বোরো ধানের বাম্পার ফলন

রংপুরের ৫ জেলায় ৩৪ লাখ টন ধান উৎপাদন

প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৩, ১৬:১৫ | অনলাইন সংস্করণ

  আব্দুর রহমান মিন্টু, রংপুর ব্যুরো

দেশের শস্যভান্ডার বলে পরিচিত রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। তবে বাম্পার ফলনেও ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন চাষিরা। পাঁচ জেলায় চলতি বছর ৫ লাখ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩৪ লাখ টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কৃষি বিভাগ।

রংপুর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বোরো ধানের বাম্পার ফলনে রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা এই পাঁচ জেলায় এবার প্রায় ৩৪ লাখ টন ধান উৎপাদনের আশা করছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

রংপুর জেলায় এবার ১৩ হেক্টর জমিতে ব্লাস্টের সংক্রমণ দেখা গেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ধান রক্ষায় ৮০ শতাংশ পাকলেই তা কেটে ঘরে তুলছেন কৃষকরা। তারপরও চলতি বছর ৫টি জেলায় ৫ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। এবার ফলন ভালো হওয়ায় সাড়ে ৩৪ লাখ টনের বেশি ধান উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পরিপূর্ণভাবে পাকার আগেই বোরো ধান কাটতে শুরু করেছেন উত্তরের লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও রংপুর জেলার কৃষকরা। আধা পাকা ধান কেটে দ্রুত মাড়াই শেষে গোলায় তুলতে ব্যস্ত তারা।

কৃষকরা জানান, শিলাবৃষ্টি থেকে ফসল বাঁচাতে ধান পুরোপুরি পাকার আগেই কাটতে হচেছ। আগাম ধান কাটার কারণ হিসেবে ব্লাস্টরোগের কথাও বলছেন কৃষকরা।

কৃষকরা বলেছেন, বাজারে যে দামে ধান-চাল বিক্রি হচ্ছে তাতে উৎপাদন খরচ উঠবে না। এমনকি সরকার ধান-চালের যে দাম নির্ধারণ করেছে, তাতেও পোষাবে না। আবার উৎপাদন বেশি হলে কম দামে ধান-চাল বিক্রি করতে হয় তাদের। 

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের কৃষক আমরুল ইসলাম জানান, ৯০ কেজি ধান বিক্রি হচ্ছে ৮শ থেকে ৮শ ৫০ টাকায় ।তিনি বলেন, সার-ডিজেল, বীজ, পানিতে দাম পরেছে অনেক বেশী। তাই উৎপাদন খরচ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে ।

রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে এক লাখ ৬৬ হাজার ৬৩৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এক লাখ ৬৬ হাজার ৯৪০ হেক্টরে চাষ হয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। জেলার কৃষক লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ একটি হট লাইন চালু করেছে। এতে দরিদ্র কৃষক ফোন দিলে তারা রোবো ধান কাটা-মাড়াই করে দিচ্ছে।

কৃষকরা বলছেন, চড়া সুদে দাদন নিয়ে বেশি দামে সার-ডিজেল কেনা ও সেচসহ ধান চাষে এবার অতিরিক্ত টাকা খরচ হয়েছে তাদের। কিন্তু বাজারে যে দামে ধান-চাল বিক্রি হচ্ছে তাতে উৎপাদন খরচ উঠবে না।

সরেজমিনে পীরগঞ্জ উপজেলার ভেন্ডাবাড়ি, চতরা, পীরগঞ্জ সদর, মিঠাপুকুর উপজেলার ধাপের হাট, বৈরাতী মির্জাপুর ,রানীপুকুর ও বলদিপুকুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সোনালী ধানে ভরপুর ফসলি মাঠ।

ভেন্ডাবাড়ি গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন ও মোয়াজ্জেম হোসেন জানিয়েছেন, এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে সারের দাম বেড়েছে। সেইসঙ্গে জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য ডিজেলসহ অন্য সব সামগ্রীর দাম বেশি ছিল। এমনকি ধান রোপণ থেকে কাটা পর্যন্ত শ্রমিকদের মজুরি বেশি। ধান কাটতে একজন শ্রমিককে ৬০০-৭০০ টাকা মজুরি দিতে হয়। ফলে ধান চাষ করতে যে টাকা খরচ হয়, তা উঠছে না। আবার দাদন ব্যবসায়ী ও এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ দিয়ে ধান চাষ করতে হয়েছে। ফলে ন্যায্যমূল্য না পেলে তাদের লোকসানে পড়তে হবে।

প্রতিকূল অবস্থা সত্ত্বেও এবার বাম্পার ফলন হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন মিঠাপুকুর উপজেলার কৃষক আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, ‘চলতি মৌসুমে বৃষ্টি কম হওয়ায় সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে জমিতে পানি দিতে হয়েছে। চারা রোপণে খরচ বেশি হয়েছে। শ্রমিকদের বেশি মজুরি দিতে হয়েছে। সেইসঙ্গে সারও কিনতে হয়েছে বেশি দামে। এসবের মাঝেও ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছি। কারণ সরকার ধান-চালের যে দাম নির্ধারণ করেছে, সে দামে বিক্রি করলে আমাদের লোকসান হয়।’

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো: ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, এবার রংপুরে বোরো উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘জেলার খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে প্রায় তিন লাখ মেট্রিক টন চাল অন্য জেলায় সরবরাহ করা যাবে। জেলায় চালের চাহিদা আছে প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন। এবার উৎপাদন হবে রংপুর জেলাতে পাঁচ লাখ মেট্রিক টনের বেশি। কৃষকরা যাতে ন্যায্যমূল্য পান সে জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেবো আমরা। তিনি আরও বলেন, ওই পাঁচ জেলায় এবার প্রায় ৩৪ লাখ টন ধান উৎপাদনের আশা করছেন।

রংপুর বিভাগীয় খাদ্য কর্মকর্তা মো: আশরাফুল আলম জানান, সারা দেশে ৭ মে থেকে সংগ্রহ অভিযান শুরু হবে। এবার রংপুর বিভাগে ৮ জেলায় ৬৮ হাজার মেট্রিক টন ধান ও ৩ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হবে ।