ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রংপুরের সেই কাউন্সিলর শিপলু কারাগারে

রংপুরের সেই কাউন্সিলর শিপলু কারাগারে

সড়ক ও জনপদ বিভাগের জমি জাল দলিল করে বিক্রির মামলায় এক বছরের দ-প্রাপ্ত এবং তিনটি মামলার ওয়ারেন্ট ভুক্ত সহ ৮ মামলার আসামি গ্রেফতারকৃত রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং তাজহাট মেট্রোপলিটন থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া আলম শিপলুকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।

গতকাল শনিবার দুপুরে দেড়টায় রংপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক আহসানুল হক রানার আদালতে তাকে তোলা হয়। সেখানে তার বিরুদ্ধে থাকা চারটি ওয়ারেন্টভূক্ত মামলার মধ্যে তিনটি মামলায় আদালত জামিন মঞ্জুর করেন এবং ১৮১/২২ নম্বর চাদাবাজি মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

জাকারিয়া আলম শিপলুর আইনজীবি মাহমুদুল হক সেলিম জানান, তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট থাকা তিনটি মামলায় আদালত জামিন মঞ্জুর করেছেন। আর একটি মামলা শুক্রবার (৭ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯ টায় তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জেলা ও দায়রা জজ আদালতে থাকার কারণে সেটির শুনানী করা সম্ভব হয় নি। সেই মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

শুক্রবার (৭ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯ টায় তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে গ্রেফতারের পর পুলিশের গাড়িতে না নিয়ে তাকে নিজ গাড়িতে করে কোতয়ালী থানায় নিয়ে আসা হয়। শনিবার ( ৮ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২ টায় কোতয়ালী থানার ওসি মাহফুজুর রহমানের নিজস্ব ব্যবহৃত সরকারি গাড়ির ডাবল ডেকার সিটে বসিয়ে তাকে আদালতে নেয়া হয়। আদালতে নেয়ার পর তাকে মেট্রোপলিটন হাজত খানায় রাখা হয়।পরে তাকে আদালতে তোলা হয়।

শিপলু ও তার বাহিনীকে নিয়ে গেলো শনিবার ক্রাইম সিনে জমিদখলের ডন শিপলু বাহিনী, রক্ষা পায় নি কবরস্থান সড়কের জমিও শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল যমুনা টেলিভিশন।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন জানিয়েছেন, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকারিয়া আলম শিপলুকে মামলার ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে জমি দখল, বাড়ি নির্মাণে বাধা দেয়া, ভাঙচুর, মারপিট এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে চারটি মামলায় ওয়ারেন্ট ছিল।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, শুক্রবার (৭ এপ্রিল) রাত সাড়ে নয়টায় নগরীর বিনোদপুর এলাকার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরো একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়াও তিনি একটি মামলার এক বছরের দ-প্রাপ্ত আসামি। ওয়ারেন্টগুলো আগেই আদালত জারি করলেও প্রক্রিয়াগতভাবে ওয়ারেন্টগুলো আমাদের কাছে না থাকায় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে আদালত থেকে প্রাপ্ত হওয়ার পর পরই তাকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এর আগে শুক্রবার (৭ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে পাঁচটায় আটটি পুলিশ ভ্যানে করে জাকারিয়া আলম শিপলুর বিনোদপুরস্থ বাড়ি ঘেরাও করে অভিযান পরিচালনা করে মেট্রোপলিটন পুলিশ। এক পর্যায়ে সেখানে আনা হয় সাজোয়া যান।

অভিযানের খবর পেয়ে শিপলু বাহিনীর লোকজন বাড়ির সামনে এসে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে অভিযান বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করে। এ সময় অনেককে মুখে গামছা ও কাপড় বেঁধেও অবস্থান নিতে দেখা যায়। তারা যমুনা টেলিভিশনের বিরুদ্ধে নানা ধরনের বক্তব্য দেয় এবং ফেসবুক লাইভে তা প্রচার করে। এ নিয়ে সেখানে উত্তেজনাও তৈরি হয়।

