রূপালী ইলিশ বাজারে থাকলেও মোকাম ক্রেতা শূন্য
প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ২০:০৭ | অনলাইন সংস্করণ
শওকত আলী, চাঁদপুর
বর্তমান সময়ে ইলিশের দাম অধিক হওয়ায় ইলিশ কেনার সাহস পচ্ছেনা ক্রেতা। এ জন্য বলা হচ্ছে, ইলিশ থাকলেও ক্রেতা শূন্য বাজার বা মোকাম। চাঁদপুরে বিগত কয়েক বছর পূর্বের জেলা প্রশাসক আব্দুর সবুর মন্ডল দায়িত্ব পালনকালে চাঁদপুর জেলাকে ব্র্যান্ডিং জেলা ঘোষনা করেন এবং ব্যাপক আধুনিকায়ন করেন। রূপালী ইলিশের রাজধানী খ্যাত চাঁদপুরকে রূপালী ইলিশের বাড়ি হিসেবে আক্ষা দিয়ে বলা হয়েছিল ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’।
তবে ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর বলা হলেও চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে বিগত অনেক বছর যাবত ইলিশের তেমন উৎপাদন দেখা যাচ্ছেনা। চাঁদপুর নৌ-সীমানার চাইতে দক্ষীনাঞ্চলের বরিশাল, ভোলা, চরফ্যাশন, হাতিয়া, আলেকজান্ডারও নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলায় প্রচুর ইলিশ উৎপাদন হতে দেখা যাচ্ছে। সে উৎপাদিত ইলিশ চাঁদপুর হয়ে বিভিন্ন জেলায় চাঁদপুরের ইলিশ হিসেবে সরবরাহ হয়ে থাকে। ব্যবসায়ী মহল অধিক মুনাফার লোভে অন্য জেলার নিন্মমানের ইলিশকে চাঁদপুরের রূপালী ইলিশ বলে বিক্রি করে কয়েকগুন বেশী দামে বিক্রি করে নিজেরা লাভবান হতে দেখা যাচ্ছে।
ইলিশ উৎপাদনের জেলা দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে আসা ইলিশের অন্যতম ইলিশ অবতারণ কেন্দ্র চাঁদপুর বড় স্টেশন মৎস্য আড়তে রূপালী ইলিশের দাম চড়া হওয়ার কারণে অনেকটা ক্রেতা শূন্য হয়ে পড়েছে এ স্থানের ব্যবসায়ীরা। চাঁদপুর নৌ-সীমানার পদ্মা-মেঘনার পাশাপাশি দক্ষিণ অঞ্চল থেকে ইলিশের আমদানি অত্যন্ত কম হওয়ায় এক সময়কার সরগরম ইলিশের বাজার এখন সুনশান নিরবতা বিরাজ করছে।
এখানকার শত-শত শ্রমিকদের মধ্যেও নেই পূর্বের মত ব্যস্ততা ও কার্যক্রম। এক প্রকার অলস সময় কাটাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমান শীত মৌসুমে ইলিশর আমদানী কম থাকলেও স্থানীয় জেলেদের আহরিত দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন প্রকার মাছ এখন ক্রয়-বিক্রয় চলছে এ বাজারে।
জাতীয় সম্পদ ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে পদ্মা-মেঘনায় আগামী ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস দেয়া হবে জাটকাসহ সব ধরণের মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা। অর্থাৎ এখানে আগামী ২মাস অভয়াশ্রম চলবে। তখন ইলিশসহ সবধরনের মাছ ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহনসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষনা করবে মৎস অধিদপ্তর।
শনিবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে বড় স্টেশন মাছ ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ইলিশের পসড়া সাজিয়ে বসে থাকলেও ক্রেতা নেই। কিন্তু ইলিশ মৌসুমের চাইতে বর্তমান দাম অনেকগুন বেশী। জাটকা সাইজের ইলিশের কেজি হচ্ছে ৫শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকা।
এছাড়াও আড়তগুলোতে এখন পোয়া, চিংড়ি, রুই, পাঙ্গাস, কাতলসহ দেশীয় প্রজাতির মাছ স্থানীয়ভাবে খুচরা ব্যবসায়ীরা এই আড়ৎ থেকে ক্রয় করে নিচ্ছেন। সকাল থেকেই শুরু হয় পাইকারী ইলিশ ও অন্যান্য মাছের বেচাকেনা। তবে স্থানীয় আড়ৎদারদের মধ্যে অনেকেই পদ্মা-মেঘনার রূপালী ইলিশ ছাড়া আমদানিকৃত ইলিশ বিক্রি করেন না।
চাঁদপুর শহরের ওয়ারলেছ বাজারে ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানাগেছে, স্থানীয়ভাবে জেলেদের আহরণকৃত ইলিশের দাম হচ্ছে ৩শ’ গ্রাম থেকে ৪শ’ গ্রাম প্রতি কেজি ৬০০শ’ থেকে ৬শ’৫০ টাকা, ৭শ’ থেকে ৮শ’ গ্রামের ইলিশ প্রতি কেজি ১হাজার থেকে ১২শ’ টাকা। বড় সাইজের ইলিশ স্থানীয় নদীতে জেলেরা এখন পাচ্ছে না।
মৎস্য আড়তের খুচরা ইলিশ বিক্রেতা সুমন খান বলেন, চাঁদপুর স্থানীয় নদীর রূপালী ইলিশের সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু স্থানীয় ইলিশের চাহিদা অনেক বেশী। দাম বেশী হওয়ার কারণে অনেকেই না কিনে চলে যান। বর্তমানে চট্টগ্রাম ও হাতিয়া সাগর এলাকার কিছু মাছ আমাদের ঘাটে আমদানি হচ্ছে।
একই আড়তের ব্যবসায়ী আবদুল আজিজ বলেন, আজকের বাজারে দেড়কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি মণ ৭৫-৮০ হাজার টাকা। ৮শ’ গ্রাম থেকে ১ কেজি উপরের ওজনের ইলিশ প্রতিমণ ৪৮ থেকে ৫০ হাজার টাকা। ৫শ’ গ্রামের নীচে প্রতি মণ ২২-২৪ হাজার টাকা।
তিনি আরো জানান, মাছঘাটে প্রায় শতাধিক ইলিশের আড়ৎদার আছে। এসব আড়তে এখন প্রতিদিন গড়ে ৩০মণ ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় হতে দেখা যায়। স্থানীয়ভাবে ইলিশ কম বিক্রি হলেও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাইকারী বিক্রির জন্য এসব ইলিশ সরবরাহ করা হয়।
হাইমচর উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রশিদ বলেন, এ বছর শীত মৌসুমে রুপালী ইলিশের চাইতে জাটকা সাইজের ইলিশ বেশী ধরা পড়ছে। তবে আমরা কারেন্টজালে জাটকা না ধরার জন্য জেলেদেরকে অনুরোধ করছি এবং আমাদের উপজেলা টাস্কফোর্সের অভিযান অব্যাহত ভাবে চরছে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, শীত মৌসুমে ইলিশ একটু কমই থাকে। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবছর জেলেরা পরিমাণে কিছুটা হলেও ইলিশ বেশী পাচ্ছে। ইলিশ কম পাওয়ার কারণ হচ্ছে এই সময়ে স্থানীয় নদীতে খাদ্য কম থাকে এবং উষ্ণতা কম। তাপ বাড়লে সাগর থেকে ইলিশ উজানের দিকে আসে। তখন ইলিশের আমদানী অনেকাংশে বাড়বে বলে তিনি জানান।