সিংগাইরে ফসলি জমি ধ্বংসের মহোৎসব
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:৩৫ | অনলাইন সংস্করণ
দেওয়ান আবুল বাশার, মানিকগঞ্জ
মানিকগঞ্জে রাতদিন বিরামহীনভাবে চলছে মাটি খেকোদের রমরমা বাণিজ্য। তাদের ফাঁদে পড়ে কৃষকেরা চাষের পরিবর্তে জমির টপ সয়েল (উর্বর অংশ) ও ফসলি জমিতে পুকুর খনন করে মাটি বিক্রয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছেন দিন দিন। এতে ফসলি জমির উর্বরাশক্তি যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনই মাটি পরিবহনের সময় আশপাশের জমির ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। গ্রামীণ পাকা ও কাঁচা সড়কে রাত দিন শত শত মাটির ট্রাক যাতায়াতের ফলে দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট।
সিংগাইর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই রাতদিন সমানতালে আবাদি কৃষি জমি থেকে এক্সকাভেটর (ভেকু) মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে মাটিখেকোরা। মাটি ব্যবসায়ীদের দাপটে স্থানীয় সাধারণ কৃষকরা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না, উল্টো তাদের ফাঁদে পড়ে বাপ-দাদার রেখে যাওয়া কৃষি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন তারা। আবাদি কৃষি জমি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে হতাশা লক্ষ্য করা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায় চারিগ্রাম ইউনিয়নের চর-দাসরহাটি, বরাটিয়ার চক, ভুইতার চক ও বরাটিয়া জামসা নদীর পাড় সংলগ্ন জমিতে মাটি কাটা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, চারিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিপন হোসেনের নেতৃত্বে আক্তার মাঝি, মানিক, মেহের ও জাফর সিন্ডিকেট আবাদি কৃষি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছে।
চেয়ারম্যান রিপন বলেন, আমার জমি আমি মাটি কেটে বিক্রি করব না কি করব সেটা আমার বিষয়।
তালেবপুর ইউনিয়নের কাংশার চকে জমির ফসল নষ্ট করে ড্রাম ট্রাক চলাচলের রাস্তা বানানো হয়েছে। পার্শ্ববর্তী জমির মালিক জাকির হোসেন বলেন, ট্রাক চলাচল ও মাটি কাটার ফলে আমার খেতের ভুট্টা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শফিকুল ইসলাম বলেন, চাচাতো ভাইয়ের জমি থেকে মাটি কাটছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা টিপু সুলতান স্বপন বলেন, সিংগাইরে প্রতি বছর ব্যাপক পরিমাণে ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। যার কারণে দিন দিন আবাদী জমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। ফলে কৃষি উৎপাদন ও জীববৈচিত্র মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে। এখনই কৃষি জমি রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) জালাল উদ্দিন বলেন, কৃষি জমি থেকে মাটি বিক্রির কোন সুযোগ নেই। যারা এসব অন্যায় করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিপন দেবনাথ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই, খোঁজ নিয়ে দেখছি।
ফসলের মাঠে মাঠে এখন খননযন্ত্রের বিকট আওয়াজ। ফসলের ক্ষেতে এত যন্ত্রের চলাফেরা মানুষ পাঁচ বছর আগেও দেখেনি। কেউ বলছে বড় বড় সেতু আর চার লেনের রাস্তা বানাতে বিনা শুল্কে আনা খননযন্ত্রের উচ্ছিষ্ট এগুলো। ঠিকাদারদের হাত গলে এখন কৃষিজমিতে। ফসলি জমি ‘জবাইয়ের’ এ রকম কত যন্ত্র এখন জমি বধে ব্যস্ত, তার হিসাব কারও কাছে নেই।