হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় দুই নবজাতকের মৃত্যু, পরিচালক আটক

প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৩, ১৪:০৫ | অনলাইন সংস্করণ

  চাঁদপুর প্রতিনিধি

চাঁদপুরে হাসপাতালের ডাক্তার, নার্সদের ভুল চিকিৎসা, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে নবজাতককে মায়ের পেটে রেখে মার’পেটের উপর জোরে চাপ প্রয়োগ করে নবজাতককে প্রসব করানো ও ভুল ইনজেকশন পুশ করার কারণে একই হাসপাতালে প্রায় একই সময়ে দুই নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় হাসপাতালের পরিচালক ওরফে ওটি বয় মোরশেদ আলমফে নবজাতকদের স্বজনরা মারধর করে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের নিকট সোপর্দ করেছে।

এ ঘটনা ঘটেছে চাঁদপুর শহরের আব্দুল করিম পাটওয়ারী সড়কের এলজিইডি সংলগ্ন স্থানের চাঁদপুর জেনারেল (প্রা:) হাসপাতাল ২য় ও চতুর্থ তলায়।

বুধবার (৮ মার্চ) রাত সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে দুই নবজাতক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপর হাসপাতালের অন্য চিকিৎসকরা পালিয়েছে বলে হাসপাতালে দায়িত্বরত স্টাফরা জানিয়েছেন। খবর পেয়ে রাত ১০টার দিকে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

রাত ৮টার দিকে সিজারের পর হাসপাতালের চতুর্থ তলায় চাঁদপুর শহরের পুরাণ বাজার ১নং ওয়ার্ডের বাকালী পট্টির ভ্যান চালক শাহজাহান সর্দারের তিন দিন বয়সী নবজাতক চিকিৎসা সেবা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করে। আর রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিনিয়র নার্স আকলিমা ও ওটি ইনচার্জ মোরশেদ আলম নরমাল ডেলিভারি করানোর সময় স্থানীয় বকাউল বাড়ী রোডের সন্তু বেপারীর নবজাতকের মৃত্যু হয়।

ভ্যান চালক শাহজাহান বলেন, সোমবার (৬ মার্চ) রাত ৮টায় এই হাসপাতালে তার স্ত্রী সুফিয়া বেগম এর সিজারের মাধ্যমে কন্যা শিশুর জন্ম হয়। জন্মের পর থেকে সুস্থ্যই ছিল। বুধবার (৮মার্চ) দুপুরে বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়লে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। চিকিৎসক দেখে বলেছে পেটে গ্যাস জমেছে। ঔষধ দেয়ার পরও সুস্থ হয়নি। পরে রাত সাড়ে ৭টায় ডাক্তার গফুরের উপস্থিতিতে নার্স ইনজেকশন পুশ করার পর নবজাতক মারা যায়। 

তিনি অভিযোগ করে বলেন, শুধুমাত্র আমার শিশুরই মৃত্যু হয়নি। আমার স্ত্রীর অবস্থাও খারাপ। ব্যথার যন্ত্রণায় চিৎকার করেও নার্সদেরকে পাওয়া যায়নি। তাদের ফার্মেসী বন্ধ থাকে, কোন ঔষধ পাওয়া যায় না। 

শাহজাহানের আত্মীয় জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, সুফিয়ার প্রথম সন্তানের পরে দুটি সন্তান জন্মের পর মারা যায়। এটি চতুর্থ সন্তান। অসহায় ও গরীব হওয়া সত্ত্বেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরামর্শে সিজার করে। কিন্তু তাদের অবহেলার কারণে বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল না, কসাইখানা খুলে বসেছে। কোন চিকিৎসক নাই, নার্স নাই। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

অপর নবজাতকের পিতা সন্তু বেপারী বলেন, বুধবার (৮ মার্চ) দুপুরে আমার স্ত্রী হীরা আক্তারকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। আমার সন্তান তারা ইচ্ছা করে মেরেছে। আমি তাদেরকে বলেছি নরমাল ডেলিভারিতে সমস্যা হলে সিজার করেন। তাদের হাসপাতালে কোন চিকিৎসক নাই, তারা কোন চিকিৎসক ডেকেও আনে না। হাসপাতালে থাকা আমার স্বজনরা বলেছে পেটের মধ্যে জোরে চেপে ধরে আমার সন্তানকে তারা হত্যা করেছে। 

হীরা আক্তারের বোন জামাতা সফিকুর রহমান বলেন, বিয়ের ১১ বছর পর এই প্রথম সন্তান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সঠিক সেবা দিতে না পারায় নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। মা হীরা এখনো জানেন না তার সন্তান মৃত। তাকে জানানো হয়নি। 

হাসপাতালের পরিচালক ওটি ইনচার্জ মোরশেদ আলম স্বীকার করেন, তিনি ও নার্স আকলিমা হীরার নরমাল ডেলিভারি করেছেন। কিভাবে মৃত্যু হয়েছে এই বিষয়ে আর কিছু বলতে চাননি।

চাঁদপুর সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মোস্তফা জানান, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। শিশুদের অভিভাবকের সাথে কথা বলেছি। তারা আমাদেরকে ঘটনা জানিয়েছে। পরিচালক মোরশেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। ঘটনা তদন্ত করে এবং অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আবদুর রশিদ বলেন, ঘটনাটি আমি জানতে পেরেছি। অভিভাবকদের সাথে কথা বলা হবে এবং তাদের আভিযোগের ভিত্তিতে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।