮) নামে এক গ্যাং সদস্যকে আটক করে একটি সুইচ গিয়ার জব্দ করেছে সাভার মডেল থানা পুলিশ।
আটককৃত জিহাদুল হাসান রোহান নোয়াখালী জেলার মাইজদী থানার সোনাপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে। সে দীর্ঘদিন যাবত সাভার পৌরসভার সিআরপি এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে কিশোর গ্যাং ‘মামা-ভাইগ্না’ গ্রুপের একাংশের নেতৃত্ব দিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছিল।
পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৭ ডিসেম্বর সাভার কলেজের শিক্ষার্থী তন্ময় শাহিন সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথে চাঁপাইন রোডের ফ্রেন্স টাওয়ারের সামনে পৌঁছালে তার গতিরোধ করে সেখানে আড্ডারত মামা ভাইগ্না গ্রুপের সদস্যরা তাকে বিভিন্ন অবান্তর প্রশ্ন করতে থাকে। কথা কাটাকাটির জেরে ওই গ্রুপের সদস্য মো: শরীফকে সালাম না দেওয়ায় তাকে চর থাপ্পর, কিল ঘুষি দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে। রক্ষা পেতে এক পর্যায়ে শাহীন দৌড় দেয়। চাঁপাইন তালতলা এলাকায় পৌঁছালে তার উপর দ্বিতীয় দফায় সশস্ত্র হামলা করে সুইচ গিয়ার দিয়ে এলোপাথাড়ি জখম করে অভিযুক্তরা।
এসময় স্থানীয় মুছা এহসান মুন্না, আব্দুল করিম, মো: ইয়াছিন ও এক বীর মুক্তিযোদ্ধা হামলা থেকে কলেজ ছাত্র তন্ময় শাহিনকে বাঁচাতে গেলে তাদের উপরও হামলা চালিয়ে আহত করে কিশোরগ্যাং মামা-ভাইগ্না গ্রুপের সদস্যরা। এই ঘটনায় 'মামা-ভাইগ্না 'গ্রুপের সদস্য শহীদ, মুন্না ওরফে কবুতর মুন্না, হিমেল, রফিক, বাবুল, শরিফ, রিমেল সহ অজ্ঞাত ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলা নং -২৫ । পরে ভাইগ্না গ্রুপের প্রধান হিমেলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় দায়েরকৃত ওই মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। যার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী সবুজ হোসেন।
মামলায় সাক্ষী হওয়ায় শত্রুতার জেরে সাভার সদর ইউনিয়নের চাঁপাইন ভুতের গলি রোডে একা পেয়ে সাভার পৌরসভার মজিদপুর জাহাঙ্গীর টাওয়ার এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেনের ছেলে কলেজ ছাত্র সবুজ হোসেনের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ' মামা-ভাইগ্না' গ্রুপের সদস্য জিহাদুল হাসান রোহান (১৮), ইসমাইল হোসেন (২৭), মুন্না ওরফে কবুতর মুন্না(২৫) সহ অজ্ঞাত ১০/১২ জন দেশীয় মারাত্মক অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা করে। জিহাদুল হাসান রোহান সবুজ হোসেনকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় লক্ষ্য করে সুইজ গিয়ার দিয়ে আঘাত করলে ফিরাতে গিয়ে তার ডান হাতের কব্জিতে গুরুতর জখম হয়। এ সময় ইসমাইল হোসেন ও মুন্না ওরফে কবুতর মুন্না সহ অন্যরা এলোপাথারি কিল ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। সবুজ হোসেনের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে জিহাদুল হাসান রোহানকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বাকিরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় আহত সবুজ হোসেনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় সাভার মডেল থানা পুলিশ।
এই কিশোর গ্যাং "মামা-ভাইগ্না" গ্রুপের সদস্যরা মাঝেমধ্যেই তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বাইরে থেকে আসা শিক্ষার্থীদের ওপর নানা অযুহাতে হামলা চালায়। স্থানীয় প্রভাবশালীদের তদবিরের কারণে অপরাধীরা আইনের আওতায় আসছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করে বলেন, সাভারে বিভিন্ন সন্ত্রাসী ও দস্যু বাহিনীর পাশাপাশি আরেক আতঙ্কের নাম ‘কিশোর গ্যাং’। এলাকায় এলাকায় খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, ইভটিজিংসহ ভয়ংকর সব অপরাধ করছে উঠতি বয়সী তরুণ-যুবকদের এসব গ্যাং।
তাদের হাতে রয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্র, ছুরি, চাপাতি, ড্যাগার, রামদা, হকিস্টিকসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা এসব গ্যাং সদস্যদের কয়েকটি খুনের ঘটনায় সম্পৃক্ততার কথা জানা গেছে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে রোষানলে পড়ে অসংখ্য মানুষ হামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন।
পৃথক ঘটনায় সাভার মডেল থানায় শতাধিক গ্যাং সদস্যের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। তবে কয়েকটি আলোচিত ঘটনা ছাড়া অন্যান্য অপরাধে তারা বেশিরভাগ সময়েই আইনের আওতায় আসেনি।
রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বিভিন্ন বয়সী ছেলেরা ‘কিশোর গ্যাং’ গ্রুপের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। ‘কিশোর গ্যাং’ বলা হলেও এসব গ্রুপে কিশোর বয়স অতিক্রম করেছে এমন সদস্যও রয়েছে। এতে যেমন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী রয়েছে, তেমনি ছাত্ররা ছাড়াও অনেকেই রয়েছে।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সৈয়দ হাবিবুর রহমান বলেন, সবুজ হোসেনের ওপর হামলার ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। সব ধরনের অপরাধ দমনে তৎপর রয়েছে পুলিশ। তদন্তপূর্বক এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় এনে আদালতে সোপর্দ করা হবে।