ঈদকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জে জমে উঠেছে তাঁতপল্লী, তৈরি হচ্ছে বাহারি শাড়ি

প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৪৫ | অনলাইন সংস্করণ

  এস, এম তফিজ উদ্দিন, সিরাজগঞ্জ

ঈদকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জের তাঁতপল্লীতে খট খট শব্দ জমে উঠেছে। সেইসাথে ব্যস্ত সময় পার করছে তাঁত শ্রমিকেরা। প্রায় দিনরাত তাঁতের মাকুর শব্দে মুখরিত তাঁত এলাকা। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পবিত্র মাহে রমজান শুরু হওয়ার আগে থেকেই জেলার বিভিন্ন স্থানে তাঁত কারখনায় তৈরী হচ্ছে বেনারশি, সিল্ক, রেশমী, কটন, জামদানি ও কাতান শাড়ি। এতে আধুনিক ও শৈল্পিক কারুকার্যে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে বাহারি নকশা এবং বিভিন্ন সাইজের গামছা ও লুঙ্গিও তৈরী হচ্ছে। বিশেষ করে জেলার তাঁত সমৃদ্ধ বেলকুচি, এনায়েতপুর, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে তাঁতপল্লীতে বাহারী নকশার শাড়ি তৈরী জমে উঠেছে । এছাড়া বৈশাখের আবহে শাড়িতে ঢাক-ঢোল ও  ইলিশসহ বিভিন্ন রকমের দৃষ্টিকাড়া ছবি ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। 

তবে স্থানীয় তাঁত মালিকেরা বলছেন, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন কাপড়ের বাজার তেমন জমে ওঠেনি। এমনকি উৎপাদন খরচের সাথে বাজারজাত করতেও হিমশিম খাচ্ছি। রং ও সুতার বাজার নিয়ন্ত্রণ করলে জেলার ঐতিহ্যবাহী এই তাঁত শিল্প ঘুরে দাঁড়াবে। 

এদিকে, এ জেলায় তাঁতের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ, ঈদ, পুজা-পার্বণে কাপড়ের চাহিদা বাড়ে। এ কারণে তাঁতপল্লীতে কাজের চাপ বেড়ে যায়। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হলেও তাঁত পল্লীগুলো কর্মমুখর হয়ে উঠেছে।  ইতিমধ্যেই ফরিয়া ব্যবসায়ীদের আানোগোনাও বেড়েছে। 

এনায়েতপুরের অনেক শাড়ি তৈরির ব্যবসায়ী জানান, শাড়ি তৈরির জন্য নরসিংদীর বাবুরহাট থেকে গজ হিসেবে সাদা কাপড় কিনে আনা হয়। পরে ওই কাপড়ে প্রিন্টিংয়ের কাজ করে বাজারে তোলা হয়। 

তাঁত শ্রমিকেরা বলেন, ঈদ ও পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে বাড়তি আয় করার জন্য দিনরাত কাজ করছি। এজন্য দিনপ্রতি নির্ধারিত পারিশ্রমিকও পেয়ে থাকি এবং এ পারিশ্রমিক এখন বাড়তি আয় বলেও দাবী করেন। 

বৈশাখের শাড়ি ও তাঁত ব্যবসায়ীরা বলেন, মার্চ মাসের শুরু থেকে পহেলা বৈশাখের আগের রাত পর্যন্ত চলে প্রিন্টিংয়ের কাজ। ঢাকার গাউছিয়া, ইসলামপুর, টাঙ্গাইলের করটিয়া, পঞ্চগড়ের আটোয়ারী, পাবনার আতাইকুলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা এসে কারখানা থেকে শাড়ি নিয়ে যায়। বর্তমানে বাজারে বৈশাখী শাড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। শ্রমিকদের বেতন, রং ও অন্যান্য খরচ শেষে শাড়িপ্রতি ৩/৪ হাজার টাকা লাভ হয়ে থাকে। 

তাঁত মালিকরা বলছেন, বর্তমানে করোনা না থাকায় আবারো তাঁতের কাপড়ের চাহিদা বেড়েছে। তবে দীর্ঘদিন লোকসানের মুখে থাকায় আর্থিক সংকটে পড়েছে অধিকাংশ তাঁত মালিক। পহেলা বৈশাখ ও ঈদ উপলক্ষে নতুন করে কাজ শুরু করলেও রং সুতাসহ সব উপকরণের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। 

এদিকে পাওয়ারলুম ও হ্যান্ডলুম ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা বলছেন, জেলায় পাওয়ারলুম ও হ্যান্ডলুম রয়েছে প্রায় ৫ লাখ। আর এ শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ১০ লাখ শ্রমিক। সরকার কৃষি উৎপাদনসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি দিলেও বস্ত্র উৎপাদন শিল্পে ভর্তুকির এখনও কোন ব্যবস্থা নেই। এজন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছেন তারা।