সমুদ্র তলদেশের ৮০ শতাংশের বেশি প্লাস্টিকের দখলে
প্রতি বছর ১ লাখ সামুদ্রিক প্রাণী প্লাস্টিকের কারণে মারা যায়
প্লাস্টিকদ্রব্য পঁচতে প্রায় ৭০ বছর সময় লাগে
প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২০:২৭ | অনলাইন সংস্করণ
কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজার ও রোহিঙ্গা শিবিরে প্রতিদিন টনটনে প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। যে কারণে পরিবেশ নষ্টের পাশাপাশি ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছে অপূরণীয়। প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ সামুদ্রিক প্রাণী প্লাস্টিকের কারণে মারা যায়। প্লাস্টিকদ্রব্য পঁচতে প্রায় ৭০ বছর সময় লাগে। সমুদ্র তলদেশের ৮০শতাংশের বেশি দখল করে আছে এই প্লাস্টিক। জীববৈচিত্র্য বাঁচাতে হলে সকল ধরণের প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও সিসিএনএফ এর আয়োজনে মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা আরো বলেন, কক্সবাজারের প্রধান নদী বাঁকখালী পলিথিনে ভরপুর। পৌর এলাকায় যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। সারাদেশ যেন আবর্জনার ভাগাড়। সরকার প্লাস্টিক বিরোধী আইন করেছে। কিন্তু আইনের বাস্তবায়ন নাই। পলিথিন কারখানাগুলো অবৈধভাবে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। অবিলম্বে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। সরকারের প্রণীত আইন বাস্তবায়ন করা হোক। বিকল্প সৃষ্টির মাধ্যমে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। এজন্য সবমহলের সদিচ্ছা থাকা দরকার ।
আয়োজিত মানবন্ধনে বক্তব্য রাখেন, সিসিএনএফের কো-চেয়ার ও কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী, সিসিএনএফের কো চেয়ার ও পালসের প্রধান নির্বাহী আবু মোর্শেদ চৌধুরী, মুক্তির প্রধান নির্বাহী বিমল চন্দ্র দে সরকার, বাপা সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী, কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক কবি রুহুল কাদের বাবুল, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মকবুল আহমেদ, পালস বাংলাদেশ সোসাইটির প্রধান নির্বাহী সাইফুল ইসলাম চৌধুরী কলিম, জলবায়ু কমিটির নেতা কামাল উদ্দিন রহমান পেয়ারু, কক্সবাজার জেলা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি ফরিদুল আলম শাহীন, কক্সবাজার উপকূলীয় সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি স.ম ইকবাল বাহার চৌধুরী, বাপার সাংগঠনিক সম্পাদক এইচএম নজরুল ইসলাম, ছায়ানীড়ের কল্লোল দে, স্বপ্নজালের শাকির আলম।
কোস্ট ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক ও সিসিএনএফের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম ও মিজানুর রহমান বাহাদুরের যৌথ সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সিসিএনএফের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন এনজিওর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
স্বাগত বক্তব্যে আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, "বাংলাদেশের সুনীল সম্পদ রক্ষা করতে হলে আমাদের প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করা প্রয়োজন, এর জন্য চাই সরকারি আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন।"
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, "জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) প্রধান ফিলিফ গ্রান্ডি এবং আইএসসিজি এর প্রধান সমন্বয়কারী অর্জুন জেইনকে আমরা সিসিএনএফ এর পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্লাষ্টিক ব্যবহার বন্ধে আহবান করেছি। আশা করি উনারা এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন করবেন। জাতিসংঘের যেসব প্রতিষ্ঠানসমুহ, আইএনজিও, জাতীয় এবং স্থানীয় এনজিও এই বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন তাদেরকে আমরা পুরস্কৃত করবো।"
ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, "গবেষণা অনুযায়ী একটি প্লাস্টিকদ্রব্য পঁচতে প্রায় ৭০ বছর সময় লাগে। ততক্ষণে জমির উর্বরতা ধ্বংস করে দেয়। প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে যথাযথ আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি তিনি আহবান জানান ফজলুল কাদের চৌধুরী।
তিনি বলেন, "প্লাস্টিক মাটির নিচে থাকলে বৃষ্টির পানি নিচে যেতে পারে না। সাম্প্রতিককালে আমরা দেখতে পাচ্ছি কক্সবাজারের অধিকাংশ এলাকার পানি লবণাক্ত হয়ে গেছে। ভয়াবহতা থেকে জাতিকে বাঁচাতে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।"
বিমল চন্দ্র দে সরকার বলেন, “সমুদ্র তলদেশের প্রায় ৮০শতাংশ দখল করে আছে এই প্লাস্টিক, বিজ্ঞানীরা আশংকা প্রকাশ করছেন যে, ২০৩০ সালের দিকে সাগরতলে মাছের চেয়েও প্লাস্টিক পাওয়া যাবে বেশি। আর প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ সামুদ্রিক প্রাণী প্লাস্টিকের কারণে মারা যায়।"
মকবুল আহমেদ বলেন, "প্লাষ্টিক উৎপাদন এবং বিপনন বন্ধ করতে গেলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের আন্দোলনের সাথে সরকারের যারা আইন প্রনয়নকারী এবং নীতিনির্ধারকদের সম্পৃক্ত করা।