রানীনগরে কৃষিতে সবুজ জ্ঞানের সজীব ভ্রমণ

প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৫:৩৮ | অনলাইন সংস্করণ

  নওগাঁ প্রতিনিধি

নওগাঁর রানীনগর উপজেলার ব্যতিক্রমী ভাবনার ‘সুফলা নওগাঁ এগ্রো প্রজেক্ট’। উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের চকাদিন গ্রামে ১৫জন যুবকের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে এ প্রজেক্ট। কৃষিতে নতুনত্ব নিয়ে আসতে, কৃষিতে বিল্পব ও বিকাশ ঘটাতে এবং জ্ঞান আহরণে সম্প্রতি ১০ জন কৃষি অনুরাগী উদ্যোক্তার অংশগ্রহণে জেলার কয়েকটি স্থানে (বাগানে) ভ্রমণ করেছেন তারা। 

ব্যতিক্রমী ভাবনার সুফলা নওগাঁ এগ্রো প্রজেক্ট উচ্চমূল্যের ফল-ফসল চাষাবাদ এবং নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে সফলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। নতুন উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন সফল কৃষি প্রজেক্ট ভ্রমণের মাধ্যমে জ্ঞান আহরণ এবং নতুন নতুন কৃষি আইডিয়া (ধারণা) সংযোজনের লক্ষ্যে আয়োজন করে ‘সবুজ জ্ঞানের সজীব ভ্রমণ’। ভ্রমণ স্থান নির্ধারণ করা হয় জেলার সাপাহার উপজেলার বরেন্দ্র এগ্রো পার্ক ও জবইবিল, পত্নীতলা উপজেলার দিবর দীঘি এবং পোরশা উপজেলার নিতপুর ও পোরশা মাদ্রাসা।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) সকাল ৭টায় মাইক্রোবাস যোগে রওয়ানা হয়ে ৮টায় জেলার পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর বাজারে সকালের নাস্তা। প্রথম স্থান নজিপুরের মেসার্স বিসমিল্লাহ্ হ্যাচারী। হ্যাচারিতে হাঁসের বাচ্চা ফুটানোর আধুনিক কলা কৌশল, বাচ্চা বিপণন এবং হ্যাচারি ব্যবসার সমস্যা ও সম্ভাবনা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে ধারণা নেন তারা।

এরপর সেখান থেকে দীবর দীঘি ও বরেন্দ্র এগ্রো পার্ক। বরেন্দ্র এগ্রো পার্কে পলি নেট হাউসে উচ্চমূল্যের ফুল-ফসলের চাষাবাদ উদ্যোক্তাদের চিন্তার নতুন খোরাক জুগিয়েছে। বরেন্দ্র এগ্রো পার্কে আধুনিক কৃষির বিভিন্ন অনুষঙ্গ জ্ঞানের পরিধি অনেক বাড়িয়েছে। এরপর দুপুর ২টার দিকে পোরশার বিভিন্ন আমবাগান ভ্রমণ। বরেন্দ্রের ভূমিতে আধুনিকভাবে আম চাষের নতুন কলা-কৌশল তারা শেখার চেষ্টা করছেন। দিন শেষে সন্ধ্যায় আবারও নীড়ে ফেরা।

অংশগ্রহণকারী নতুন উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, এমন ব্যতিক্রমি আয়োজনে অংশগ্রহণ করে আমি কৃষির অনেক নতুন নতুন বিষয় জেনেছি। যা চাষাবাদ করার ক্ষেত্রে আমাকে অনেক সফলতার দিকে নিয়ে যাবে।  

সুফলা নওগাঁ এগ্রো প্রজেক্টের অর্থ সম্পাদক মুকাদ্দেস সরদার বলেন, এবার দিয়ে দুইবার আমরা এমন আয়োজন করেছি। আগামীতে আরো বড় পরিসরে এই আয়োজন করা আমাদের একান্ত ইচ্ছা আছে। আমরা কৃষকদের আনন্দের মাধ্যমে কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। 

এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন কৃষি উদ্যোক্তা, সনাতন ধান গবেষক ও কৃষি গুরু হাসান জামান সিদ্দিক। তিনি বলেন, সুফলা নওগাঁ প্রজেক্টের এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ সত্যি প্রশংসনীয়। বিভিন্ন বাগান দেখে নতুন ধারণা হয়েছে। কৃষকদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে এই আয়োজন আরো বড় আকারে হওয়া দরকার। 

এমন ব্যতিক্রমী আয়োজনের আয়োজক সুফলা নওগাঁ এগ্রো প্রজেক্টের পরিচালক হাবিব রতন। তিনি বলেন, উদ্যোক্তাদের জন্য এমন আয়োজন খুবই ফলপ্রসু বলে আমরা মনে করি। ২০১৯ সালের সূচনা লগ্নে সম্মিলিত কৃষি উদ্যোগের সূচনা হয়েছিল। সেসময় লেবু ও মালটা চাষের মাধ্যমে প্রজেক্ট এর অভাবনীয় সাফল্য শুরু হয়। এই প্রজেক্টের সাফল্যে রানীনগরে প্রায়ই ১০০ একর জমিতে লেবু ও মাল্টা বাগান সম্প্রসারিত হয়েছে। প্রজেক্ট এর নতুন নতুন ব্যতিক্রমী লাভজনক উচ্চমূল্যের ফল উৎপাদন কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ এবং উদ্যোক্তা তৈরিতে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

তিনি বলেন, এ প্রজেক্টর সেবা সম্প্রসারণমূলক কাজ কৃষকদের ভালোবাসা ও বিশ্বাসের কেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়েছে। নতুন কৃষি উদ্যোক্তারা স্বাচ্ছন্দে ও আনন্দের সঙ্গে হাতে-কলমে কৃষির আধুনিক কলাকৌশল শিখতে পারেন। এমন আয়োজন উদ্যোক্তাদের জন্য খুবই ফলপ্রসু হবে বলে আমরা মনে করি। আমরা পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আগামীতে উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করবো।