সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় চাঁদপুরের তুষার (২০) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। সে মতলব দক্ষিনের খাদেরগাঁও ইউনিয়নের ঘিলাতলী গ্রামের ছেলে। বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন।
জানা যায়, গত ২৬ মার্চ সৌদি আরবে ওমরা হজ্ব পালন করতে যায় তুষার। পথিমধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় সে মারা যায়। সে মনির মজুমদারের প্রথম সংসারের ২ ছেলে ও ১ মেয়ের মধ্যে বড় সন্তান।
ঘিলাতলী গ্রামের ইব্রাহীম ঢালী জানান, গত ১১ মাস আগে তুষার কাজের জন্য সৌদিতে যায়। সেখান থেকেই সে ওমরা করতে মক্কা যাচ্ছিলো। আর এর মধ্যেই এই দুর্ঘটনার সংবাদ পেলাম।
স্থানীয়রা বলেন, তুষারের বাবা ২য় বিয়ে করার পর থেকে তার পরিবারের হাল সে নিজেই কাঁধে তুলে নিয়েছিল। একসময় সে নারায়ণপুর বাজারের মুদি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ নেয়। পরে তার মা কিস্তিতে টাকা তুলে তাকে সৌদি আরবে পাঠায়। বর্তমানে এ দুর্ঘটনায় পুরো পরিবারটির জন্য কালো অধ্যায় শুরু হয়ে গেলো।
এ বিষয়ে মতলব ৩নং খাদেরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন হাওলাদার বলেন, তুষারের মৃত্যুর খবর শুনে তাদের বাসায় গিয়েছি এবং তাদের পরিবারকে শান্তনা দিয়েছি। সে খুব ভালো ছেলে ছিলো। আমি তুষারের বিদ্রেহী আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করছি।
অপরদিকে, সৌদি আরবে ওমরা পালন করতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বাংলাদেশির মধ্যে ইমাম হোসাইন রনির (৪০) বর্তমান বাড়ি গাজীপুরের টঙ্গীতে। চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ গ্রামে তাদের পৈত্রিক বাড়ী। তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই বাড়িতে এখন শোকের মাতম চলছে। স্বজনদের আহাজারিতে চারপাশের বাতাস যেন ভারী হয়ে উঠেছে। স্বজনরা দ্রুত রনির মরদেহ দেশে আনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) সকালে রনির বাড়িতে সরেজমিনে দেখা যায়, আহাজারি করছেন তাঁর স্ত্রী শিমু আক্তার (২৮)। বাবা আব্দুল লতিফ (৭০) ছেলে হারিয়ে অঝোরে কেঁদেই যাচ্ছেন। ছোট ভাইয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা মনে করে বড় বোন হাজেরা খাতুন (৪৫) বারবার মূর্ছা যাচ্ছিল।
নিহত রনির ছোট ভাই হোসাইন আহমেদ জসিম জানান, চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জে তাঁদের পৈত্রিক গ্রামের বাড়ি। টঙ্গীর বড় দেওড়া জামে মসজিদ রোডে বাড়ি করে দীর্ঘদিন যাবৎ তাঁরা সপরিবারে বসবাস করে আসছেন। তিন ভাই, এক বোনের মধ্যে রনি দ্বিতীয়। রনি দেওড়া এলাকায় টেইলার্স ব্যবসা ও মুদি দোকানের কাজ করতেন। ব্যবসায় লোকসান হওয়ার পর পাড়ি জমান অর্থ উপার্যনের জন্য সৌদি আরবে। বিগত ৮ বছর যাবৎ সৌদি আরবে একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। গত দুই মাস আগে ছুটি নিয়ে দেশে এসেছিলেন। ছুটি কাটিয়ে গত শনিবার সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগ করেন।
হোসাইন আহমেদ জসিম আরও বলেন, ‘আগামী ১ এপ্রিল তাঁর কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে হাতে বেশ কিছুদিন সময় থাকায় ওমরা হজ পালন করে সবার জন্য দোয়া করার কথা ছিল ভাইয়ার। সেই আশা আর পূরণ হলো না তাঁর। সরকার তাঁর লাশ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করছি।’
রনির ছোট বোন সীমা আক্তার বলেন, রনি দাদা দুই মাসের ছুটিতে ফেব্রুয়ারি মাসের ৫ তারিখে বাসায় আসেন ও ৭ তারিখে বিয়ে করেন। তাঁর প্রথম স্ত্রী এক সন্তান রেখে তাঁকে তালাক দিয়ে চলে গেছে। দাদার প্রথম পক্ষের একমাত্র ছেলে ইসমাইল হোসেন (১১) স্থানীয় এরাবিক ইনস্টিটিউট নামের একটি মাদ্রাসায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তাঁর ছেলে ইসমাইল দাদার সঙ্গেই বসবাস করছে। এ অবস্থায় ছুটিতে এবার বাড়ি এসে শিমু আক্তারকে বিয়ে করেছিল রনি।