ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চাঁদপুর কোর্টস্টেশনে সিলেটের ট্রেনটি বিরতি করেনি, টিকেট করেও বিড়ম্বার শিকার যাত্রীরা

চাঁদপুর কোর্টস্টেশনে সিলেটের ট্রেনটি বিরতি করেনি, টিকেট করেও বিড়ম্বার শিকার যাত্রীরা

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর পর চাঁদপুর-সিলেট স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস চালুর প্রথম দিনেই যাত্রীদের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। প্রথম দিনে চাঁদপুর-সিলেট স্পেশাল ট্রেন চলাচলের সময় চাঁদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল রেলওয়ে কোর্টস্টেশনে ট্রেনটি বিরতী না করায় শতাধিক যাত্রী অনলাইনে টিকেট ক্রয় করে সরকারকে রাজস্ব দিয়েও তারা তাদের গন্তব্যের স্থান সিলেটের বিভিন্ন স্থানে যেতে পারেনি। পরিবার-পরিজন নিয়ে মারাত্বক বিড়ম্বার শিকার হতে হয়েছে তাদের। যাত্রীদের ও বিভিন্ন সচেতন মহলের দাবী শহরের গুরুত্বপূর্ণ এ কোর্টস্টেশনে সরকারের রাজস্ব আয়ের স্বার্থে ট্রেনের বিরতী একান্ত প্রয়োজন।

ঘটনাটি ঘটেছে, বুধবার (১৯ এপ্রিল) ভোর ৪টা ২৫ মিনিটের সময় শহরের রেলওযে কোর্টস্টেশন এলাকায়।

চাঁদপুর-সিলেট রেলপথে চলাচলকারী ট্রেন যাত্রী ও রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর থেকে সিলেট ও সিলেট থেকে চাঁদপুরে প্রচুর যাত্রী রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিশেষ ব্যবস্থা চালুর ফলে চাঁদপুর থেকে প্রচুর যাত্রী সিলেটের যাওয়ার জন্য অনলাইনে টিকেট ক্রয় করে। প্রতিটি টিকেট অনলাইনে ২০ টাকা সরকারকে ভ্যাট প্রদান করে ১৭৫ টাকায় ক্রয় করতে হয়। চাঁদপুরের সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য স্টেশন হচ্ছে শহরের প্রাণকেন্দ্রের কোর্ট স্টেশন। এখান থেকে উঠার জন্য বুধবার ভোরে শতাধিক যাত্রী এ স্টেশনে অবস্থান নেয়। কিন্তু যাত্রীরা ট্রেনের অপেক্ষায় থাকলেও ট্রেনটি চাঁদপুর বড় স্টেশন থেকে ছেড়ে কোর্ট স্টেশনে বিরতী না করে সরাসরি চলে যায়। যার ফলে টিকেট ক্রয় করেও যাত্রীরা তাদের গন্তব্যের উদ্দেশে যাওয়ার ট্রেনে উঠতে পারেনি। যাত্রীদের প্রশ্নের ফলে জবাব এসেছে, এখানে ট্রেনের কোন বিরতী রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রাখেনি। তবে যাত্রীদের প্রশ্ন এখানে আন্ত:নগরসহ সব ট্রেনই বিরতী করে থাকে।

এখন যাত্রীদের দাবী রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ শহরের প্রধান এ স্টেশনে ট্রেন বিরতী না করলে যাত্রী ভোগান্তি আরো বেড়ে যাবে। তাই রেলওয়ের রাজস্বের স্বার্থে কর্তৃপক্ষের কাছে যাত্রীরা দাবী জানান, এখানে যে কোন উপায়ে বিরতীর ব্যবস্থা করা হউক। তা না হলে সিলেটের যাত্রীদের তাদের গন্তব্যস্থানে যেতে শান্তির স্থলে অশান্তি পোহাতে হবে।

