তুমব্রুতে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সরানোর উদ্যোগ
প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৩:৪৮ | অনলাইন সংস্করণ
কক্সবাজার প্রতিনিধি
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্টি 'আরসা ও আরএসও'র মধ্যে সংঘাতের জেরে শূণ্যরেখার ক্যাম্প থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের ভূ-খন্ডে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের আগামী রোববার থেকে সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। বর্তমানে ওখানে আশ্রয়রত রোহিঙ্গার দুই-তৃতীয়াংশ বিভিন্ন ক্যাম্পে নিবন্ধিত। শুধু মাত্র এক-তৃতীয়াংশের নিবন্ধন পাওয়া যায়নি।
আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি (আইসিআরসি) ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সমন্বয়ে পরিচালিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান (বুধবার পর্যন্ত) অনুযায়ী, সংঘাতের পর তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশেপাশে তাবু টাঙিয়ে মোট ২ হাজার ৯৭০ জন রোহিঙ্গা অবস্থান নিয়েছে। যেখানে বর্তমানে ৫৫৮ টি পরিবার পাওয়া গেছে। যদিও মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) ওখানে ৫৩৭ পরিবারের ২ হাজার ৮৮৯ জন রোহিঙ্গা অবস্থানের তথ্য নিশ্চিত জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গণনা পরিচালনাকালে ২ হাজার ৯৭০ জন রোহিঙ্গার মধ্যে ২ হাজারের মতো রোহিঙ্গা উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে নিবন্ধিত রয়েছেন। ৮ শতাধিক রোহিঙ্গার কোন নিবন্ধনের তথ্য পাওয়া যায়নি।
কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, শূণ্যরেখার ক্যাম্প থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের গণণা চূড়ান্ত করা হয়েছে। বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) এসে ওখানে ৫৫৮ টি পরিবারের ২ হাজার ৯৭০ জন রোহিঙ্গা নিশ্চিত হওয়া গেছে। ওখানে আশ্রয়রত মোট রোহিঙ্গার দুই-তৃতীয়াংশ বিভিন্ন ক্যাম্পে নিবন্ধিত। শুধু মাত্র এক-তৃতীয়াংশের নিবন্ধন পাওয়া যায়নি।
তিনি জানান, এদের আগামী রোববার সকাল থেকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। শুরুতেই বিভিন্ন ক্যাম্পে নিবন্ধিতদের স্ব স্ব ক্যাম্পে পাঠানো হবে। নিবন্ধিত ক্যাম্পে পরিবার ভিত্তিক ঘর বরাদ্দ থাকার কথা। ওই ঘরে তাদের পাঠানো হবে। আর অনিবন্ধিতদের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হবে।
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, সংশ্লিষ্টদের তথ্য বলছে ওখানে নিবন্ধিত বা অনিবন্ধিত বেশ কিছু রোহিঙ্গা অপরাধের সাথে জড়িত থাকায় মামলা রয়েছে। এদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছেন। মূলত কক্সবাজার, বান্দরবান জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আন্তর্জাতিক সাহায্য প্রদানকারি সংস্থার প্রতিনিধিসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত কমিটি এ কাজ করছেন।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বাস্তচ্যুত হয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এর আগে বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে আসাসহ অন্তত ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া হয় কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩ টি অস্থায়ী আশ্রয় ক্যাম্পে। ওইসব ক্যাম্পের সার্বিক দেখভাল ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছে আরআরআরসি (শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার)। অপরদিকে তুমব্রু কোনারপাড়া শূণ্যরেখায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পটির দায়িত্ব পালন করছে আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্ট কমিটি (আইসিআরসি)। ক্যাম্পটিতে ৬৩০ টি পরিবারে সাড়ে চার হাজারের বেশী রোহিঙ্গা বসবাস করে আসছিল। গত ১৮ জানুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোলাগুলি-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় রোহিঙ্গা হামিদ উল্লাহ নিহত এবং দুজন আহত হয়েছেন। এ সময় শূন্যরেখার বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের বসতঘর পুড়ে যায়।
এরপর তুমব্রু বাজারে তাবু টাঙিয়ে আশ্রয় নেয় তারা। কিন্তু বর্তমানে ওখানে ২৯৭০ জন রোহিঙ্গা পাওয়া গেলেও বাকীরা কোথায় তা বলতে পারছেন না কেউ।