টাকা ছাপিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা শেখ হাসিনার সরকার : আমীর খসরু
প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২১:২৭ | অনলাইন সংস্করণ
ময়মনসিংহ ব্যুরো
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু চৌধুরী বলেছেন, টাকা ছাপিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে অবৈধ শেখ হাসিনার সরকার। গত দুই মাসে তারা পঞ্চাশ হাজার কোটি নতুন টাকা ছাপিয়েছে। এটা অব্যাহত ভাবে চলতে পারে না। দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতি ধংস্ব করে দিয়েছে তারা। গত কয়েক বছরে দশ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে আওয়ামীলীগ। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে রাস্তায় আন্দোলন করে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করতে হবে।
শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টায় ময়মনসিংহ নগরীর পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট মাঠে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা ভোট চোর, এটাই মূল কথা। দেশের মানুষ ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য রাস্তায় নেমেছে। তাদেরকে মিথ্যা, গায়েবী মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে, খুন করা হচ্ছে। ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকার জন্য অবৈধ ভাবে সরকারী কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে ক্ষমতা ধরে রাখার প্রক্রিয়ায় বহু অপকর্ম তারা করছে। আওয়ামীলীগ দেশের জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা রাজনৈতিক ভাবে পরাজিত। মনে রাখতে হবে আওয়ামীলীগ শুধু ভোট চুরি করে না। তারা পুকুর চুরি করছে, ব্যাংক, শেয়ার বাজার, মেঘা প্রজেক্ট, ছোট প্রজেক্ট সব চুরি করে দেশকে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিনত করেছে।
এ সময় প্রশাসনের উদ্দেশ্যে এই বিএনপি নেতা বলেন, জনগনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবেন না। টিকে থাকতে পারবেন না। স্বৈরাচার টিকতে পারেনি। দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। আমাদেরকে হামলা, মামলা, হত্যা করেও থামাতে পারেনি। আমরা মরতে শিখেছি। কেউ আমাদের থামাতে পারবে না।
এ সময় নতুন কর্মসূছি ঘোষনা করে তিনি বলেন, আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সারাদেশের প্রত্যেক ইউনিয়নে পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হবে। আর এভাবেই ইউনিয়ন থেকে শুরু করে সরকার পতনের শেষ সংগ্রামে জনগনকে সম্পৃক্ত করে শেখ হাসিনাকে বিদায় করা হবে। এর মধ্য দিয়েই মানুষ দেশের মালিকানা ফিরে পাবে, বলেও যোগ করেন তিনি।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে ভয় পান না। তিনি ভয় পায় নির্বাচনকে। আর এ কারণেই তিনি নির্বাচন নিয়ে উপহাস করছেন। অর্থনীতি থেকে শুরু করে সব সেক্টরকে সরকার ধংস্ব করে দিয়েছে। এখন এক দফার আন্দোলনে এই সরকারকে বিদায় করে দেশকে ধংস্বের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরিয়ে উন্নয়নের পথে নিয়ে আসতে হবে। এজন্য সবাই প্রস্তুতি নিন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সদ্য সংসদ থেকে পদত্যাগকারী এমপি হারুন অর রশিদ বলেন, উপ-নির্বাচনে হিরো আলম সরকারকে উলঙ্গ করে দিয়েছে। এই সরকার জালিম ও মুনাফেক সরকার। ওয়ান ইলিভেনের পর তারা ক্ষমতায় এসে তাদের সব মামলা প্রত্যাহার করে আমাদের মামলা সব চালু রেখেছে। গত ২৯ জানুয়ারি শেখ হাসিনা রাজশাহীতে সরকারি গাড়ী রিকুজিশন করে, লোক ভাড়া করে সমাবেশ করেছে। তারা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধংস্ব করে দিয়েছে। এখন দেশে অটো পাশ চলছে। নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের বই দিতে পারছে না। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী বলছেন-আমরা নাকি বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছি। অবিলম্বে শিক্ষামন্ত্রী পদত্যাগ করুন, না হলে দেশের মানুষ জুতা মারবে।
গ্যাস, বিদ্যুৎসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানো, বেগম খালেদা জিয়াসহ নেতাকর্মীদের মুক্তি, গনবিরোধী সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে এই সমাবেশ করে ময়মনসিংহ বিভাগীয় বিএনপি।
এতে সভাপতি ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলাম। এ সময় সমাবেশটি যৌথ ভাবে সঞ্চালনা করেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জাকির হোসেন বাবলু ও উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাড. ফজলুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ওয়ারেস আলী মামুন ও শরীফুল আলম।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আব্দুল বারী ড্যানী, সাবেক মন্ত্রী সিরাজুল আলম খান, সাবেক এমপি নিলুফার চৌধুরী মনি ও শাহ শহীদ সারোয়ার, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক ডা: মাহাবুবুর রহমান লিটন, যুগ্ম আহবায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলী, উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক এনায়েত উল্লাহ কালাম প্রমূখ।
এদিকে বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে দুপুর থেকেই নগরীর চড়পাড়া, মাসকান্দা এলাকায় মিছিল সহকারে নেতাকর্মীরা দলে দলে উপস্থিত শুরু করে। এর এক পর্যায়ে সমাবেশস্থলে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীদের উপস্থিতি জনতার ঢল নামে। এ সময় চরপাড়া, মাসকান্দা ও পাটগুদাম ব্রীজমোড় এলাকায় ব্যাপক যানযটের সৃষ্টি হয়।