নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে জমি সংক্রান্ত বিরোধে দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে বলে নিহতদের পরিবারকে আশ্বস্ত করেছেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম।
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর পাঁচপাড়া এলাকায়
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে নিহতদের বাড়িতে গিয়ে শোকার্ত পরিবারের সাথে কথা বলে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের আশ্বাস দেন তিনি। এ সময় সঙ্গে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে। দ্রুত তাদেরকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জমিসংক্রান্ত দীর্ঘদিনের বিরোধের জের ধরে রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চাচা মহিউদ্দিনের সঙ্গে আসলাম সানীর বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে চাচাতো ভাই মোস্তফার নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন আসলাম সানী, শফিকুল ইসলাম রনি ও রফিকুল ইসলামকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে আহত করে। পরে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে দুই সহোদর আসলাম সানী, শফিকুল রনিকে মৃত ঘোষণা করে চিকিৎসক। আহত রফিকুল ইসলাম ঢামেক হাসপাতালে মারা গেছেন এমন খবরে রোববার রাতে ঘাতকদের বাড়িতে আগুন দেয় বিক্ষুব্দরা।
নিহত দুই সহোদরের মা জহুরা বেগম বলেন, ‘ওরা আমার বুক খালি করেছে। আমার দুই ছেলেকে ওরা মেরে ফেলেছে। মেজ ছেলে হাসপাতালে ভর্তি। ওরা বংশ নির্বংশ করতে চেয়েছিল। ওদের বিরুদ্ধে কথা বলার লোক যেন না থাকে, সেটা চেয়েছিল। এখন আমার নাতি-নাতনিদের কী হবে? ওরা কাকে বাবা বলে ডাকবে?’
নিহত আসলাম সানির স্ত্রী সোনিয়া আক্তার বলেন, ‘ওরা শুধু জায়গা-জমি চায়। জায়গা-জমির জন্য খুন করেছে। আমি বিচার চাই। ওরা প্রায় সময় আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দিতো। আমার চাচাতো ভাসুর মোস্তফা ও তার পরিবারের অন্য সবাই মিলে পরিকল্পনা করে হামলা চালিয়ে আমার স্বামী ও দেবরকে খুন করেছে।’
গুরুতর আহত রফিকুল ইসলামের স্ত্রী সাদিয়া আক্তার বলেন, ‘বাড়ির সামনে ড্রেনের কাজ চলছে। সেই ড্রেনে পাইপ দিতে চেয়েছিল আমার ভাসুর আসলাম সানি। এ নিয়ে তার চাচাতো ভাই মোস্তফা ও তার পরিবারের লোকজন তার সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে মোস্তফার নেতৃত্বে মামুন, মাফিজুল রহমান, মারুফ, চাপাতি, রামদা ও লোহার রড নিয়ে আমার ভাসুরকে (আসলাম) কুপিয়ে রক্তাক্ত করে। এ কথা শুনে আমার স্বামী ও দেবর সেখানে ছুটে যায়। তাদেরও কুপিয়ে রক্তাক্ত করেছে। পরে তাদের উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক আমার ভাসুর ও দেবরকে মৃত ঘোষণা করে এবং আমার স্বামীকে গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসা দেওয়া হয়। রাতে তার অপারেশন শেষ হয়েছে।’
সাদিয়া আরও বলেন, ‘জমি নিয়ে আমার চাচাশ্বশুর ও তার ছেলে মোস্তফাসহ আমাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পূর্ববিরোধ রয়েছে। ওরা আমার স্বামীসহ তার তিন ভাইকে হত্যা করার হুমকি দিয়েছিল। এসব নিয়ে বেশ কয়েকবার আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মূলত সেই বিরোধের জের ধরে আজ পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে হত্যাকাণ্ড করেছে।’