রামুতে জব্দ গরু ছিনিয়ে নিতে বিজিবি-চোরাকারবারি সংঘর্ষ
গুলিতে দোকানকর্মীর মৃত্যু
প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৩, ২২:২৭ | অনলাইন সংস্করণ
কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজারের রামুতে 'জব্দ করা গরু ছিনিয়ে নিতে' বিজিবির উপর হামলা চালিয়েছে চোরাকারবারিরা। তাদের নিক্ষেপিত ইট-পাটকেল থেকে আত্মরক্ষায় ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে বিজিবি। সেই গুলিতে বিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন রড-সিমেন্টের দোকানের এক শ্রমিক। শনিবার (৮ এপ্রিল) রাত ৯ টার দিকে রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের পূর্ব কাউয়ারখোপ এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান শামশুল আলম।
নিহত আব্দুর জব্বার (৪০) রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের পূর্ব কাউয়ারখোপ পশ্চিম পাড়া এলাকার মৃত জাকের আহমদের ছেলে। তিনি বাজারের রড-সিমেন্টের দোকানে মালামাল উঠানামার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
তবে, বিজিবি প্রেস রিলিজে দাবি করেছেন নিহত ব্যক্তি চোরাকারবারি সদস্য।
রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শামশুল আলম বলেন, আমি অসুস্থ- তাই বাসা থেকে বের হয়নি। তবে, স্থানীয়দের বরাতে জেনেছি, শনিবার রাতে কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের পূর্ব কাউয়ারখোপ এলাকায় মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসা ৫-৬ টি গরু জব্দ করে বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। জব্দ গরুগুলো হাঁটিয়ে নিয়ে যাবার সময় পাচারের সাথে জড়িত লোকজন ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়।
এক পর্যায়ে পাচারকারিরা বিজিবির সদস্যদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ও ঢিল ছুঁড়ে। আত্মরক্ষার্থে বিজিবির সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছুঁড়লে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া হয়। কৌতুহল বশত তা দেখছিল স্থানীয়রা। এসময় নির্মাণ সামগ্রী বিক্রয়কারি মহিবুল্লাহর দোকানে মালামাল উঠানামা করা শ্রমিক জব্বারও তা দেখতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান। আহত হন আরো একাধিক জন। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
এদিকে, বিজিবি-চোরাকারবারিদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত দেকানকর্মীর মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। রবিবার (৯ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১২টায় নিহতের মরদেহ কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে স্বজনদের কাছে মরদেহ তুলে দেয়া হয়। রামুর কাউয়ারখোপ ইউপি'র ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বার) মোহাম্মদ আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ইউপি সদস্য আরো বলেন, রোববার বেলা ১২ টায় নিহত আব্দুর জব্বারের মরদেহ কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। পরে মরদেহটি বিজিবির সদস্যরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার কাছে হস্তান্তর করেছেন। এরপর মরদেহ এলাকায় নিয়ে গিয়ে স্বজনদের তুলে দেয়ার পর আছরের নামাজ শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য মোহাম্মদ রিপন চৌধুরী জানিয়েছেন, রামুর ঘটনায় নিহতের মরদেহ সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে মর্গে আনা হয়। এ ঘটনায় আহত বিজিবি হাবিলদার মো. মোহাইমিনুল ইসলাম, নায়েক মো. লুৎফর রহমান ও নায়েক মো. আবুল কালাম কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি টান্টু সাহা জানান, রামুতে বিজিবির সাথে গরু চোরাকারবারিদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহত হওয়ার খবর শুনেছি। মরদেহটি নাইক্ষ্যংছড়ি হাসপাতালে ছিল।
নাইক্ষ্যংছড়ি হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এজেডএম সেলিম জানান, রবিবার ভোরে মরদেহটি বিজিবি নিয়ে গেছে। সম্ভবত ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হতে পারে।
বিষয়টি নিয়ে বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. রেজাউল করিমের সাথে ফোনে কথা বলার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে, শনিবার গভীর রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়ন পরিচালিত হোয়াইটঅ্যাপ গ্রুপে এবং রবিবার সকালে বিজিবির সদর দপ্তর থেকে জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) মো. শরীফুল ইসলামের পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়েছে শনিবার রাতে সীমান্তের চোরাই গরু জব্দ করে টহল দল পায়ে হেঁটে ফেরার সময় কাউয়ারখোপ এলাকায় সংঘবদ্ধ চোরাকারবারী, দুষ্কৃতিকারী ও স্থানীয় সহযোগী প্রায় ২০০ হতে ৩০০ জন লোক দেশীয় অস্ত্র, লাঠিশোঠা ও ইটপাটকেলসহ বিজিবি টহল দলের উপর অতর্কিত হামলা করে। এসময় বিজিবির ৩ সদস্য গুরুতর আহত হন। আহতদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, এ সময় টহল দল সরকারী জানমাল রক্ষার্থে এবং আত্মরক্ষার্থে গুলি করতে বাধ্য হলে একজন চোরাকারবারি গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। এসময় ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশীয় একনলা বন্দুক, একটি ক্রীচ ও একটি দা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে বার্তায়।
রামু থানার ওসি মো. আনোয়ারুল হোসাইন জানান, শনিবার রাতে কাউয়ারখোপে বিজিবির সাথে চোরাকারবারিদের সংঘর্ষের খবর শুনেছি। নানাভাবে হতাহতের খবর শুনা গেলেও হতাহতের কোন নিশ্চিত তথ্য তার কাছে নেই।
নিহত জব্বারের স্ত্রী জাহেদা বেগম (২৮) বলেন, আমার স্বামী শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাতেন। এটা জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার সকলেই জানেন। অথচ আমার স্বামীকে এখন চোরাকারবারি সদস্য বলে প্রচার করা হচ্ছে। পরিবারের কর্মক্ষম স্বামী নিহত, বিধবা হয়েছি- চার সন্তানকে কিভাবে লালন-পালন করবো?