রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছে: ধর্ম প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৩, ১৩:২১ | অনলাইন সংস্করণ

  চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেছেন, বর্তমানে আমাদের দেশে অনেকেই বলেন, জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। গতবছর হজ্বে সৌদি আরবে দুইটা ডিম ও ডাল দিয়ে ভাত খেতেই খরচ হয়েছে ৩৫৬ টাকা। এবছর তা আরও বেড়েছে। অথছ এই পরিমাণ টাকায় আমাদের দেশে তিন বেলা ভালোমতো খাবার খাওয়া সম্ভব। আল্লাহর কাছে এর চেয়ে আর কি শুকরিয়া আদায় করবেন। আজকে পাকিস্তানে এক ডলারের মূল্য ২৫৬ রুপি, অপরদিকে বাংলাদেশে এক ডলার সমান ১০২ টাকা। আর কতো শান্তি চাই আমরা? আমরা শুকরিয়া আদায় করি না, অথচ জিনিসপত্রের দাম বাড়লে সমালোচনা করে। জিনিসপত্রের দাম তো বাড়বেই, কারণ আমাদের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। যতটুকু দাম বেড়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না হলে তা বাড়তো না। 

বুধবার (১৫ মার্চ) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনামূলক আন্তঃধর্মীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় সংলাপের আয়োজন করে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প। 

এসময় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, দুনিয়া এগিয়ে যাচ্ছে। আজকে লন্ডনে বা আমেরিকায় যান, দেখতে পাবেন সেখানে বিদুৎ দিতে পারছে না। মাইনাসের নিচে তাপমাত্রা হওয়ার পরেও রাতে তারা হিটার চালাতে পারছে না, বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকার কারণে। অথচ আমরা দিনরাত সবসময় বিদুৎ সরবরাহ পাই। দিনরাত বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে গিয়ে সরকারকে ব্যাপক ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। সরকার উচ্চমূল্য দিয়ে গ্যাস ও জ্বালানি তেল কিনছে। 

প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, আ.লীগ ক্ষমতায় আসার আগে সাম্প্রদায়িক লোকজন বলেছিল, আ.লীগ মানেই হিন্দু ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত। তারা নির্বাচিত হলে দেশের সকল মসজিদ মন্দির হয়ে যাবে বলে প্রচার করেছিল। কিন্তু চার মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলেও কোন ধর্মের বিরুদ্ধে কোন কাজ করেননি আ.লীগ সরকার।
 
তিনি আরও বলেন, আমি অনুরোধ করব, আজকের সংলাপে যা আলোচনা হলো এসব বিষয় শুক্রবারে জুম্মার নামাজে ২ মিনিট করে বললেও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকবে। মসজিদ মসজিদে আলোচনা করলে জনসাধারণের ভ্রান্ত ধারণা উঠে যাবে। আলেম ওলামারা আমাদের মাথার মনি। আপনাদের মাধ্যমে জনগণের কাছে শান্তির বাণী পৌঁছে যাবে। পবিত্র কুরআনে যা আছে, তা পালন করলে সবাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে থাকতে পারবে। 

সংখ্যালঘু প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সংখ্যালঘু শব্দটিই প্রধানমন্ত্রী সহ্য করতে পারেন না। দেশের স্বাধীনতায় সবার অবদান রয়েছে। সবাই মানুষ, সকলের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে এই দেশ। সকলের নিকট একটি আবেদন, সম্প্রীতি বজায় রাখতে করণীয় সবকিছু বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব সকলের। প্রান্তিক পর্যায়ে সকলের কাছে বিষয়গুলো উপস্থাপন করতে হবে। এই দায়িত্ব পালন না করলে কেয়ামতের দিন জবাব দিতে হবে। 

ফরিদুল হক খান এমপি বলেন, চায়ের স্টলে আলোচনা হয়, সরকার কি দিয়েছে? বিরোধী দল এসব শুনে আরও খুশি হয়। কিন্তু আমরা সবাই কিছু না কিছু পাচ্ছি। না স্বীকার করলে তা অন্যায় হবে। বয়স্ক ভাতা নেয়ার লোক খুঁজে পাওয়া যায় না, বিধবা ভাতা, উপবৃত্তি, জেলে, কামার-কুমারদের জন্য ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, সারে ভর্তুকি দেয়া হয়েছে ২৮ হাজার কোটি টাকা। এসব অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। 

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী ৩৬ বছর ও গত ১৪ বছরের উন্নয়ন রয়েছে আমাদের চোখের সামনে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এভাবেই চলতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের অগ্রযাত্রা এগিয়ে নিতে সকলকে কাজ করতে হবে। ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে কোন কাজ হলে তা প্রতিহত করা আপনাদের দায়িত্ব। পবিত্র আমানত রক্ষা করার দায়িত্ব নিতে হবে। আগামীতেও ইনশাআল্লাহ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

তিনি আরও বলেন, আমােদরকে সজাগ থাকতে হবে। সস্তা রাজনৈতিক ফায়দা নিতে অনেকেই ইসলাম ধর্মের অপব্যাখা প্রদান করে, সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ায়। গতবছরের তুলনায় এবার হজ্বে ৬০ হাজার টাকা বেড়েছে। তবে এবার যারা যাচ্ছে তাদের জন্য সোনায় সোহাগা। কারণ অনেক আরামে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে সেবার মান বেড়েছে, তাই টাকার পরিমাণও বেড়েছে। ওলামাদের জন্য প্রশ্ন, হজ্ব কারা করবে? যাদের সার্মথ্য রয়েছে, তারা যাবে। বিষয়টি আমাদের বুঝতে হবে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারাবিশ্বে বেড়েছে। গতবছর হজ্ব যাত্রীদের ৪৭ হাজার করে টাকা করে ফেরত দেয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁনের সভাপতিত্বে সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ফেরদৌসী ইসলাম জেসী, পুলিশ সুপার এএইচএম আব্দুর রকিব, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব রুহুল আমিন। 

সংলাপে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প পরিচালক আব্দুল্লাহ আল সাহিন, হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক হানিফ মো. আব্দুল কাদের, চাঁপাইনবাবগঞ্জ আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ ড. এমরান হোসেন, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ডাবলু কুমার ঘোষ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি শহিদুল হুদা অলক, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন, শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, ভোলাহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রাব্বুল হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রওশন আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. আব্দুস সামাদ।