সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ হলো পদ্মা সেতুর পাথর বিহীন রেল লাইন নির্মাণ কাজ। বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে প্রকল্পের ৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন হয়। এতে রেল সড়কে মাওয়ার সঙ্গে জাজিরা প্রান্তের সংযোগ হলো।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ৪ এপ্রিল পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচলে কথা রয়েছে। প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-যশোর রেলপথ নির্মাণ শেষে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ যেমন সহজ হবে তেমনি পাল্টে যাবে অর্থনৈতিক দৃশ্যপট। বুধবার পদ্মা সেতুর বাকি সাত মিটার অংশে ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। চায়না থেকে মঙ্গলবার আকাশপথে বাংলাদেশে আসে শেষ স্লিপারটি। রাতে শুরু হয় স্লিপারটির বসানোর কাজ। । তাপমাত্রা কমে আসলে শুরু হয় স্লিপারটির ওপর ঢালাই।
ঢাকা-মাওয়া রেললাইনের ট্র্যাক ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ শওকত আলী বলেন, বিভিন্ন রকম ডাইমেনশনের মেজারমেন্ট করার দরকার ছিল। আমরা সেটি করছি। এ মেজারমেন্টগুলো জিপিএসের মাধ্যমে নেওয়া হয়।প্রকৌশলীরা জানান, ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার মূল সেতু ও দুইপাশের ভায়াডাক্ট সেতু মিলিয়ে পদ্মা রেল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। মূল সেতুতে ১১ হাজার ১৪০টি স্লিপার স্থাপিত হয়েছে। মুভমেন্ট জয়েন্টের ইস্পাতের ৮টি স্লিপার ছাড়া বাকি সবগুলো কংক্রিটের তৈরি। সিএসসি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্টের (সিএসসি) তত্ত্বাবধানে চলছে পদ্মা সেতুর এ রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজ। পদ্মা সেতু ছাড়াও প্রকল্পের মোট ১৭২কিলোমিটার লেভেল ক্রসিংবিহীন রেলপথে ৩২টি রেল কালভার্ট, ৩৭টি আন্ডারপাস এবং ১৩টি রেলসেতুর কাজ শেষ হয়েছে।
পদ্মা মূল সেতু ও ভায়াডাক্টের সিনিয়র প্রকৌশলী জহুরুল হক বলেন, ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার পাথর বিহীন রেললাইন আর বাকিটা ব্যাস্টেট রেললাইন। এরমধ্যে পদ্মা সেতুর ওপরের বাকি থাকা সাত মিটার অংশের ঢালাই শেষ হয়।
পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের মাওয়া-ভাঙ্গা সেকশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আহমেদ বলেন, স্লিপারটি সফলভাবে সেতুর ওপর স্থাপন করা হয়েছে। বুধবার বাকি সাত মিটার ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়। আশা করছি আগামী ৪ এপ্রিল পরীক্ষামূলক ভাবে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রেল চালাতে পারবে।
পদ্মা সেতুর রেললিংক প্রকল্পের পরিদর্শন প্রকৌশলী সঞ্জয় চন্দ্র রায় বলেন, পদ্মা সেতুতে রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হলো। আমরা যারা এ নির্মাণ কাজের সঙ্গেগ যুক্ত ছিলাম তারা খুবই উচ্ছসিত। আমাদের হাতের ছোঁয়ায় দেশের একটি বড় অবকাঠামো নির্মাণ হয়েছে। এটা আমাদের জন্য গর্ব ও গৌরবের। আগামী সপ্তাহে যাত্রীবাহী তিনটি কোচের (বগি) একটি পরীক্ষা রেলগাড়ি (টেস্টরেল) পরীক্ষামূলকভাবে সেতুতে চালানো হবে। পরীক্ষামূলক রেল চলাচলের মধ্য দিয়ে এ কাজের পরিপূর্ণতা পাবো আমরা।
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন আগামী ৪ এপ্রিল সময় নির্ধারণ করেছেন। তার উপস্থিতিতে ভাঙ্গা স্টেশন থেকে পরীক্ষামূলক রেল নিয়ে পদ্মা সেতু পেরিয়ে আমরা মাওয়া স্টেশনে যাবো। ৪ এপ্রিল রেল নিয়ে পদ্মা সেতু পার হওয়া আমাদের আরেকটি মাইলফলক হবে।