চাঁদপুরের মতলব দক্ষিন উপজেলায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে স্ত্রীকে বেদমভাবে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে ২ শিশু পুত্র আবদুল্লাহ (৮) ও আল-আমীন (৬) কে নিয়ে স্বামীর উধাও হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে থানায় দায়ের করা একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার স্ত্রীর বাবা মনির হোসেন প্রধানিয়া বাদী হয়ে একটি মামলা করলে পুলিশ নির্যাতনকারী স্বামী বিল্লাল হোসেনকে ঢাকা থেকে আটক করে মঙ্গলবার (১১এপ্রিল) আদালতে সোপর্দ করেছে। এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার শিল্পী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, নির্যাতনকারী স্বামী বিল্লাল হোসেন তার ২ শিশু পুত্রকে অজানা স্থানে রেখে দেওয়ায় ২ শিশু নিখোঁজ রয়েছে। মা শিল্পী বেগম সন্তানের সন্ধান না পেয়ে হাসপাতালে থেকে আরো বেশী অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন। মায়ের আকুতি সে তার শিশু পুত্র আবদুল্লাহ (৮) ও আল-আমীন (৬) কে ফিরে পেতে চায়। গত ১৬ দিন থেকে নিখোঁজ আছে বলে দুই শিশু পুত্রের মা শিল্পি ও নানা মনির প্রধান জানান।
মামলার বিবরণ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ভুল বোঝাবুঝির কারণে এক পর্যায়ে তুচ্ছ ঘটনা থেকে এ ঘটনাটি বড় আকার ধারণ করেছে। মতলব দক্ষিন উপজেলার খাদেরগাঁও ইউনিয়নের নারায়নপুরের বারৈগাঁও গ্রামের বিল্লাল হোসেনের সাথে ৭ বছর পূর্বে শিল্পী বেগমের বিয়ে হয়। এরই মধ্যে ৫ বছর পূর্বে বিল্লাল তার দুই শিশু পুত্র আবদুল্লাহ (৮) ও আল-আমীন (৬) এর নামে দেড় শতক পৌত্রিক ভূমি হেবাদলিল করে রেকর্ড করে দেয়। বর্তমানে বিল্লাল দেনার দায়ে সে জমি বিক্রির জন্য তার স্ত্রী শিল্পীর স্বাক্ষর নেয়ার জন্য চাপ দেয় ও তাকে মারধর করে। স্বাক্ষর দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় বিল্লাল তাঁর দুই শিশু পুত্রকে বাড়ি থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। এরপর হতে নিখোঁজ দুই পুত্রের সন্ধান না পাওয়ায় গত ৫এপ্রিল এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিল্লাল তার স্ত্রী শিল্পিকে নারায়ণপুরের সাকিনস্থ বাড়ীতে রাত অনুমান ১২টায় বেদম মারধর ও প্রাণনাশের চেষ্টা করে। এতে শিল্পির মাথায় কোপ ও শরীরের বিভিন্নস্থানে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম হয়। তার চিৎকারে লোকজন ছুটে এসে রক্তাত্ত অবস্থায় চাঁদপুর সরকারী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিচ্ছে।
এ ঘটনায় বিল্লালের শ্বশুর মনির হোসেন বাদী হয়ে গত ৬ এপ্রিল মতলব দক্ষিন থানায় একটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করে। মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ বিল্লাল হোসেনকে সোমবার (১০এপ্রিল) ঢাকা থেকে আটক করে চাঁদপুর আদালতে মঙ্গলবার (১১এপ্রিল) পাঠালে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।
বর্তমানে সে জেলা হাজতে রয়েছে। বিল্লাল হোসেন ইতিপূর্বে আরো দুইটি বিয়ে করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিল্পি জানান, আমার দু’সন্তান এখনও নিখোঁজ। তারা কোথায় আছে আমি আজ ১৬ দিন পর্যন্ত জানি না। আমি আমার সন্তানদের ফিরে পেতে চাই।
মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এস আই) ফিরোজ আহাম্মদ মোল্লা মুঠোফোনে জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এ ঘটনা। বিল্লাল তার ২ শিশু পুত্রের নামে জায়গা লিখে দিয়েছিল। ওই জায়গা সে দেনার দায়ে বিক্রি করার চিন্তা করে। সেটি উকিলের মাধ্যমে হেবাদলিল বাতিল করে বিক্রির নিয়ম থাকলেও সে পদ্ধতিতে না যেয়ে স্ত্রীর সাথে জমি বিক্রি করা নিয়ে তাদের পারিবারিক কলহ হয়। পরে বিল্লাল স্ত্রীকে পিটিয়ে আহত করে। এ ঘটনায় বিল্লালের শ্বশুর বাদি হয়ে মামলা করে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর আমি ঢাকা থেকে আসামী বিল্লাল হোসেনকে আটক করেছি। বিল্লালের স্ত্রীর বিউটি পার্লার রয়েছে। তার স্বামী ঢাকায় থাকে।
তিনি আরো বলেন, শিশু নিখোঁজ হয়নি। বিল্লাল বলেছে, তার ২ পুত্র মাদ্রাসায় পড়াশুনা করছে। এ বিষয়ে ব্যাপক তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আদালতে চার্জসীট দেওয়া হবে।