গোপালগঞ্জে 'খামারি' মোবাইল অ্যাপ ও বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ নিয়ে মাঠ দিবস
প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১৪:১৩ | অনলাইন সংস্করণ
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
গোপালগঞ্জে 'খামারি' মোবাইল অ্যাপের কার্যকারিতা যাচাই ও বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ এর প্রদর্শনী ট্রায়ালের মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৯ এপ্রিল) টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গওহরডাঙ্গায় কৃষক ইমরান শেখের জমিতে অনুষ্ঠিত এ মাঠ দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার।
কৃষি সচিব বলেন, এক সময় আমাদের দেশে বোরো ধানের ফলন, বিঘা প্রতি হতো পাঁচ থেকে সাত মন। কৃষিতে আধুনিকায়ন, ভর্তুকি এবং কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ এবং কৃষকদের সময় উপযোগী পরামর্শ দেয়ার ফলে ধানের উৎপাদন অনেক বেড়েছে। বর্তমানে ধানের উৎপাদন বিঘা প্রতি ২২ থেকে ২৫ মনে উন্নত হয়েছে।
কৃষি সচিব আরও বলেন, করোনা মহামারী এবং এরপরে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সারাবিশ্বে টালমাটাল পরিস্থিতি থাকলেও প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে বাংলাদেশে সারের ঘাটতি পূরণ করেছেন। ১ কেজি সারের আমদানি মূল্য ১০০ টাকা হলেও কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে মাত্র ২৫ টাকায়।
কৃষিতে 'খামারি' মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারে কৃষকের ভালো ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এই অ্যাপ ব্যবহারকারীরা আর্থিকভাবে অনেক বেশি লাভবান হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
কৃষি সচিব জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে জিন সমৃদ্ধ উচ্চ ফলনশীল ধান বঙ্গবন্ধু স্থান একশ রিলিজ করা হয়। এই ধানটি গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকদের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এটি একটি জিন সমৃদ্ধ ধান। এই ধানের চাল মানুষের শরীরের জিংকের চাহিদা পূরণ করে বিধায় মানুষ ক্লান্তি অবসাদগ্রস্ত এবং ঘুম ঘুম ভাব থেকে পরিত্রাণ পাবে। শিশুরা স্বাভাবিক বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় জিংকের অভাব পূরণ করতে পারবে এ চালের মাধ্যমে।
তিনি বলেন, কৃষকরা তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে উচ্চ ফলনশীল বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ এর আবাদ করে বিঘা প্রতি ফলন পেয়েছেন ২২ থেকে ২৩ মন।
সেখানে খামারি অ্যাপ ব্যবহার করে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমেছে এবং ফলন হয়েছে ২৩ থেকে ২৫ মন।
দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ের সকল উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সকল কৃষকের দোর গোড়ায় পৌঁছে দেয়া হবে বলে জানান কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের ক্রপ জোনিং প্রকল্প ও ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার সভাপতিত্ব করেন।
এসময় কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার, বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো শাহজাহান কবীর, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল খায়ের ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বাবুল শেখ ও জমির মালিক মো: ইমরানুল হক বক্তব্য রাখেন।
কৃষক ইমরানুল হক বলেন, খামারি মোবাইল অ্যাপটি অত্যন্ত চমৎকার একটি অ্যাপ। এই অ্যাপ ওপেন করে নিজ জেলা, গ্রাম এবং মৌজা সার্চ করলে ওই জমিতে কোন সিজনে কোন ফসল চাষাবাদ করলে ভালো হবে সে নির্দেশনা পাওয়া যায়। এছাড়া এসব ফসল চাষাবাদের সকল ধরনের পরামর্শ সারের পরিমাণ এবং পানি সেচসহ যাবতীয় পরামর্শ পাওয়া যায়। এই অ্যাপ ব্যবহার করে বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ চাষাবাদ করে তিনি লাভবান হয়েছেন। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর তার জমিতে তিন থেকে পাঁচ মন ধান বেশি ফলেছে এবং সার অনেক কম লেগেছে। আগামীতে যেকোনো ফসল চাষাবাদে তিনি খামারি অ্যাপ ব্যবহার করবেন বলে জানান।