রাত সাড়ে নয়টায় কাউন্সিলর শিপলু বাড়ির দোতলা থেকে নিচে নেমে আসেন। এরপর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায়। তবে তিনি পুলিশের গাড়িতে করে না গিয়ে নিজের গাড়িতে যান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সেখানে অবস্থান নেয়া অধিকাংশই টোকাই এবং শিপলু বাহিনীর সদস্য। তারা সেখানে বিভিন্ন ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে পুলিশকে উত্তেজিত করারও চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পুলিশ ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখে।

অভিযানে বাধা দেয়া প্রসঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা আবু মারুফ হোসেন জানান, অনেকেরই অনেক ফ্যান ফলোয়ার থাকে। কাউন্সিলর শিপলু সাহেবের লোকজন সেখানে জড়ো হয়েছিল। তবে তারা কোন ফোর্স করেনি।

গত শনিবার ( ১ এপ্রিল) যমুনা টেলিভিশনের 'ক্রাইম সিন' এ জাকারিয়া আলম শিপুর ও তার বাহিনীর জমি জাল দলিল করে বিক্রি, জালিয়াতি, জবরদখল, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, কবরস্থানের জমি বেদখল, মাদকে পৃষ্ঠপোষকতা এবং সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে হলফ নামায় তথ্য গোপন করার বিষয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

ওই প্রতিবেদনের জেরে গত বুধবার ( ৫ এপ্রিল) ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হওয়া সত্ত্বেও জাকারিয়া আলম শিপলু আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ করসপন্ডেন্ট সরকার মাজহারুল মান্নানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দাখিল করেন। ওই মামলায় নূর মোহাম্মদ এবং শাফিউল ইসলাম শাফি নামের আরো দুইজনকে আসামি করা হয়েছে। এরমধ্যে নূর মোহাম্মদের কাছেই তিনি এবং তার দুই সহযোগী জহরুল আলম শাহীন এবং খায়রুল ইসলাম রাসেল সড়ক ও জনপদ বিভাগের জমি জাল দলিল করে রেজিস্ট্রি বায়না করেছিলেন। এ বিষয়ে নূর মোহাম্মদ বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। এই মামলায় পত ২০ ফেব্রুয়ারি শিপলুসহ তার দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে এক বছরের কারাদ- এবং দশ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায় আরও তিন মাসের কারাদ-াদেশ দেযন রংপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।

ওই মামলায় সাজাবৃদ্ধির জন্য হাইকোর্টে আপিল করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা নূর মোহাম্মদ। এছাড়াও অপর আসামি শাফিউল ইসলাম শাফি ওই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় শিপলু দাবি করেছেন উপরোক্ত তিনজন পারস্পারিক জোগসাজসে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য ওই প্রতিবেদন করেছে।আদালত দাখিল হওয়া মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মামলা গ্রহণ কিংবা গ্রহণ না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিবে আদালত।

এদিকে যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট সরকার মাজহারুল মান্নান জানিয়েছেন, সুস্পষ্ট নথিপত্র এবং হয়রানির শিকার এবং ভুক্তভোগী মানুষ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বক্তব্য দিয়ে ক্রাইম সিন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার করে। শিপলু যে মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, সেই তথ্যও প্রতিবেদনে প্রচার করা হয়েছিল। তাকে গ্রেফতারের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে ক্রাইম সিনে প্রচারিত তথ্য সঠিক। তদন্ত করলে অন্যান্য উপস্থাপিত তথ্যসমূহ শতভাগ সঠিক হিসেবে প্রমাণিত হবে। সে কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দাখিল করা মামলা খারিজ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি। যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট সরকার মাজহারুল মান্নানের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার আবেদনের ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে সাংবাদিক সমাজ। তারা এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে মানববন্ধন সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে মামলাটি প্রত্যাহার কিংবা খারিজ করার দাবি জানিয়েছেন।

সাংবাদিক নেতারা মনে করেন, গণমাধ্যমের কন্ঠ রোধ করার জন্যই অপরাধীরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার করে মামলা দিচ্ছে। এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের হয়রানি এবং সত্য প্রকাশ যেন না করতে পারে সেজন্য ভীতি তৈরি করা হচ্ছে। সাংবাদিকরা সরকারকে এই কালা কানুন বাতিল করার আহ্বান জানান।

রংপুর,কাউন্সিলর শিপলু,মামলা,গ্রেফতার
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত