ঢাকা ১০ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

স্বাধীনতার ৫২ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি ৫ গ্রামের যাতায়াতের সড়কে

স্বাধীনতার ৫২ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি ৫ গ্রামের যাতায়াতের সড়কে

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মাইজবাগ পাছপাড়া গ্রামের প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কে স্বাধীনতার ৫২ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। মাইজবাগ পাছপাড়া, দক্ষিণ সাটিহারি ও পার্শ্ববর্তী বৈরাটি, রামজীবনপুর, আতকাপাড়াসহ পাঁচ গ্রামের মানুষ যাতায়াত করেন এই সড়ক দিয়ে। স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পেরিয়ে গেলেও বৈরাটি গোরস্থান মাদ্রাসা সংলগ্ন ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক থেকে আকন্দবাড়ি মসজিদ হয়ে নূরুল হক মাস্টারের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। স্বাধীনতার এতো বছরেও জনগুরুত্বপূর্ণ এ রাস্তাটি পাকা না হওয়ায় প্রতিদিন চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, রোগীসহ এখানকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বিভিন্ন সময়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েও কথা রাখেনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

এদিকে বছর দেড়েক আগে এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে সড়কটিতে ইটের গুড়ি আর মাটি ফেলে সাময়িক পায়ে হেঁটে চলার উপযোগী করে তুললেও, বারিবর্ষণে সেই মাটিও চলে যায়। এখন রয়েছে শুধু উঁচুনিচু টিলার মতো ইটের গুড়ি। সড়কটির এমন বেহাল দশায় রিকশা- অটোরিকশা, সিএনজি ও মোটরসাইকেল দিয়ে চলাচল করলে মনে হয় এই বুঝি পরে যাচ্ছে। রাস্তাটি এখন মরণফাঁদে পরিনত হয়েছে। অপরদিকে মাটির এ সড়কটির সংস্কার বা উন্নয়নে বছরের পর বছর স্থানীয় গ্রামবাসী আশারবাণী শুনে আসছেন।

স্থানীয়রা জানান, মাইজবাগ পাছপাড়া, দক্ষিণ সাটিহারি ও পার্শ্ববর্তী আতকাপাড়া, রামজীবনপুর,বৈরাটি গ্রামের কমপক্ষে ১০ হাজারেরও বেশি লোকের সমাগম ঘটে এ সড়কটিতে। গ্রামগুলোতে রয়েছে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, কৃষকসহ অনেক শিক্ষার্থী। সড়কটি বর্ষায় ব্যবহারের পুরোপুরি অনুপযোগী হয়ে পড়ায় প্রতিদিন অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ সময় রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, ইজিবাইকসহ ছোট ছোট যানবাহন চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। এতে হেঁটেই যাতায়াত করতে হয় গ্রামবাসীকে।

মাইজবাগ পাছপাড়া গ্রামের আজিজুল হক, হাবিবুর রহমান আকন্দ, শফিকুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান নাঈম প্রমুখ জানান, সংগ্রামের ( ১৯৭১ সালের) আগের রাস্তা এটি, তবে তখন রাস্তাটি ছোট ছিল। সংগ্রামের পরে আনুমানিক ১৯৭২-১৯৭৩ সালের দিকে সড়কটি ১৪ ফুট চওড়া করে মাটি ভরাট করা হয়। উল্লিখিত গ্রামগুলোর অধিকাংশ বাসিন্দাই কৃষি কাজ করেই জীবিকা নির্ভর করেন। কাছাকাছি দূরত্বে থাকা উপজেলার অন্যতম বৃহৎ পাইকারি ও খুচরা তরকারির বাজার মাইজবাগে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করেন প্রতিদিন।

কৃষক ফজলুল হক ও আবুল হোসেন জানান, সড়কটিতে যান চলাচলের অসুবিধার কারণে আমাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিয়ে যেতে খুব কষ্ট হয়। গাড়ি যেতে চায় না এবং শ্রমিকদের ওপর নির্ভর করতে হয়। এজন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে কৃষকদের। বর্ষার পুরো সময়ই সড়কটি ব্যবহারের অনুপযোগী থাকায় রোগী,বয়স্ক লোকজন কিংবা অসুস্থ গর্ভবতী মহিলাদেরও অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কখনো জরুরি প্রয়োজনে রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে রোগীদের বহনে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হয়।

শহিদ মিয়া নামে এক সিএনজি চালক জানান, বর্ষায় ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় মহাসড়কের পাশে মাইজবাগ বাজারে নিরাপদ স্থানে গাড়ি রেখে হেঁটে বাড়িতে আসা-যাওয়া করেন।

মহসিন ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ সড়ক পথেই যাতায়াত করেন মাইজবাগ পাছপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, মাইজবাগ পাছপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বৈরাটি গোরস্থান দারুল ইসলাম মাদ্রাসা, দক্ষিণ সাটিহারি দাখিল মাদ্রাসা, রামজীবনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রয়েছে হাসান-হোসাইন মেমোরিয়াল মডেল স্কুলসহ ৩টি কেজি স্কুল ও মহিলা মাদ্রাসা। কিন্তু দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির সংস্কার না হওয়ায় কার্যত সবকিছতেই স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ আবুল কালাম জানান, এই সড়কটির বিষয়ে আমি বেশ কয়েকবার পদক্ষেপ নিয়ে এমপি ফখরুল ইমামকে অবহিত করি। বহুবার এ সড়কটি সংস্কারের ওয়াদা দিলেও সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। স্থানীয় এমপিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে উল্লেখিত গ্রামগুলোর মানুষদের দাবি যত দ্রুত সম্ভব সড়কটি সংস্কার করে জনদুর্ভোগ লাঘব করার।

ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম বাবুল জানান, এতো বছরেও এই সড়কটি পাকা না হওয়া আসলেই দুঃখজনক ব্যাপার। আমি নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পরে মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় এখনও সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারিনি। আমার আগের জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়েও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় সড়কটিতে আজও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। সড়কটির সংস্কার বিষয়ে আমি উপজেলা পরিষদের আগামী মাসিক সভায় উত্থাপন করবো।

উপজেলা প্রকৌশলী কর্মকর্তা তৌহিদ আহমেদ বলেন, এই রাস্তাটির বিষয়ে দুই বছর আগে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মাঝে বরাদ্দ পাওয়া যাবে। বরাদ্দ পেলেই সড়কটির সংস্কার কাজ চালু হবে।

এসম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্থানীয় সাংসদ ফখরুল ইমাম এমপি জানান, যেসকল রাস্তা করার মতো সে রাস্তাগুলোর প্রস্তাবনা দেওয়া আছে। আস্তে আস্তে সকল রাস্তাগুলোই হবে। এতো বছরেও এ সড়কটি কেন সংস্কার হয়নি বিষয়টি দেখে ব্যবস্তা নেওয়া হবে।

ময়মনসিংহ,সড়ক,উন্নয়ন
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত