ক্যান্সার আক্রান্ত শাহজাহান মনির গত বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) রাত সোয়া নয়টায় মারা যান। শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল ১১ টায় নিজ এলাকার মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়। দাফনের কয়েকঘন্টা যেতে না যেতে শাহজানের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত ৮ টায় তাঁর স্ত্রী রুশনী জান্নাত একটি কন্যাশিশুর জন্ম দেন।
কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শাহজাহান মনির। দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। দাফনের পরে একই দিনে কন্যা সন্তান ভূমিষ্ট হলেও মেয়ের মুখ না দেখে চলে যেতে হলো অন্তিম যাত্রায়।
বাবার আদর, স্নেহ, সংস্পর্শ কপালে জুটেনি সদ্য জন্ম নেওয়া নিষ্পাপ শিশুটির।
চকরিয়া পৌরসভার দক্ষিণ লক্ষ্যারচর সিকদারপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদসংলগ্ন মাঠে তাঁর জানাজা সম্পন্ন হয়। এতে স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে কক্সবাজার (০১) আসনের সাংসদ জাফর আলম এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদি, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফকির উদ্দিন ফরায়জীসহ নেতৃবৃন্দরা শোক জানিয়েছেন।
রাজনৈতিক জীবনে শাহজাহান মনির চকরিয়া কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক, চকরিয়া পৌরসভা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক, চকরিয়া পৌরসভা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ তিনি চকরিয়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। পেশাগত জীবনে তিনি একজন কাঠ ব্যবসায়ী। চকরিয়া পৌরসভার তরছঘাট এলাকায় শাহজাহানের একটি ফার্নিচারের দোকান রয়েছে।
মরদেহ দাফনের সাড়ে আট ঘণ্টা পর শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় চকরিয়া পৌরশহরের ম্যাক্স হাসপাতালে শাহজাহান মনিরের স্ত্রী রুশনি জান্নাত মেয়েশিশুর জন্ম দেন। জানা যায়, শাহজাহানই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। এখন দুই মেয়েকে নিয়ে অথই সাগরে পড়েছেন স্ত্রী রুশনি জান্নাত।
শাহজাহান মনিরের পরিবারের লোকজন বলেন, কয়েক মাস আগে শাহজাহানের লিভার ক্যানসার ধরা পড়ে। বাংলাদেশে কয়েক দিন চিকিৎসা করার পর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ভারতের হায়দরাবাদের এআইজি হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে কেমোথেরাপি দেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে দেশে ফিরে চট্টগ্রামের ক্যানসার–বিশেষজ্ঞ আবদুল আউয়ালের তত্ত্বাবধানে ছয়টি কেমোথেরাপি নেন তিনি। তবে অবস্থার অবনতি হলে শাহজাহানকে আবার হায়দরাবাদে নেওয়া হয়। তবে সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শে গত মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) শাহজাহান দেশে ফেরেন।
শাহজাহানের স্ত্রী রুশনি জান্নাত বলেন, সানজিদা হক রাফা নামের তাঁদের আড়াই বছর বয়সী আরেকটি মেয়েশিশু আছে। শাহজাহানই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। এখন দুই মেয়েকে নিয়ে অথই সাগরে পড়েছেন তিনি। শাহজাহানের চিকিৎসার পেছনেও অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এখন কীভাবে সংসার চালাবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি শাহজাহানের সঙ্গে রুশনির বিয়ে হয়েছিল। শাহজাহানের লাশ দাফনও করা হয় একই তারিখে। আবার ওই তারিখেই শাহজাহানের দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হলো।