এদিকে, রেলওয়ের স্থানীয়দের সাথে আলোচনায় জানা গেছে, বিগত প্রায় ২০ বছর পূর্বে চাঁদপুর-সিলেট প্রতিদিন ট্রেন সার্ভিস ও মালামাল পরিবহরের ব্যবস্থা ছিল। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানান, এরই মধ্যে স্থানীয় ভাবে চাঁদপুর-সিলেট সরাসরি যাত্রীবাহি বাস সার্ভিস চালু হওয়ায় ও বিভিন্ন বড় ধরনের জটিলতার কারণে চাঁদপুর-সিলেট ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে চাঁদপুরের মানুষ যারা সিলেট থাকে তারা ও সিলেটের মানুষ যারা চাঁদপুরে থাকে সেসব মানুষগুলো চাঁদপুর থেকে আরামদায়ক ট্রেন যাতায়ত থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ে। এতে করে চাঁদপুরের সাথে সিলেটের ব্যবসা-বানিজ্য অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে। রেলওয়ে আয়ের খাতের একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল চাঁদপুর-সিলেট ট্রেন চলাচল ব্যবস্থা। সে ট্রেনটি চাঁদপুর থেকে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরকারের রাজস্ব আয় অনেকাংশে কমে যায় বলে বিগত বছরের আয় থেকে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর পর চাঁদপুর-সিলেট রেলপথের এ রুটে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন চলাচলের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। চাঁদপুর রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে তাদের তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, বর্তমান সরকারের প্রায় ১৫ বছর ও বিগত সরকারের সময়ের প্রায় ৫ বছরসহ প্রায় ২০টি বছর যাবত চাঁদপুর- সিলেট রেলপথে ট্রেন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। যাত্রীদের দীর্ঘ বছরের ভোগান্তি ও সুবিধার দিক বিবেচনা করে বর্তমান সরকারের রেলওয়ে কর্তৃপক এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

চাঁদপুর-সিলেট রুটে বিশেষ ট্রেনটি সিলেট থেকে বিকাল চারটা ৪০ মিনিটে ছেড়ে চাঁদপুরে পৌঁছাবে রাত সোয়া ১২টায়। আর চাঁদপুর থেকে বিকাল ৪টায় ছেড়ে সিলেটে পৌঁছাবে রাত ১২টায়। এ ট্রেনে থাকবে ৪৮৮টি আসন।

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চাঁদপুরসহ দেশের পাঁচটি রুটে বিশেষ ট্রেন চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ঘরমুখো মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পাঁচটি রুটে বিশেষ ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এসব ট্রেনে আসন রয়েছে ২ হাজার ৪০০টি। এ ছাড়া ট্রেনে যাত্রী দাঁড়িয়ে যাওয়ারও সুযোগ রেখেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এসব বিশেষ ট্রেন গত মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন স্থানে রুটে চলাচলের ব্যবস্থা করায় ট্রেন গুলো চলাচল করছে।

রেলওয়ের পরিবহন ও কমার্সিয়াল বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানান, এবারের ঈদযাত্রায় চট্টগ্রাম থেকে ১০টি আন্তঃনগর, মেইল এবং সাতটি বিশেষ ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোজন করে প্রতিদিন প্রায় ১২ হাজার যাত্রী চলাচল করবে। এ লক্ষ্যে গত শুক্রবার (৭ এপ্রিল) থেকে রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করা হয়েছে। এ টিকিট বিক্রি হবে আগামী পাঁচদিন পর্যন্ত।

ঈদে ট্রেনের টিকিট পেতে যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করতে এবার অনলাইনে টিকিট বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। শুধু ১০টি আন্তঃনগর ট্রেনে সাড়ে ৭ হাজার টিকিট বিক্রি হবে অনলাইনে। অন্যান্য মেইল ট্রেন ও স্পেশাল ট্রেনের টিকিট বিক্রি হবে কাউন্টারে। এ ছাড়া ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের সুবিধার্থে শোভন শ্রেণির (নন এসি) মোট আসনের ২৫ শতাংশ আসনবিহীন টিকিট (স্ট্যান্ডিং) যাত্রার দিন কাউন্টার থেকে কিনতে পারবেন যাত্রী সাধারন।

এ বিষয়ে চাঁদপুর কোর্টস্টেশন মাস্টার আবু কাউসার জানান, আমাদের টিকেট কাউন্টারে কোন টিকেট বিক্রি হয়না। শতভাগ টিকেট অনলাইনে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। চাঁদপুর বড় স্টেশন থেকে যাত্রী উঠবে। ট্রেনটি সরাসরি গিয়ে মধুরোড যাত্রা বিরতী করবে। আমার কাছে ৩০/৪০ যাত্রী এসে ট্রেন না পেয়ে অভিযোগ করেছে। আমারতো কিছু করার নেই। আমি কর্তৃপক্ষকে জানাবো। শহরের এ স্টেশনে ট্রেন থামার প্রয়োজন আছে। সেটা চট্রগ্রামের উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে পারবে। আপনারা সেখানে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন।

ট্রেন,যাত্রী,ভোগান্তি
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত