বাউফলে এনজিওর ঋণ নিয়ে বিপাকে গৃহবধূ
প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৩, ১৬:৩৩ | অনলাইন সংস্করণ
পটুয়াখালী প্রতিনিধি
পটুয়াখালীর বাউফলে বেসরকারি সংস্থা ‘পদক্ষেপ’ থেকে ঋণ নিয়ে মর্জিনা বেগম নামের এক গৃহবধূ বিপাকে পড়েছেন। কিস্তির টাকা পরিশোধ না করায় ওই গৃহবধূর বাসা থেকে সেলাই মেশিনসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র নিয়ে গেছেন ‘পদক্ষেপ’ এর কর্মীরা। শুধু তাই নয় ঋণ খেলাপী মামলায় জড়িয়ে মর্জিনা বেগমকে পুলিশ দিয়ে হয়রানী করা হয়েছে। পুলিশের ভয়ে এক পর্যায়ে মর্জিনা বেগম স্বামী সন্তান নিয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
এসব ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সোমবার স্থানীয় এক সংবাদকর্মী ‘পদক্ষেপ’ কর্মীদের হাতে নাজেহাল হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে কালাইয়া ইদ্রিস মোল্লা ডিগ্রী কলেজ সড়কের পদক্ষেপ কেন্দ্র থেকে মর্জিনা বেগম ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন। ইতিমধ্যে ঋণের ৪৬টি কিস্তির মধ্যে মর্জিনা বেগম ২৩টি কিস্তি পরিশোধ করেন। এরই মধ্যে মর্জিনা বেগমের স্বামী আলাউদ্দিন হাওলাদার গাছের নীচে চাপা পড়ে আহত হন। এরপর তার স্বামী কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় মর্জিনা বেগম কয়েকটি কিস্তি দিতে পারেননি। তখন পদক্ষেপ কর্মীরা বাড়ি এসে মর্জিনা বেগমের সেলাই মেশিনসহ কিছু আসবাবপত্র নিয়ে যান। সেলাই মেশিন নিয়ে যাওয়ায় মর্জিনা বেগমের উপার্জনের পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে মর্জিনা বেগম তার অসুস্থ স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে কাজের সন্ধানে বান্দরবান চলে যান। এরপরও বাড়ি গিয়ে মর্জিনা বেগমের স্বজনদেরকে টাকা পরিশোধের জন্য চাপ অব্যাহত রাখে ‘পদক্ষেপ’ কর্মীরা। কয়েকদিন পর মর্জিনা বেগম বাড়ি এসে গাছ বিক্রি করে এনজিওর ঋণ পরিশোধের উদ্যোগ নেন। মর্জিনা বেগমের আসার খবর পেয়ে ‘পদক্ষেপ’ কর্মীরা পুলিশ নিয়ে ওই বাড়ি ঘেড়াও করে। পরে মর্জিনা বেগম পালিয়ে তার এক নিকটাআত্মীয়ের কাছ থেকে ভাড়ার টাকা ধার নিয়ে ফের বান্দরবান চলে যান।
বান্দরবান থেকে মুঠোফোনে মর্জিনা বেগম বলেন, এমন অমানবিকতা আমি আর কখনও দেখিনি। আমার স্বামী দুর্ঘটনার স্বীকার না হলে এতদিনে সব টাকা পরিশোধ করে দিতাম। কিন্তু আমাকে যেভাবে হেনস্থা করা হয়েছে এতে আমার আত্মহত্যা করা উচিত। ‘পদক্ষেপ’ কর্মীদের অত্যাচারে আমি এখন আর এলাকায় আসতে পারছি না।
এদিকে, ‘পদক্ষেপ’ বাউফল শাখায় এই ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করতে যাওয়ায় মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) বিকালে স্থানীয় সংবাদকর্মী ইমনকে হেনস্থা করা হয়েছে। সাংবাদিক ইমনকে অফিসের ভেতর থেকে বাইরে বের করে দরজা আটকে দেয়া হয়েছে।
ইমন বলেন, আমি মর্জিনা বেগমের বিষয়টি জানতে ‘পদক্ষেপ’ অফিসে যাই। সেখানকার কয়েকজন কর্মী আমাকে দেখে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। এরপর আমি ঘটনা জানতে চাইলে অফিস থেকে বের করে দিয়ে দরজা আটকে দেন।
এ বিষয়ে 'পদক্ষেপ' বাউফল কার্যালয়ের শাখা ব্যবস্থাপক আবুল বশার বলেন, আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। শুনেছি এক সংবাদকর্মীর সাথে বাকবিতন্ডা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এটিএম আরিচুল হক বলেন, সাংবাদিককে হেনস্থা করার ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। এ বিষয়ে আইনী পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।