সীতাকুণ্ডে ফ্লাওয়ার পার্ক উদ্বোধন উপলক্ষে ডিসির সংবাদ সম্মেলন
প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৭:১৯ | অনলাইন সংস্করণ
নন্দন রায়, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
সীতাকুণ্ডে ফ্লাওয়ার মেলাকে সামনে রেখে ডিসির সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফুলের মতন আপনি ফুটাও গান" এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটে আগামী ১০ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হতে যাচ্ছে ফুল উৎসব। এ উপলক্ষে বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে প্রেস ব্রিফিং করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোঃ ফখরুজ্জামান।
১৯৪ একর খাস জমির ওপর আগের গড়ে ওঠা অবৈধ চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ও বিভিন্ন মাদকের আড্ডাস্থলে এখন শোভা পাচ্ছে নানা জাতের ফুলের সৌন্দর্য। একসময় যেখানে সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বসতো মাদকের আড্ডা আর দিনে চলত স্কুল পালানো ছেলেমেয়েদের হইহুল্লোর। বহুদিন ধরে এমনি অবস্থা বিরাজমান ছিল উপজেলার ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়কের পাশে সরকারি এই খাস জায়গাটিতে। এখন জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে উচ্ছেদ করা হয়েছে মাদকের আড্ডা ও অবৈধভাবে গড়ে ওঠা রেস্তোরাঁগুলো। তার পরিবর্তে গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন ফ্লাওয়ার পার্ক। ইতোমধ্যে সেখানে রোপণ করা হয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি বিভিন্ন জাতের ফুলগাছ। ফুটতে শুরু করেছে নানা রঙের ফুল। প্রথম দেখাতেই যে কারো নজর কাড়বে বাতাসে দোল খাওয়া নানান রঙের ফুল। বিকেল হলে এখানে এখন বৃদ্ধি পায় সাধারণ মানুষের আনাগোনা। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফ্লাওয়ার পার্কে ৯ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে ফাওয়ার ফেস্টিভেল।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে , উপজেলার ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়কের পাশে ভূমিদস্যুরা ১৯৪.১৩ একর খাস জমি দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রেখেছিল। তারা সেখানে অবৈধভাবে গড়ে তুলেছিলেন চাইনিজ রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন স্থাপনা। আর এই স্থাপনাগুলোতে রাতে বসতো মাদকের আড্ডা, চলত নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড।
ফৌজদারহাট থেকে বন্দর পর্যন্ত সংযোগ সড়কের পাশে অবস্থিত এই স্থানটি গত ৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের নির্দেশে খাস জমি উদ্ধারের জন্য উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম। উদ্ধারের পর সেখানে পাঁচ হাজার টিউলিপ ফুলের বীজ বপনসহ নানান জাতের ফুলের গাছ রোপণ করা হয়। ইতোমধ্যে বাগানের অনেক গাছেই ফুল ফুটেছে।
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েক মাস আগেও যেখানে ছিল নানা ধরনের অবৈধ স্থাপনা, সেখানে এখন শোভা পাচ্ছে বাতাসে ফুলের গন্ধ, পাখিদের কলকাকলি। হাওয়ায় হাওয়ায় দোলা খাচ্ছে নানান রঙের ফুল। সাগর তীরের পাশে হরেক রকমের ফুলের শোভা দেখে নজর কাড়ে সবার। এই ফ্লাওয়ার পার্কে বিকেলে এখন ভিড় করছে সাধারণ মানুষ। তারা দেখতে পাচ্ছে গাছে গাছে ফুল ফুটে আছে, ডালে ডালে পাখিরা কিচির মিচির করছে। হাওয়ায় হাওয়ায় দোলা খাচ্ছে টিউলিপ ফুল।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোঃ ফখরুজ্জামান বলেন, অবৈধ এ স্থানটির বর্তমান বাজার মূল্য অন্তত হাজার কোটি টাকা। এ পার্কটি ডিসি ফ্লাওয়ার পার্ক নামে পরিচিত হবে। এ স্থানটি নারী-পুরুষ, শিশু -কিশোর, যুব-বৃদ্ধ সকল বয়সী ও শ্রেণী পেশার মানুষের চিত্ত বিনোদনের উদ্দেশ্যে সাজানো হয়েছে। দেশি-বিদেশি শতাধিক প্রজাতির কয়েক লাখ ফুলের গাছ এখানে শোভা পাবে। এছাড়া চট্টগ্রামের প্রথমবারের মতো নিজেদের রোপন করা বাহারি টিউলিপ ফুল থাকবে দর্শনার্থীদের জন্য।
ফুল উৎসবকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে বিশাল আকৃতির দৃষ্টিনন্দন দুই দিঘির মাঝখানে নির্মাণ করা হয়েছে রাস্তা, দর্শনার্থীদের যাতায়াতের অনুষ্ঠানের সামনে রাস্তাকে নতুন সাজে সাজানো হয়েছে, রং তুলির আঁচড়ে নতুন রূপ দেওয়া হয়েছে অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণকে। অনুষ্ঠানস্থলের পাশেই বিনামূল্যে পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা থাকবে। সার্বিক নিরাপত্তার অংশ হিসেবে সম্পূর্ণ এলাকা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হবে। পর্যাপ্ত সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, স্বেচ্ছাসেবক টিমও দায়িত্ব পালন করবে। তাৎক্ষণিক সেবা প্রধানের জন্য একটি মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতিবন্ধী শিশু কিশোর ও এতিমদের ঘিরে বিশেষ ব্যবস্থার আয়োজন করা হয়েছে। ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ও বয়োবৃদ্ধদের জন্য থাকবে বিশেষ ব্যবস্থা। অনুষ্ঠানটি সকলের জন্য বিনামূল্যে উন্মুক্ত থাকবে।
তিনি আরো বলেন, পাহাড় সমুদ্রে ঘেরা অনন্য অসাধারণ চট্টগ্রামকে ঘিরে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাতে আমরা বদ্ধপরিকর। একদিকে সমুদ্র অন্যদিকে মেরিন ড্রাইভ ঘিরে সরকারের এই ১৯৪ একর জায়গাকে নিয়ে মহাপরিকল্পনা করে দেশবাসীকে আমরা একটি নান্দনিক আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট উপহার দিতে চাই। সর্বোপরি এই আয়োজন চট্টগ্রামের মানুষকে মেধা, মনন ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।
এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম বলেন, এতদিন ভূমিদস্যুদের দখলে ছিল জায়গাটি। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফকরুজ্জামানের নির্দেশে এটি উদ্ধার করা হয়। তার নির্দেশেই এখানে লাগানো হয় পাঁচ হাজার টিউলিপ ফুলগাছসহ নানান জাতের ফলদ ও বনজ গাছ। এই ফ্লাওয়ার পার্ককে কেন্দ্র করে আরো অনেক পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। ক্রমান্বয়ে তা বাস্তবায়ন করা হবে।
আগামী ১১-১৮ ফেব্রুয়ারি ৯ দিনব্যাপী এখানে ‘ফাওয়ার ফেস্টিভেল’ নামে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এ মেলার প্রধান আকর্ষণ থাকবে প্রথমবারের মতো ফোটা টিউলিপ ফুল। এ ছাড়াও থাকবে কায়াকিং, ঘুড়ি উৎসব, বড়শি দিয়ে মাছ ধরাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও শিশুতোষ প্রদর্শনী। মেলাটি সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।