সেপ্টেম্বর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ট্রেন চলাচল শুরু
প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৩, ১৯:৩০ | অনলাইন সংস্করণ
চট্টগ্রাম ব্যুরো
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর বলেছেন, কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট রেলসেতুতে বিদ্যমান রেললাইন সংস্কার করে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু করা হবে। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন নির্মিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধন করতে পারেন।
শনিবার (৬ মে) সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। কালুরঘাট সেতুর সংস্কারকাজ বাস্তবায়ন ও ফেরি চালুর বিষয়ে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রেল সচিব হুমায়ুন কবীর বলেন, বর্তমান সরকার রেলপথের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন হচ্ছে। নতুন রেলপথ দিয়ে ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। মানুষ প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে দেখতে পর্যটন শহরে যাবেন।
রেলওয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে সেপ্টেম্বরে। ১০০ কিলোমিটারের এই ডুয়েলগেজ রেলপথের মধ্যে ৭০ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ। বাকি ১৭ শতাংশ কাজের মধ্যে ৩০ কিলোমিটার রেললাইন এবং ৮৬টি স্টেশন ভবন নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন চালুর ক্ষেত্রে মূল বাধা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছিল কর্ণফুলী নদীর ওপর প্রায় ১০০ বছরের পুরনো জরাজীর্ণ কালুরঘাট সেতু।
মতবিনিময় সভায় কক্সবাজারে দ্রæতগতির ট্রেন চালিয়ে নিতে কালুরঘাট সেতু সংস্কার করা হবে জানিয়ে রেলসচিব মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, জুন মাসে কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ শুরু হবে। পুরো সেতুর সংস্কারকাজ শেষ করতে ছয় মাস লাগবে। তবে সেতুর মূল রেল লাইনের সংস্কারকাজ তিন মাসের মধ্যে শেষ করা হবে। এই তিন মাস ট্রেন (চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে ট্রেন) চলাচল বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে সেতুর ওপর যান চলাচল।
সংস্কারকাজের সময় সেতুর বিকল্প হিসেবে যাতায়াতের জন্য ফেরি চালু করা হবে বলে জানিয়ে সচিব বলেন সেতুতে যান চলাচল বন্ধ থাকলে মানুষের সাময়িক অসুবিধা হবে। তবে সংস্কারকাজ হয়ে গেলে সেটা আর থাকবে না। আর ২০২৮ সালে নতুন সেতু হলে দুর্ভোগে দূর হয়ে যাবে।
সভায় কালুরঘাট সেতুর সংস্কারকাজ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা। তিনি বলেন, কালুরঘাট রেলসেতুর অবস্থা এত খারাপ, সংস্কার ছাড়া কক্সবাজার পর্যন্ত ভারি ইঞ্জিনের ট্রেন নেওয়া সম্ভব নয়। বর্তমানে এই সেতুতে ট্রেনের গতি ১০ কিলোমিটার। সংস্কারের পর ৫০-৬০ কিলোমিটার হবে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরামর্শক দলের পরামর্শে সেতু সংস্কার করা হবে। ইতোমধ্যে ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। ২০ জুন থেকে সংস্কারকাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। সেপ্টেম্বরে মূল সংস্কারকাজ শেষ করা হবে। এবারের সংস্কারকাজে রেল সেতুতে মানুষের হেঁটে পার হওয়ার জন্য ওয়াকওয়ে (হাঁটাপথ) রাখা হবে।
সভায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী বলেন, সেতুর বিকল্প হিসেবে নদীতে ফেরি সার্ভিস চালু করা হবে। এ জন্য দু'টি ফেরি রাখা হয়েছে। এর মধ্যে একটি ফেরি রাখা হয়েছে বিকল্প হিসেবে।
তবে সভায় জুন মাসে সেতুর সংস্কারকাজ শুরু করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম ও পৌর চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম। দু’টি ফেরির পরিবর্তে চারটি ফেরি চালুর পরামর্শ দেন দুই জনপ্রতিনিধি।
সভায় পৌর চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম বলেন, জুন মাসে বর্ষা শুরু হবে। এই সময় নদীতে ফেরি চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে জোয়ারের সময় ফেরি তিন ঘণ্টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। এভাবে যদি বন্ধ থাকে তাহলে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হবে। এই ব্যাপারে বিকল্প ভাবতে হবে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সঞ্চালনায় সভায় রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আ স ম মাহতাব উদ্দিন, বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক আবিদুর রহমানসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।