নওগাঁয় পরকিয়া প্রেমিকের গায়ে আগুন, আটক ১
প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৩, ২২:১৮ | অনলাইন সংস্করণ
নওগাঁ প্রতিনিধি
নওগাঁয় টাকা লেনদেন ও পরকিয়া সম্পর্কের জেরে বুলবুল আহমেদ (৩২) নামে এক যুবককে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (১৩মার্চ) রাত ৮টার দিকে শহরের চকমুক্তার মন্ডলপাড়া (চারা বাগান) মহল্লায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত বুলবুল আহমেদ নীলফামারি জেলার উত্তর দুরাকুটি গ্রামের বাহান উদ্দিনের ছেলে। এ ঘটনায় হাবিব নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। হাবিবের স্ত্রী মোসলেমা পলাতক রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ শহরের চকমুক্তার মন্ডলপাড়া (চারা বাগান) মহল্লায় গত এক বছর থেকে কাজী আব্দুস সামাদ এর বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছিল হাবিব ও তার স্ত্রী মোসলেমা। তাদের দাম্পত্য জীবনে প্রায় ২০ বছরের সংসারে দুই সন্তান রয়েছে। হাবিবের গ্রামের বাড়ি নীলফামারি জেলার উত্তর দুরাকুটি গ্রামে। তবে তার স্ত্রী মোসলেমার বাবার বাড়ি নওগাঁ শহরের
মাস্টারপাড়া মহল্লায়। নিহত বুলবুল আহমেদ ও হাবিব দুজনের মধ্যে সম্পর্ক চাচাতো ভাই।
সোমবার রাত ৮টার দিকে কাজী আব্দুস সামাদ এর বাসার পেছনে হাবিব ও মোসলেমার সাথে বুলবুল আহমেদ এর তর্কবিতর্ক হচ্ছিল। এক সময় গায়ে আগুন নিয়ে চিৎকার দিয়ে জীবন বাঁচাতে দৌঁড়ে পাশের ডোবা ভেবে কচুরিপানায় ঝাঁপ দেন বুলবুল।
তবে সেখানে পানি ছিল না। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে গিয়ে বস্তা ও পাশে পড়ে থাকা ইটের গুড়ি (রাবিশ) দিয়ে আগুন নেভায়। তাকে উদ্ধার করে রাত ৯টার দিকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাতে রংপুর মেডিকেল
কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে রেফার্ড করে ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যান বুলবুল। ঘটনার পর থেকে মোসলেমা পলাতক রয়েছে।
বুলবুলকে এর আগে শহরের বাসীন্দারা কখনো দেখেনি। সন্ধ্যায় ওই মহল্লার রাস্তা ও গলিতে একটি প্রেমের ঘটনা কাগজে লিখা অবস্থায় মোসলেমা ও বুলবুলের ছবিসহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এতে বুঝা যায় তাদের দুজনের মধ্যে পরকিয়ার সম্পর্ক ছিল। ওই কাগজে-‘মোসলেমাকে বিভিন্ন সময় বুলবুল টাকা দিয়েছে এবং তাকে নিয়ে সংসার করতে চাই সেসব বিষয় লিখা আছে।’
হাসপাতালে জরুরি বিভাগে গুরুত্বর আহত অবস্থায় বুলবুলকে বলতে শুনা যায় ‘মোসলেমা ও হাবিব তার গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।’
কাজী আব্দুস সামাদের স্ত্রী শাহারা বেগম বলেন, গত এক বছর ধরে মোসলেমা ও হাবিব আমাদের বাসায় ভাড়া ছিল। রাত ৮টার দিকে গায়ে আগুন নিয়ে দৌঁড়ে দোকানের সামনে দিয়ে একজন কচুরিপানার উপড়ে লাফ দেয়। পরে কয়েকজন আগুন নিভিয়ে
আহত ছেলেকে হাসপাতালে নেয়।
স্থানীয় মান্নান নামে একজন বলেন, ভালবাসার গল্প একটি কাগজে লেখা ছিল। এছাড়া নিকাহনামা ফটোকপি কাগজের সাথে মোসলেমা ও বুলবুলের ছবিও লাগানো ছিল। এতে বুঝা যাচ্ছে স্বামী সংসার থাকার পরও দুজনের মাঝে পরকিয়ার সম্পর্ক ছিল।
স্থানীয় রনি ও সাগর হোসেন বলেন, ঘটনা জানার পর হাসপাতালে আহতকে দেখতে যায়। এসময় ডাক্তাররা তার গায়ে মলম ও ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিচ্ছিল। তার কাছে আমরা জানতে চাইলে বলে মোসলেমা ও বুলবুল তার গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।
নওগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান বলেন, কেরোসিন ঢেলে গায়ে আগুন লাগানোর ঘটনার সত্যতা আছে। হাবিব-মোসলেমা ও বুলবুলের সাথে টাকার লেনদেনের একটি বিষয় ছিল। তাকে টাকা দিবে মর্মে বাড়িতে ডেকে নেওয়া হতে পারে। পরে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে বুলবুলের গায়ে কেরোসিন দিয়ে তারা আগুন লাগিয়ে দেয়। সে জীবন বাঁচাতে দৌঁড় দেয়।
তিনি বলেন, স্থানীয়রা তাকে আহতাবস্থায় নওগাঁ হাসপাতালে নেয়। সেখান থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। পরে তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হলে যাওয়ার পথে মারা যায়। তবে পরকিয়া সম্পর্ক থাকতে পারে। নিহত বুলবুল ও
হাবিব তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাই। ঘটনার পর হাবিবকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় নিয়মিত মামলা হবে।