ময়মনসিংহে ভ্যাট আদায়ে শুভঙ্করের ফাঁকি, নেই প্রযুক্তির ব্যবহার
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৩, ১৯:২৭ | অনলাইন সংস্করণ
ময়মনসিংহ ব্যুরো
ময়মনসিংহে সরকারি ভ্যাট আদায়ে চলছে শুভঙ্করের ফাঁকি। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আত্মসাৎ হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে ভুক্তভোগী মহলে গুঞ্জণ থাকলেও উভয় পক্ষ (কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ি) লাভবান হওয়ায় প্রকাশ্যে মুখ খুলছে না কেউ।
অভিযোগ উঠেছে, ভ্যাট কর্মকর্তা ও ব্যবসায়িদের গোপন আতাঁতের মাধ্যমে সরকারের ভ্যাটে এই শুভঙ্করের ফাঁকির ঘটনা ঘটছে। এতে খোদ কর্মকর্তারা সরকারের রাজস্ব নয়ছয় করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
জানা যায়, ময়মনসিংহ নগরীতে ভ্যাট আদায়যোগ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় অর্ধ লাখ। এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ প্রতিষ্ঠান ভ্যাটের আওতায় নেই। তবে ভ্যাট কর্মকর্তাদের সাথে তাদের রয়েছে গোপন রফাদফা, দাবি একাধিক সূত্রের।
সেই সঙ্গে নিয়ম অনুযায়ি প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্রয়-বিক্রয়ের হিসাব মূশক বই বা রেজিষ্ট্রার খাতায় লিপিবদ্ধ থাকার কথা থাকলেও মানা হচ্ছে না এই নিয়ম। এছাড়াও এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভ্যাট কর্মকর্তাদের দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক তদারকির বিধান থাকলেও দৃশ্যত এ ধরনের কোন কর্মযজ্ঞের নজির নেই।
অভিযোগ উঠেছে, ময়মনসিংহে ভ্যাট কর্মকর্তাদের রয়েছে একটি নির্দ্দিষ্ট সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ব্যবসায়িদের ডেকে এনে ভ্যাট আদায় ও আইনের কঠোরতার গল্প শুনিয়ে ভ্যাটের আদায়ের নামে করা হয় মাসিক রফাদফা। ফলে নিবন্ধিত ব্যবসায়িরা ক্রেতাদের কাছ থেকে কড়ায় গন্ডায় ভ্যাট আদায় করলেও গুটিকয়েক অসৎ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে সেই ভ্যাট সঠিক পরিমানে সরকারের ভান্ডারে জমা হচ্ছে না।
একই অবস্থা ময়মনসিংহ বিভাগীয় নগরী এলাকায় গড়ে উঠা অসংখ্য বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ইটভাটা, কলকারখানা, বেকারি এবং কোচিং সেন্টারগুলোর। এসব প্রতিষ্ঠা থেকে ভ্যাট আদায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অস্বচ্ছতা রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগীরা সূত্র জানায়, ভ্যাট আদায়যোগ্য বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ইটভাটা, কলকারখানা এবং কোচিং সেন্টারগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে শতভাগ ভ্যাট আদায় হচ্ছে না। তবে অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ভ্যাটের নামে মাসোয়ারা ভিত্তিতে নির্দ্দিষ্ট পরিমান টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্রমতে, এসব কারণে ভ্যাট আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে গত কয়েক বছর ধরে ব্যবসায়িক ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গুলোতে প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেছে সরকার। এর মধ্যে ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিষ্ট্রার (ইসিআর) এবং ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন চালু করা হলেও ময়মনসিংহে কোন প্রতিষ্ঠানেই প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে না। অথচ ২০০৮ সালে ১১টি খাতে ইসিআর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছিল সরকার। সেই সঙ্গে ভ্যাটযোগ্য কোনো পণ্য বিক্রি বা সেবা প্রদান করতে হলে প্রতিটি বিক্রির সমর্থনে ভ্যাট চালানপত্র ইস্যু করা বাধ্যতামুলক থাকলেও তাও ব্যবহার হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।
এসব বিষয়ে কথা হলে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট ময়মনসিংহের উপ-কমিশনার মির্জা রাফেজা সুলতানা জানান, ময়মনসিংহ অঞ্চলে মাত্র ছয় হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভ্যাটের আওতায় রয়েছে। এর মধ্যে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে মাসিক লেনদেনের চালান দেখে ভ্যাট আদায় করা হয়। তবে ছোট প্রতিষ্ঠান গুলো থেকে মাস শেষে নির্দ্দিষ্ট পরিমান ভ্যাট আদায় করা হয়।
প্রযুক্তির ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামে ভ্যাট আদায়ে প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হলেও ময়মনসিংহের জন্য ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। বরাদ্ধ আসলে তা ব্যবহার করা হবে।
এ সময় জনবল সঙ্কটের কথা উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কর্মকর্তা রয়েছে মাত্র এগারো জন। তাই নিয়ম মেনে প্রতিদিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যাওয়ার সুযোগ হয় না। তবে কোন কোন প্রতিষ্ঠানে মাসে দুই একবার যাওয়া হয়।’
তবে ভ্যাট আদায়ে রফাদফার অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা রাফেজা সুলতানা বলেন, এ ধরনের কোন অভিযোগ আমাদের জানা নেই।