৫ বছর পূর্বে নারায়ণগঞ্জ শহরে হকার ইস্যুতে সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে লক্ষ্য করে গুলি ও ইট নিক্ষেপে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় আসামীদের অস্ত্র আইনের ধারা থেকে অব্যাহতি দেয়ায় পুলিশের অভিযোগপত্রের (চার্জশিট) বিরুদ্ধে নারাজি দিয়েছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। তার পক্ষ থেকে রোববার (২৯ জানুয়ারী) নারায়ণগঞ্জের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চতুর্থ আদালতে না রাজির আবেদন করেন সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা জিএম সাত্তার।
এর আগে গত ২৩ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্রটি দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন নারায়ণগঞ্জ (পিবিআই) এর পরিদর্শক আতাউর রহমান।
২০১৮ সালে দায়ের করা এই মামলার তদন্ত শেষে গত বছরের ২৩ নভেম্বর অভিযোগপত্রে আওয়ামী লীগ নেতাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টা, জখম, ভাঙচুর ও নাশকতার প্রমাণ পাওয়ার কথা উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। তবে অস্ত্র আইনের ধারা থেকে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়ারও আবেদন করেন তিনি। তার এই আবেদনে অসন্তোষ প্রকাশ করেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। গত ৮ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে এই অভিযোগপত্রে অসন্তোষ প্রকাশ করে এর বিরুদ্ধে আদালতে না রাজি দেবেন বলে জানিয়েছিলেন মেয়র আইভী।
মেয়র আইভীর না রাজি প্রসঙ্গে সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা জিএম সাত্তার বলেন, মামলাটির নির্ধারিত তারিখ ছিল। আমরা আদালতে অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে না রাজির আবেদন করেছি। কি কারণে আমরা না রাজি আবেদন করেছি, আদালতে তার ব্যাখ্যাও পেশ করেছি। আদালত তখন আমাদের বক্তব্য শোনেন। পরে আদালত এই মামলার পরবর্তী তারিখ আগামী ১ মার্চ নির্ধারণ করেন।
এদিকে, আদালতে আসামিদের পক্ষে মামলা পরিচালনায় অংশ নেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েলসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়ির আইনজীবী।
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- জেলা যুবলীগের সাবেক নেতা নিয়াজুল ইসলাম খান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, নারায়ণগঞ্জ হকার্স লীগের সভাপতি রহিম মুন্সি, হকার সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি আসাদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মো. পলাশ মিয়া, হকার সায়মন, ইকবাল হোসেন, মাসুদ পাটোয়ারী শুক্কুর, মো. তোফাজ্জল, মহসীন বেপারি, সালাউদ্দিন গাজী ও মো. সাদেকুল ইসলাম। মামলার মূল এজাহার থেকে মাত্র দু’জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন জানানো হয়েছে ৭ জনকে।
তবে নতুন করে আরও ১০ জনের নাম যুক্ত করা হয়েছে। অব্যাহতি দেয়া হয়েছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জানে আলম বিপ্লব, জেলা ছাত্রলীগের প্রয়াত ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সুজন, যুবলীগ কর্মী নাসির উদ্দিন ওরফে টুণ্ডা নাসির ও চঞ্চল মাহমুদকে।
২০১৮ সালের ১৬ই জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে মেয়র আইভী ও তার অনুসারীদের সঙ্গে হকারদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দু’পক্ষের সংঘর্ষে আইভীসহ অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন যে তদন্ত কমিটি করেছিল, সেটি আলোর মুখই দেখেনি। ঘটনার পরদিন মেয়র আইভীর ভাইসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় অস্ত্র ছিনতাই ও হত্যাচেষ্টার লিখিত অভিযোগ দেন যুবলীগ নেতা নিয়াজুল ইসলাম।
অন্যদিকে, আইভীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে ২২শে জানুয়ারি নিয়াজুলসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও এক হাজার জনকে আসামি করে থানায় অভিযোগ দেন সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা জিএম সাত্তার। তবে পুলিশ অভিযোগ দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে রেকর্ড করে। ২২ মাস ১৮ দিন পর ২০১৯ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর উচ্চ আদালতের নির্দেশে সদর মডেল থানায় দেয়া অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়।
আদালতে পুলিশ পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, গত বছরের ২৩ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। অভিযোগপত্রে যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের মধ্যে নিয়াজুল ইসলাম ও শাহ নিজাম উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আছেন।