বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দরে নাব্যতা সংকট, ভিড়তে পারছে না পন্যবাহী জাহাজ

শ্রমিকদের মানবেতর জীবনযাপন 

প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২৩, ২০:১২ | অনলাইন সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক, সিরাজগঞ্জ

উত্তরাঞ্চলের প্রধান নৌবন্দর সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িতে নাব্যতা সংকটে পূর্ণলোডে রাসায়নিক সারসহ বিভিন্ন পন্যবাহী কার্গো জাহাজ আসতে পারছে না। বেশকিছুদিন ধরে ওই নৌবন্দরে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উক্ত নৌবন্দরের বিভিন্ন স্থানে নাব্য সংকটের কারণে পন্যবাহী কার্গো জাহাজ আসতে পারছে। এতে নৌবন্দর প্রায় জাহাজ শুন্য হয়ে পড়েছে। বাঘাবাড়ি-চট্টোগ্রাম-মঙ্গলা নৌবন্দর রুটের পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ১০/১২ ফুট ড্রাফটের পানির চাহিদা থাকলেও আছে সাড়ে ৭ ফুট ড্রাফট। এতে রাসায়নিক সার, কয়লা, পাথর, সিমেন্ট ও জ্বালানী তেলবাহী কার্গো-জাহাজ পূর্ণলোড নিয়ে ওই নৌবন্দরে ভিড়তে পারছে না। পাটুরিয়া ও নগরবাড়ির আগেই লাইটারেজের মাধ্যমে জাহাজ থেকে অর্ধেক মাল আনলোড করে বেড়া, নগরবাড়ি ও যশোরের নওয়াপাড়া ঘাটে খালাস করা হচ্ছে। নগরবাড়ি, বেড়া ও যশোরের নওয়াপাড়া থেকে ট্রাকযোগে বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের বাফার গুদামে সার এনে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। ভরা সেচ মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের ১৪টি বাফার গুদামে সার সরবরাহ সঠিক পরিমাণে হচ্ছে না। এ কারণে চলতি ইরি-বোরো মৌসূমে চাহিদা অনুযায়ী রাসায়নিক সার সরবরাহ বিঘ্ন ঘটছে এবং বিভিন স্থানে রাসায়নিক সারের কৃত্রিম সংকটের আশংকা করা হচ্ছে। এ সমস্যা দ্রুত সমাধানে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে এ নৌরুটের ডুবচর গুলি অপসারণের জন্য কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছে কৃষকেরা। এ বন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ না আসায় ৪ শতাধিক শ্রমিক এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে।

বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের শ্রমিকেরা জানান, প্রায় ৩ যুগেও বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে জাহাজ শুন্য হয়নি। ডুবচর ও নাব্য সংকটের কারণে বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ আসছে না। এতে ৪ শতাধিক শ্রমিক এখন প্রায় বেকার হয়ে পড়েছে।

ওই নৌবন্দরের লেবার এজেন্ট আব্দুস সালাম ও আবুল সরকার সাংবাদিকদের জানান, নৌবন্দর চ্যানেলে মোল্লার চর, ব্যাটারির চর, পাটুরিয়া, মোহনগঞ্জ, দাসকান্দি ও নিকলি এলাকায় নাব্য সংকটে পূর্ণলোডে পণ্যবাহী জাহাজ বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে ভিড়তে পারছে না। এ নাব্যতার কারণে রাসায়নিক সার পরিবহণের  ঠিকাদাররা  বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে সার না এনে নওয়াপাড়া আনলোড করছে। এ নিয়ে এখন নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে বাঘাবাড়ি নৌবন্দর জাহাজ শুন্য হয়ে বন্দরটি এখন প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে অনেক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, গোয়ালন্দ-দৌলদিয়ার দাসকান্দি এলাকায় নাব্য সংকট সব চেয়ে বেশি। এখান থেকে লাইটারেজ করে প্রতিবস্তা সার বাঘাবাড়ি বন্দরে নিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা অতিরিক্ত খরচ হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ নাব্য সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য কৃর্তপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাঘাবাড়ি নৌবন্দর উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের নৌ চ্যানেলে তেমন কোন নাব্য সংকট নেই। এ চ্যানেলে ৮ থেকে ১০ ফুট পানির ড্রাফট রয়েছে। উত্তরাঞ্চলের এ বন্দরটি দ্বিতীয় শ্রেণির হওয়ায় ৭ থেকে ৮ ফুট ড্রাফটের জাহাজ চলার কথা। নিয়ম উপেক্ষা করে ১০/১২ ফুট ড্রাফটের জাহাজ চলাচলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ নৌ বন্দরটি প্রথম শ্রেণির বন্দরে রুপান্তর হলে এ সমস্যা থাকবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।