পটিয়া উপজেলার জিরি ইউনিয়নে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধা মহিলা নিহত হয়েছে। বুধবার (২৬ এপ্রিল) দিবাগত রাত ৩টার দিকে তার ঘরে আগুন লাগে। আগুন থেকে বাঁচতে এক কক্ষ থেকে বের হয়ে ঢুকে পড়েন আরেক কক্ষে। শেষ পর্যন্ত আগুনে দগ্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়।
বুধবার রাতে চট্টগ্রামের পটিয়ার জিরি ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডে এই ঘটনা ঘটেছে। মৃত রিজিয়া ঐ এলাকার মৃত ইউসুফ সিকদারের স্ত্রী। আগুনে রিজিয়া বেগমের দুই সন্তানের বসতঘরও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনে ক্ষতিগ্রস্তরা হলেন- নুরুল আলম সিকদার, বাদশা মিয়া সিকদার, রুবেল সিকদার ও ছেনোয়ারা বেগম।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে আরও জানা যায়, বুধবার রাতে জিরি ইউনিয়নে পটিয়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক সায়েমের নেতৃত্বে একটি টহল টিম ঐ এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। এসময় তারা দেখতে পান একটি বাড়িতে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। তখনই পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে আশপাশের লোকজনকে ডাকাডাকি করে ঘুম থেকে তুলেন। আগুন যাতে আশপাশের বাড়িতে ছড়িয়ে না পড়ে সবাইকে নিয়ে পানি ছিটিয়ে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করে পুলিশ। এসময় খবর দেওয়া হয় পটিয়া থানার ওসি প্রিটন সরকারকে। তিনি সাথে সাথে পটিয়া ফায়ার সার্ভিসকে জানালে তারাও রাত ৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে দুটি ইউনিট নিয়ে উদ্ধার কাজে রওনা হন।
এদিকে, বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপি, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ড. আশিক মাহমুদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাকিবুল ইসলাম, ওসি প্রিটন সরকার, স্হানীয় চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম খান টিপু, স্থানীয় ইউপি সদস্য নাসির উদ্দীন চৌধুরী। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কাপড়, শাড়ি, লুঙ্গি, খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন এবং পাশে দাঁড়িয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।
পটিয়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার সাঈদুল ইসলাম জানান, রাত ৩টা ৪৫ মিনিটে আগুনের খবর পেয়ে আমাদের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। একজন বৃদ্ধা মহিলাও পুড়ে মারা গেছেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।
এ ব্যাপারে পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ড. আশিক মাহমুদ জানান, ঘরটিতে যৌথ পরিবারের বেশ কিছু লোকজন বসবাস করতেন। আগুন তারা প্রাণে বেঁচে গেলেও তাদের বৃদ্ধ মাকে বাঁচাতে পারেন নি। পুলিশ যদি এ ঘটনাটি না দেখতো তাহলে পুরো এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতো। এসময় পুলিশ ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় পরিবারটির গৃহপালিত পশুগুলোকে রক্ষা করা গেছে। আগুনে পুড়ে অঙ্গার হওয়া বৃদ্ধা রিজিয়া বেগমের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
পটিয়া থানার ওসি প্রিটন সরকার জানান, এ ঘটনায় তাদের পরিবারের কারও কোনো অভিযোগ না থাকায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। পুড়ে অঙ্গার হওয়া লাশটির ময়নাতদন্ত শেষে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।