বাবার লাশ ঘরে রেখে পরীক্ষা দিলো মেয়ে
প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৩, ২০:৩১ | অনলাইন সংস্করণ
শওকত আলী, চাঁদপুর
চাঁদপুর শহরতলীতে বাবার মৃতদেহ ঘরে রেখে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেন মেয়ে ফেরদৌসী আক্তার জুঁহি নামে এসএসসি পরীক্ষার্থী। জুঁহি চাঁদপুর সদর উপজেলার শহরতলীর শাহ মাহমুদপুর ইউনিয়নের শাহাতলী জোবাইদা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সে এ বিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের পরীক্ষার্থী।
জানা যায়, বুধবার (৩ মে) আশিকাটি ইউনিয়নের এম এম নূরুল হক উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে ইংরেজি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ফেরদৌসী আক্তার জুঁহি। এর আগে সকাল ৭টায় তার নিজ বাড়িতে তার বাবা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
জানা যায়, ফেরদৌসী আক্তার জুঁহি এ বছর শাহাতলী জোবাইদা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। সে একই ইউনিয়নের ভাটেরগাঁও এলাকার বেপারী বাড়ির মৃত মকবুল হোসেন বেপারীর ছোট মেয়ে।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, মৃত মকবুল হোসেন বেপারী দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিল। এর আগে তিনি ব্রেনস্ট্রোকও করেন এবং একবার গাছ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। সর্বশেষ দুদিন আগে তিনি জ্বর ও পেটব্যথা নিয়ে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি গিয়েছেন সোমবার। বুধবার সকালে তিনি মারাত্বক অসুস্থ হয়ে বাড়িতেই মৃত্যুবরণ করেন। মকবুর বেপারীর দুই মেয়ে জনকছিল।
মকবুল হোসেনের ফুফাতো ভাই আব্দুল বারেক খান বাবুল বলেন, মকবুল বুধবার সকালে মারা যায়। আজ আবার তার ছোট মেয়ের ইংরেজি পরীক্ষা ছিল। বাবার মৃত্যুতে মেয়েতো স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। তারপরও সবাই মিলে বুঝিয়ে তাকে পরীক্ষা দিতে পাঠানো হয়। আল্লাহ জানেন মেয়েটি কী পরীক্ষা দিয়েছেন।
স্থানীয় মেম্বার সোহাগ পাটোযারী জানান, মৃত মকবুল হোসেন দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিল। পরিবারটির অবস্থাও তেমন ভালো না। সকালে তিনি মৃত্যুবরণ করলেও তার মেয়েকে পরিবারের সবাই বুঝিয়ে শুনিয়ে পরীক্ষা দিতে পাঠায়। বাড়ির সবাইর কথায় সে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। মৃত মুকবুলের পারিবারিক থেকে জানা যায় বুধবার বাদ আসর মৃতের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে সমাধিত করা হয়েছে।
শাহতলী জোবাইদা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সোহেল রুশদী জানান, ফেরদৌসী একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। আমাদের বিদ্যালয়ে তার শ্রেণি রোল নম্বর ছিল ৩। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে সে এক পরীক্ষার্থী।
তিনি বলেন, তার বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক তাদের বাড়িতে আমাদের বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক গিয়েছেন। তিনি পরিবারটির পাশে আছেন। আমরা ফেরদৌসীর পাশে আছি এবং সে যেন কোনোভাবেই মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে সেই চেষ্টা করছি। সামনে যাতে সবগুলো পরীক্ষায় সে অংশগ্রহণ করে সেজন্য আমরা তাকে সকল প্রকার সহযোগিতা করবো। এছাড়াও ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ফেরদৌসীর যদি কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হয় আমি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে তাকে পূর্ণ সহায়তা করার আশ্বাস দেন।