মুক্তিযোদ্ধাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও জমি জবর দখলের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৭:৫৩ | অনলাইন সংস্করণ
কক্সবাজার প্রতিনিধি
চকরিয়ায় সন্ত্রাসীদের ভয়ে দিন যাপন ও নিজ খতিয়াভুক্ত দখলীয় জমিতে যেতে পারছে না মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। খুটাখালী শিয়াপাড়া এলাকার আলী হোসেন এর ছেলে জসিম উদ্দিনসহ তার নিজস্ব বহিনীরা দিনে দুপুরে অস্ত্রসহ জমিতে কাজ করছে বলে অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগীরা জানান, নিজের জমিতে যেতে এখন ভয় হয়। তারা অস্ত্রসহ জমিতে বসে থেকে কাজ করাচ্ছে। এখন আমরা গেলে আমাদের মেরে ফেলবে, তাই প্রশাসনের আশ্রয় নিয়েছি।
এদিকে, কক্সবাজারের চকরিয়া থানা কমান্ডার খুটাখালীর বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব ফরিদ আহমদকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও পারিবারিক ভূমি জবর দখল চেষ্টার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, কক্সবাজার জেলা ও বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার।
বুধবার (২২ফ্রেরুয়ারি) বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব ফরিদ আহমদ এর ছেলে মোহাম্মদ হাসান ফারুক।
তিনি বলেন, আজ অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চকরিয়া উপজেলা ইউনিট কমান্ড এর সাবেক কমান্ডার। তিনি ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। আমরা বাবার সমস্ত সম্পদের ওয়ারিশদার হই। আমাদের পরিবারের বিভিন্ন জমি-জমা আমি ও আমার আপন চাচা পরিবারের সকলের পক্ষে দেখাশুনা করে আসছি। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের বি.এস খতিয়ান নং- ৫৬৭, ৫০১, ৫০০, ৩৫৯, ৪২৯, ৪৬৪/১, ৩৯৮, ৪০০, ৪০১, ৪০২, ৪০৩, ৪৫২ প্রায় ১১টি খতিয়ানের প্রায় ২০ একর জায়গা ভোগ দখল করে আসছি। কিন্তু সম্প্রতি স্থানীয় সন্ত্রাসী ও বহু মামলার আসামী জসিম উদ্দিন গং, পিতা- আলী হোসেন, ঠিকানা- শিয়াপাড়া, খুটাখালী, চকরিয়া, কক্সবাজারের নেতৃত্বে ১৫/২০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল আমাদের দখলী জমি তাদের দখলে নেয়ার অপচেষ্টা চালায়। পরবর্তীতে তাদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিষয়ে আইনের উপর শ্রদ্ধাশীল ও ভরসা করে আমরা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, কক্সবাজার-এ আমার চাচা এম জাফর আহমদ বাদী হয়ে জসিম উদ্দিন গং এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ২০৬৮/২০২২ইং। এরই ধারাবাহিকতায় আদালত জসিম উদ্দিন গং কে আমাদের দখলীয় জমিতে না যাওয়ার জন্য এবং উক্ত জমিতে কোন কাজ না করার জন্য গত গত বছরের ২১ নভেম্বর ১৪৪ ধারা জারী করেন। কিন্তু জসিম উদ্দিন ও তার দল আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে আমাদের পারিবারিক দখলীয় জমিতে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে কাজ চালাতে চেষ্টা করে। উক্ত কাজে আমরা বাঁধা দিলে আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চকরিয়া উপজেলার সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আলহাজ্ব ফরিদ আহমদ এর নাম ধরে অশ্রাব্য ও অকথ্য ভাষায় মোবাইল ফোনে গালিগালাজ করে, যার ফোন রেকর্ড আমাদের কাছে সংরক্ষিত আছে এবং উক্ত রেকর্ড বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়ায় ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রচারিত হয়। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এ ধরণের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও অপমান করা অত্যন্ত দুঃখের ও অবমাননাকর। এই অপমান ও অবমাননা শুধু আমার এবং আমাদের পরিবারের নয়, দেশের সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ও মুক্তিযোদ্ধের স্বপক্ষের মানুষের বলে আমরা মনে করি। উক্ত বিষয় নিয়ে জসিম উদ্দিন গং এর সাথে আলোচনায় বসলে তারা আমার এবং পরিবারের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। অন্যথায় উক্ত জমি জোরপূর্বক তার দখলে নিবে মর্মে হুমকী প্রদর্শন করে।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কক্সবাজার জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী বলেন, যারা সরকারের নাম ভাঙ্গিয়ে দখলবাজিতে জড়িত তাদের সমাজ থেকে, দল থেকে বয়কট করতে হবে। একজন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে হেনস্থা করা মানে আমাদের পরিবারের সকলকে হেনস্থা করা। আমরা প্রশাসনের কাছে এর যথাযথ বিচার চাই।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড এর সাধারণ সম্পাদক এম নুরুল হাকিম নকী বলেন, খুটাখালী এলাকার নিজস্ব খতিয়ানের জমি চাষ করে আসছিল বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ আহমদের পরিবার। মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ আহমদ মারা যাওয়ার পর স্থানীয় কিছুু সন্ত্রাসী বাহিনীর নজর পড়ে এসব জমির উপর। তারই প্রেক্ষিতে চকরিয়ার খুটাখালীর বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ আহমদের পরিবারের প্রায় ২০ একর মৎস্য ঘের জবর-দখল নিতে পায়তারা করছে খুটাখালী শিয়াপাড়া এলাকার আলী হোসেন এর ছেলে জসিম উদ্দিনসহ তার নিজস্ব বহিনীরা। সে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে অশ্রাব্য ভাষা গালিগালাজও করেছে । এর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। কাল জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। প্রয়োজনে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবো। এমন অপমানজনক কথা বলার জন্য তাকে আইনের আওতায় আনা দরকার।
মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ আহমদ এর ভাই জাফর আহমদ জানান, আমাদের পারিবারিক সম্পত্তিতে হঠাৎ করে স্থানীয় জসিম বাহিনী রাতের আঁধারে জমিতে কাজ শুরু করে দিয়েছে। তারা রাতের আধাঁরে জমিতে কাজ করে সেই জমি দখলে নিতে চায়। কিন্তু এই জমি আমাদের নামে বিএস সৃজিত আছে এবং আমরা দখলে আছি।
জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জসিম উদ্দিনসহ স্থানীয় জবর দখলকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। কিন্তু তা অমান্য করে হামলা করে জমি দখল করতে গত ২০ নভেম্বর রাতের আঁধারে জমিতে গিয়ে কাজ শুরু করে তারা। এসময় নিজেদের পৈত্রিক জমি দখলের প্রতিবাদ করায় মুুক্তিযোদ্ধার ভাইপো শফিকুর রহমানকে মারধর করেছে বলেও জানা গেছে।