নারায়নগঞ্জের ফতুল্লায় নানী আয়শা বেগম (৬১) হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অপরাধে নাতি মো. রাকিবকে (২৫) গ্রেফতার করেছে পিবিআই পুলিশ।
এর আগে গত সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নিহতের মেয়ে নাসরিন আক্তার বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় একটি মামলা দায়ের (যার নং-৩৯) করেন। বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকা থেকে মো. রাকিবকে গ্রেফতার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই জানায়, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে নাসরিন আক্তারের মা আয়শা বেগম সিদ্ধিরগঞ্জে তার ভাইয়ের বাসা থেকে তার বাসায় আসেন। বাসায় আসার পর ওইদিন বিকেল থেকে রাত আনুমানিক সাড়ে ৯ টার পূর্বে যেকোনো সময় অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতিকারীরা নাসরিন আক্তারের বাড়ীতে প্রবেশ করে তার মাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে রুমের তালা খুলে রুমে থাকা নগদ ৫০ হাজার টাকা, ৭ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ মোট ৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকার মালামাল নিয়ে যায়।
মামলায় বিশ্বস্ত সোর্স নিয়োগ করে এবং তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় জানা যায়, ভুক্তভোগী আয়শা বেগমের মেয়ে নাছরিন আক্তারের পুত্র অর্থাৎ মৃত আয়শা বেগমের নাতি ঘটনার সঙ্গে জড়িত। মো. রাকিব ব্যাংক লোন নিয়ে মোবাইলের মাধ্যমে অনলাইনে জুয়া খেলে ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়ে এবং তার চলাফেরা ছিল উশৃঙ্খল প্রকৃতির। এই তথ্য পাওয়া মাত্র তদন্তকারী টিমের সন্দেহ হলে আসামি মো. রাকিবের কর্মস্থল মডেল গার্মেন্টস এ তথ্য নিয়ে জানা যায় যে, আসামি মো. রাকিব ঘটনার দিন তার কর্মস্থলে যাননি। পরবর্তীতে পিবিআই টিম মো. রাকিবকে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তাদের হেফাজতে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে।
পিবিআই আরো জানায়, ঘটনার দিন বাসায় কেউ থাকবে না সেটা সে আগে থেকে জানতে পেরে তার কর্মস্থলে না গিয়ে গোপনে বাসার আশেপাশে অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে বিকেলে বাসার সবাই অন্যত্র চলে গেলে সন্ধ্যায় বাসার মেইন গেইট দিয়ে প্রবেশ করে হাতুড়ি দিয়ে নাসরিন আক্তারের রুমের তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে আলমারির লক ভেঙ্গে স্বর্ণালঙ্কারসহ টাকা-পয়সা লুট করে নেয়। তারপর হঠাৎ তার নানী মৃত আয়শা বেগম (৬১) বাসায় চলে আসলে সে ভয় পেয়ে যায়। তখন সে গেঞ্জির কাপড় দিয়ে তার নানীর গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
তারপর আসামী মো. রাকিব হত্যার কাজে ব্যবহৃত ভাঙ্গা তালা ও গেঞ্জির কাপড়ের অংশবিশেষ চাষাঢ়া মোড়ে ময়লার ড্রেনে ফেলে দেয় এবং লুট করা স্বর্ণ কালিবাজারের স্বর্ণ পট্টিতে ভাসমান অজ্ঞাত ব্যক্তির নিকটে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয় এবং কেউ যেন সন্দেহ না করে সেজন্য দ্রুত বাসার আশেপাশে অবস্থান নিয়ে অবস্থা পর্যবেক্ষন করতে থাকে।
গ্রেফতারকৃত আসামি মো. রাকিব হত্যাকান্ডের ঘটনার সঙ্গে নিজের সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মোহাম্মদ মোহসিনের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মামলার পরবর্তী তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।