শেরপুর জেলার নকলা উপজেলায় ভ্যালেইন্টাইন্স ডে (বিশ্ব ভালোবাসা দিবস) উপলক্ষে ফুলের কদর বেড়েছে। দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। বিশেষ করে গোলাপ ফুলের কদর আকাশচুম্বী। নকলা পৌর শহরের মোড়ে মোড়ে বসেছে ফুলের দোকান। বেচা কেনাও চলছে হরদম।
সরজমিনে দেখা গেছে, ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে গ্রাম-গঞ্জের হাট বাজার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতেও ফুলের দোকান বসেছে। উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েরা ফুল কিনতে ভিড় করছে এসব ফুলের দোকানগুলোতে। বিশেষ করে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের ফুলের দোকানে ভিড় সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সবাই তাদের প্রিয়জনের উদ্দেশ্যে ফুল কিনছে। কেউ কিনছে বন্ধু-বান্ধবের জন্য, আবার কেউ কিনছেন বাবা-মা, ভাই-বোনসহ আত্মীয়-স্বজনদের উদ্দেশ্যে।
নার্সারি ব্যবসায়ী মোক্তার হোসেন ও মৌসুমী ফুলের দোকানী মানিক মিয়ার সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা লাভের আশায় ফুলের দোকান দেয়নি। তাদের উদ্দেশ্যে হলো- কেউ যদি তার কাছে থেকে ফুল কিনে নিয়ে বাবা, মা, ভাই, বোন, আত্মীয় স্বজনদের বা প্রিয়জনকে উপহার দিয়ে তাদের খুশি করতে পারেন, তাতে নাকি তারা শওয়াবের ভাগী হবেন। তাছাড়া লাভ তো কিছু অবশ্যই হবে। তাদের লাভের টাকায় তারা নিজ নিজ বাবা-মাকে উপহার কিনে দিবেন বলেও জানান তারা।
রিয়া নার্সারী এন্ড পুষ্প বিতাণের মালিক মোক্তার হোসেন বলেন, এবছর তিনি দুই ধাপে ৫ হাজার টাকার ফুল কিনেছেন। এইসব ফুল বিক্রি শেষে অন্তত হাজার দুইয়েক টাকা লাভ হতে পারে বলে তিনি আশা করছেন। তিনি জানান, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসার নামে নষ্টামী ঠেকাতে ফুল ক্রেতাদের মধ্যে পরিচিত বনকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে যে বা যারা ফুল কিনতে আসছেন তাদের সকলকে নিজ নিজ বাবা-মায়ের জন্য ফুল কিনে নিতে পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। আর যারা বাবা-মায়ের জন্য ফুল কিনতে আসছেন তাদের কাছে বিনালাভে ফুল বিক্রি করছেন।
ফুল বিক্রেতা মানিক মিয়া জানান, ফুল আল্লাহর সৃষ্টির সেরা উপহার। তাই বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ফুলের দাম ও চাহিদা আকাশচুম্বী হয়ে যায়। এ উপলক্ষে উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ের ফুল ক্রেতারা জেলা শহরে গিয়ে একদিকে বেশি দামে ফুল কিনে আনেন, অন্যদিকে যাতায়াত খরচতো আছেই; তাছাড়া দূর্ঘটনার সম্ভাবনা থেকেই যায়। তাই তারা জেলা ও বিভাগীয় শহর থেকে ফুল কিনে এনে বিক্রি করেন বলে তিনি জানান। এতে করে এলাকার টাকা এলাকাতেই থাকছে। এতে লাভবান হচ্ছেন ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই।
ফুল ক্রেতারা জানান, এ দিনে ফুলের দাম এতটাই বেশি হয়, যা কল্পনাতীত। তবুও ভালোবাসা দিবসে বাবা, মা, ভাই, বোন, আত্মীয়-স্বজন ও প্রিয়জনকে উপহার দেওয়ার জন্য ফুল নিতে এসেছেন তারা। প্রতিটি গোলাপ ফুল ৮০ থেকে ১০০ টাকা, রজনীগন্ধা স্টীক ২৫ থেকে ৩৫ টাকা করে বেচা-কেনা হচ্ছে। আর গোলাপ, রজনীগন্ধা ও ঘাস ফুল দিয়ে তোড়া বানিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে, সাইজ বেধে যার দাম ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা। তবুও ক্রেতারা খুশি, কারণ হাতের নাগালে সতেজ ফুল পাচ্ছেন তারা।
তাছাড়া ভালোবাসার উপহার হিসেবে দেওয়ার জন্য নতুন সংযোজন করা হয়েছে নিদর্শন খচিত বিভিন্ন দামের ডায়েরী। এসব ডায়েরীর কদরও কম না। ছোট-বড় ও ডিজাইন বেঁধে এসব ডায়েরী ১২০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা করে বেচা-কেনা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেইন্টাইন্স নামক একজন খ্রিষ্ট্রান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচারের অভিযোগে তৎকালীন রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাকে ২৬৯ সালে কারাবন্দি করেন। বন্দি অবস্থায় তিনি কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে সুস্থ করে তুলেন। এতে তার জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। সেন্ট ভ্যালেইন্টাইন্স এর জনপ্রিয়তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদন্ড দেন। সেই দিনটি ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারী। তার পর ৪৯৬ সালে পোপ জেলাসিয়াস জুলিয়াস সেন্ট ভ্যালেইন্টাইন্স স্মরনে ১৪ ফেব্রুয়ারীকে ভ্যালেইন্টাইন্স দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এ দিবসে সবাই ভালোবাসার মানুষটিকে কিছু না কিছু উপহার দিয়ে থাকেন।