আমাদের প্রতিদিনের জীবনে বিজ্ঞান ওতপ্রোতভাবে জড়িত: ড. সেঁজুতি সাহা
প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৩, ২৩:২৩ | অনলাইন সংস্করণ
শওকত আলী, চাঁদপুর
সম্পন্ন হলো চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের দু’দিনব্যাপী ‘এক মুঠো বিজ্ঞান’ কর্মশালা। হাইমচরের বাজাপ্তী রমনী মোহন উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় উপজেলার ছয়টি বিদ্যালয়ের মোট ৫০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। কর্মশালায় শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানের নানা বিষয় আনন্দ সহকারে শিখে।
রোববার (১৯ মার্চ) সকালে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সমাপনী দিন শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বিষয়ক নানা প্রশ্নের উত্তর দেন ফাউন্ডেশনের পরিচালক বাংলাদেশি বিখ্যাত বিজ্ঞানী ড. সেঁজুতি সাহা। প্রশ্নকারীদের পরে পুরস্কার দেয়া হয়। এ সময় অণুজীববিজ্ঞানী ড. সেঁজুতি সাহাকে সান্নিধ্যে পেয়ে শিক্ষার্থীরা উচ্ছসিত হয়ে পড়ে।
‘বিজ্ঞানীদের সাথে মতবিনিময় করে অজানাকে জানার ও অদেখাকে দেখার ফলে শিক্ষার আগ্রহ অনেক বেড়েছে’ বলে অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন কর্মশালায় অংশ নেয়া দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজিদা ইসলাম সূচনা।
বাজাপ্তী রমনী মোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারহানা আক্তার নুহা বলেন, ‘এক মুঠো বিজ্ঞান’ অনুষ্ঠানে অনেক কিছু শিখেছি। স্বপ্ন দেখতাম বিজ্ঞানীদের সাথে দেখা করার, আজ আমার সেই স্বপ্ন পূরণ হলো। কলা থেকে ডিএনএ পরীক্ষা আমাকে অভিভূত করেছে।
নীলকমল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহবুবুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানীদের সান্নিধ্যে আসবে তা কখনো কল্পনায় ছিলো না। অণুজীববিজ্ঞান নিয়ে হয়তো শহরের শিক্ষার্থীরা জানে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন শিক্ষনীয় অনুষ্ঠান করায় ড. সেঁজুতি সাহাকে ধন্যবাদ জানাই। ভবিষ্যতেও এমন অনুষ্ঠান করতে তিনি আহ্বান জানান।
বর্ণিল এ সমপানী অনুষ্ঠানে পাঁচশতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। অনুভূতি প্রকাশ করা শিক্ষার্থীদের জ্ঞানলব্ধ প্রশ্ন শুনে আগত অতিথি, শিক্ষকবৃন্দ ও অভিভাকরা আপ্লুত হয়ে পড়েন। শিক্ষার্থীদের সবার প্রশ্নেই নিজেদের বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্নের কথা উচ্চারিত হয়। শিক্ষার্থীদের আগ্রহ দেখে ড. সেঁজুতি সাহা ভবিষ্যতে আরো সেশন করতে উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সবশেষে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেয়া হয়।
‘সবার জন্য বিজ্ঞান সংলাপ এবং মতবিনিময়ে’ ড. সেঁজুতি সাহা নিজের বিজ্ঞানী হওয়ার গল্প ও অণুজীব বিজ্ঞানীদের কেনো সংক্রামক রোগের গোয়েন্দা বলা হয় এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অবগত করেন। ড. সেঁজুতি সাহা বলেন, আমাদের প্রতিদিনের জীবনে বিজ্ঞান ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর বিজ্ঞানীরা তোমাদের মতোই মানুষ। বিজ্ঞানকে ভয় পাওয়া যাবে না। বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে। জানার আগ্রহ থাকতে হবে। প্রত্যেকের মনে রাখতে হবে, শিক্ষার কোনো শেষ নেই। যখন আমরা অনেক কিছু শিখবো তখন নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত নিতে পারবো।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সবাইকে ভালোভাবে পড়াশোনা করতে হবে। যে কোনো কিছু করার পূর্বে সার্বিক চিন্তা করে কাজ করতে হবে। নিজের দ্বারা যেনো অন্যের ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যে কোনো প্রয়োজনে অন্যের সহযোগিতা নিতে হবে। তবেই জীবনে ভালো কিছু করা সম্ভব। ড. সেঁজুতি সাহা উৎসুক শিক্ষার্থীদের নিজেদের গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানী হতে উদ্বুদ্ধ করেন।
তিনি বলেন, অণুজীববিজ্ঞানী হতে হবে এমন নয়, তবে এ বিষয়ে সবারই ধারণা থাকা দরকার।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চাই থোয়াইহলা চৌধুরী বলেন, যে দেশ গবেষণায় এগিয়ে সে দেশ ততো এগিয়ে। এ ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু জানতে পারে, শিখতে পারে। হাইমচরের মতো পিছিয়ে পড়া একটি উপজেলায় শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানী হতে উদ্বুদ্ধ করায় চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানাই।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের লাইব্রেরি উন্নয়ন কর্মকর্তা তৃপ্তি সাহা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল মান্নান।
উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আব্দুর রহিম খান, জেলা পরিষদ সদস্য মোঃ খুরশিদ আলম, হাইমচর থানার এএসআই মোঃ নাজমুল হুদা, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হাজী মোহাম্মদ আলী গাজী, সদস্য মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম পাটওয়ারীসহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকবৃন্দ।
সিএইচআরএফ থেকে এই কর্মসূচিতে অংশরত কর্মকর্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞানী ড. ইয়োগেশ হুদা, অফিস এক্সিকিউটিভ মনিমুল হাসান খান, রিসার্চ ম্যানেজার সাকিউল কবির, মাইক্রোবায়োলজিস্ট এন্ড সায়েন্স কমিউনিকেটর নাজিফা তাবাসসুম, সিনিয়র ল্যাবরেটরি টেকনোলজিস্ট দিপু চন্দ্র দাস, সিনিয়র ট্রেনিং অফিসার আদিত্য আরেফিন, মলিকুলার বায়োলজিস্ট এন্ড সায়েন্স কমিউনিকেটর জাসিয়া মুমতাহিনা হাফছা, অ্যাসিস্ট্যান্ট মলিকুলার বায়োলজিস্ট এষা কাজী, জুনিয়র ট্রেনিং অফিসার মুহাম্মাদ সাফিউল আলম মন্ডল এবং ভলান্টিয়ার প্রত্যয় রায়।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন, বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মোঃ সৈয়দ আহাম্মদ পাটওয়ারী। কোরআন তেলাওয়াত করে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নেছমা আক্তার। গীতা পাঠ করে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী চুঁড়া দাস।