এলজিইডির ১৫ কি.মি. খালে ৮৪০ হেক্টর জমিতে ধানের বাম্পার ফলন
প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৩, ১২:৫৯ | অনলাইন সংস্করণ
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ১৫ কিলোমিটার খাল খননের ফলে ৮৪০ হেক্টর জমিতে ধানের উৎপাদন বেড়েছে। চলতি মৌসুমে ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ণ প্রকল্প (২য় পর্যায়) এর আওতায় টুঙ্গিপাড়ার শ্রীরামকান্দি-ঘোপেরডাঙ্গা মেইন খালসহ ১৫ কিলোমিটার খাল খনন করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এতে পানি সরবরাহ বৃদ্ধিসহ সেচের আওতায় আসে ৮৪০ হেক্টর জমি। কৃষক তার জমিতে সময় মত প্রয়োজনীয় সেচ দিতে পারায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
টুংগীপাড়া-শ্রীরামকান্দি-ঘোপের ডাঙ্গা মেইন খালটি সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন পানি সরবরাহ ও ব্যবহারের অনুপযোগী ছিল। এলজিইডির এই সংস্কার কাজের মাধ্যমে এই খাল যেমন প্রাণ পেয়েছে তেমনি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী অধিক ফসল উৎপাদনে কৃষকের কাজে এসেছে।
এছাড়া খাল খননের সময় শ্রীরামকান্দি ঘোপেরডাঙ্গা পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লি: এর সদস্যদের নিয়ে কাজটি করা হয়েছে। এসময় এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো: এহছানুল হক বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনষ্টিটিউটের মাধ্যমে সমিতির সদস্যদের বিনামূল্যে বীজ সহায়তার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এতে উন্নয়ণ কাজে উপকার ভোগীদের অংশীদারিত্ব থাকার পাশাপাশি কৃষি খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
শ্রীরামকান্দি গ্রামের কৃষক মোঃ খসরুল শেখ বলেন, এই খাল দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এতে ঠিকমতো পানি ওঠানামা করতে পারত না। তাই আমরা জমিতে প্রয়োজনমত সেচও দিতে পারিনি। এবার এলজিইডি আমাদের নিয়ে সমিতির মাধ্যমে খালটি খনন করেছে। এতে আমরা আর্থিকভাবে যেমন লাভবান হয়েছি, তেমনি এর পানি ব্যবহার করে জমিতে ভালো ফসল ফলাতে পেরেছি।
টুংগীপাড়া উপজেলার ঘোপের ডাঙ্গা গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, এলজিইডি খাল খননের জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছে এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। তারা শ্রীরামকান্দি, ঘোপেরডাঙ্গা পানিসম্পদ উন্নয়ন সমিতি লিঃ এর সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে খাল খনন করায় কাজের মানও ভালো হয়েছে। আবার সমিতির সদস্যরা কাজের বিনিময়ে আর্থিকভাবে সহায়তা পেয়েছে। এছাড়া এই খালের পানি ব্যবহার করে ধানের উৎপাদন অনেকখানি বাড়াতে পেরেছে এখানকার সকল কৃষক।
ঘোপের ডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা এবং এলজিইডির সমাজবিজ্ঞানী মো: এমরান হোসেন বলেন, খালটি দীর্ঘদিন তার নাব্যতা হারিয়ে ফেলার কারণে এ এলাকার ধানের জমির পানি অপসারণ ও পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। এ কারণে আমি এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর নজরে আনি। তিনি তাৎক্ষনিকভাবে শ্রীরামকান্দি ঘোপেরডাঙ্গা পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লি: এর সদস্যদের নিয়ে আলোচনা করে ১৫ কিলোমিটার খাল পুণঃখনন ও সংস্কারের উদ্যোগ নেন। এই খাল খননে কৃষকের অনেক উপকার হয়েছে।
বংলাদেশ ধান গবেষণা ইষ্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট এবং নড়াইল জেলায় আমরা ১৮ মেট্রিকটন হাইব্রিড ও উফসি ধানের বীজ বিতরণ করেছি। এর মধ্যে টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় সাড়ে ৪ টনেরও বেশি বীজ বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে থেকে শ্রীরামকান্দি ঘোপেরডাঙ্গা পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লি: এর এক’শ জনেরও বেশি সদস্যকে ব্রি -হাইব্রিড ৩ ও ৫ এর বীজ দেয়া হয়েছে। এছাড়া কিছু কৃষক বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ জাতসহ আরো কিছু উফসি ধানের বীজ পেয়েছেন। এখানে হাইব্রিড ধানে হেক্টর প্রতি ৯ টনেরও বেশি ফলন হয়েছে এবং বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ সহ অন্যান্য উফসি ধানে সাড়ে ৭ টনেরও বেশি ফলন হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: এহসানুল হক বলেন, এলজিইডি রুরাল সেক্টর, আরবান সেক্টর ও ওয়াটার রিসোর্স সেক্টরে কাজ করে। গোপালগঞ্জ খাল-বিল পরিবেষ্টিত এলাকা হওয়ায় অনেক খালেই দীর্ঘদিন সংস্কার হয়না। পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় কৃষক ক্ষেতে পানি দিতে পারে না। এসব জায়গায় এলজিইডি বিভিন্ন উপ-প্রকল্পের মাধ্যমে এগুলো সংস্কার করে থাকে। টুঙ্গিপাড়ার শ্রীরামকান্দি ও ঘোপের ডাঙ্গা এলাকায়ও এমন ১৫ কিলোমিটার খাল সংস্কার ও খননের উদ্যোগ নেয়া হয়। শ্রীরামকান্দি ঘোপেরডাঙ্গা পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লি: এর সদস্যদের নিয়ে কাজটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমাপ্ত করা হয়। কৃষকরা সময়মত ক্ষেতে পানি সেচ দিতে সক্ষম হয়। এছাড়া কাজ চলাকালীন সময়ে এলজিইডির উদ্যোগে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের মাধ্যমে সমিতির সদস্যদের বিনামূল্যে বীজ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। যার ফলে কৃষকের ক্ষেতে এবছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এছাড়া খাল খননের কাজে সমিতির সদস্যরা সরাসরি অংশ নেয়ায় সমিতির সদস্যরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। এটা তাদের দারিদ্র বিমোচনেও ভূমিকা রাখবে। আগামীতেও এলজিইডি কৃষকদের পাশে থাকবে বলে আশাবাদ তাঁর।